চুলের যত্নে ভেষজ তেল

তেল ব্যবহারে চুল থাকে ভালো। মডেল: নাজিফা তুশি, ছবি: নকশা
তেল ব্যবহারে চুল থাকে ভালো। মডেল: নাজিফা তুশি, ছবি: নকশা

যান্ত্রিকতার যুগে যন্ত্রই বুঝি আপন। তবে সত্যটা হলো যন্ত্র কখনো মানুষের জায়গা নিতে পারে না, রাসায়নিক কখনো নিতে পারে না প্রাকৃতিক উপাদানের জায়গা। আধুনিকতায় যতই থাক রাসায়নিকের ব্যবহার, প্রকৃতির ছোঁয়া লাগা সৌন্দর্য সর্বত্রই কুড়িয়ে নেয় প্রশংসা। চুলের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। রাসায়নিক ব্যবহার করা চুল একসময় প্রাণহীন হয়ে পড়তে পারে। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়া হলে সে ভয় অনেকটাই থাকে না।

হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, চুলের যত্নে যা-ই করা হোক না কেন, তা করতে হবে মাথার ত্বকের মাধ্যমে। তাতে ভেতর থেকে মজবুত ও সুন্দর হবে চুল। প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্নে প্রথমেই তেল মালিশ বিষয়ে জানালেন তিনি। এ-ও জানালেন, কেশচর্চায় ভেষজ তেলই ছিল প্রধান। অনেক আগে থেকে তেল তৈরি করার সময় অনেক ধরনের ভেষজ উপকরণ জ্বাল দেওয়া হত। তেলে ভিটামিন ডি যুক্ত করা হতো রোদে রেখে। সাধারণত নারকেল তেলে ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তেল মালিশ করলে চুল কালো, ঘন ও লম্বা হয়। চুলের গোড়া হয় মজবুত। রাহিমা সুলতানা জানালেন তেলের নানা কথা। সঙ্গে বাতলে দিলেন ঘরোয়া চুলের প্যাক। 

 তেলের ধরন বদলে নিলাম

নারকেল তেল তো উপকারীই। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু উপকারী উপকরণ সংযোজন করে নিতে পারেন-

 নারকেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ নিমপাতা, অ্যালোভেরা মণ্ড ও মেথি চুলায় অল্প আঁচে জ্বাল দিয়ে নিন। তেল ছেঁকে তুলে রাখুন বয়ামে। এই তেল ১-২ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

 এতটা করার সময় না পেলে নারকেল তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ গোটা কালিজিরা ও মেথি মিশিয়ে নিয়ে বয়ামে তুলে রাখতে পারেন। এটিও ১-২ মাস ব্যবহারের উপযোগী থাকে।

চুলের জন্য কাঠবাদামও একটি উপকারী উপাদান। এতে থাকা ভিটামিনই চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

 চুল শুষ্ক প্রকৃতির হলে লেবুর রস ও নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। লেবুর রস নিতে হবে তেলের অর্ধেক পরিমাণ। তবে এই মিশ্রণ খুব বেশিক্ষণ লাগিয়ে রাখা যাবে না। ২০ মিনিট পরই ধুয়ে ফেলতে হবে।

সপ্তাহে তিন দিন মাথায় তেল লাগিয়ে গরম তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এতে করে ভেষজ উপাদানগুলো মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাবে।

হেয়ারপ্যাক

টকদই, ডিম, মেথি, ত্রিফলা ব্লেন্ড করে নিয়ে প্যাক তৈরি করা যায়। এই প্যাক ব্যবহারে চুল পড়া কমবে।

ডিম ব্যবহার করতে না চাইলে টকদই, মেথি, পেঁয়াজের রস, আদার রস ও আমলকী পেস্ট মিশিয়েও প্যাক তৈরি করতে পারেন।

টকদই ব্যবহার করতে না চাইলে শুধু মেথি পাউডার ব্যবহার করলেও চলে।

অ্যালোভেরা আর মধু দিয়ে তৈরি করা যায় অন্য একটি প্যাক। মেথি পাউডার আর মধু দিয়েও একটি প্যাক হতে পারে।

মাথার ত্বক এবং চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে প্যাক লাগিয়ে নিন। অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। তোয়ালে ও বাতাসের সাহায্যে চুল শুকিয়ে নিন। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করাই ভালো। প্যাক ব্যবহারের আগে তেল মালিশ করা উচিত নয়।

 প্রাকৃতিক কন্ডিশনার

সাধারণভাবে আমরা কন্ডিশনার ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। তবে অ্যালোভেরা মণ্ড ব্যবহার করা যায় কন্ডিশনার হিসেবে। অ্যালোভেরাতে আছে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। অ্যালোভেরা চুল মসৃণ করতেও সাহায্য করে।