১১১ দেশ ঘুরে

>
কাজী মোরশেদ
কাজী মোরশেদ
পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কাজী মোরশেদ থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ভ্রমণ করেছেন ১১১টি দেশ। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেঞ্চুরি ক্লাব তাঁকে দিয়েছে সদস্য পদ। ভ্রমণ করতে করতে সঞ্চয় করেছেন নানা রকম অভিজ্ঞতা।

অজানাকে জানা আর অদেখাকে দেখার আকাঙ্ক্ষাটা ছিল ছোটবেলা থেকেই। তবে কাজী মোরশেদের সেই আকাঙ্ক্ষা ডালপালা মেলে তারুণ্যে। সেটা ২০০১ সালের কথা। উচ্চশিক্ষার জন্য তখন তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। তখনই পেয়ে গেলেন দেশ ঘোরার এক মোক্ষম সুযোগ। ‘তখন শেনজেন ভিসার কল্যাণে ইউরোপের ২৬টি দেশে ভ্রমণের সহজ পথ পেয়ে গেলাম। পর্তুগাল ভ্রমণের মধ্য দিয়ে আমার ভ্রমণযাত্রা শুরু হলো। একে একে ঘুরে ফেললাম ইউরোপের দেশগুলো।’ ধানমন্ডিতে নিজের কার্যালয়ে বসে কাজী মোরশেদ শোনাচ্ছিলেন তাঁর পরিব্রাজক–জীবনের শুরুর কথা। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী, কিছুদিন আগে এসেছেন ঢাকায়।

ইউরোপ থেকে সেই যে শুরু হলো দেশ দেখা, তা এখনো চলছে। কাজী মোরশেদ একের পর এক নতুন দেশে ঘুরে চলেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্রগুলোর একটি সান মারিনো—ইউরোপের এই দেশটি ঘুরেই ১০০তম দেশ ঘোরার তালিকা পূর্ণ করেন কাজী মোরশেদ। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজের লেখা একটি বইও আছে তাঁর। সর্বশেষ দক্ষিণ আমেরিকার গায়ানা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ১১১টি দেশ ঘুরে দেখার কীর্তি গড়েছেন তিনি। পেয়েছেন অভিজাত ট্রাভেলারস সেঞ্চুরি ক্লাবের সদস্য পদ। দেশ ঘোরায় যাঁরা সেঞ্চুরি করেন, তাঁদের নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রাভেলারস সেঞ্চুরি ক্লাব’। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটির ১ হাজার ৪০০ সদস্যের একজন তিনি।

৪৮ বছর বয়সী কাজী মোরশেদ পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তবে জীবনকে তিনি হিসাব–নিকাশের জটিল সমীকরণে বন্দী রাখেননি। জানালেন পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশ ভ্রমণের ইচ্ছার কথা। অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়া ছাড়া একের পর এক দেশ ভ্রমণ করা সম্ভব নয়—এ কথাটা মেনে নিতে মোটেই রাজি নন কাজী মোরশেদ। তিনি বলেন, দেশ ভ্রমণ করতে হলে যে অনেক ধনী হতে হবে, বিষয়টি মোটেই ঠিক নয়। ভ্রমণের তীব্র ইচ্ছা, ভূগোলের জ্ঞান আর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ভ্রমণবিষয়ক বিভিন্ন অফার সম্পর্কে চোখ-কান একটু খোলা রাখলেই অনেক অল্প ব্যয়েও অনেক দেশ ভ্রমণ সম্ভব।

মোরশেদের দেখা ৫
১১১ দেশের কত কিছুই তো দেখে এসেছেন কাজী মোরশেদ। তাঁর সেসব বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকেই পাঁচটি মনে রাখার মতো স্থানের কথা লিখেছেন।

ব্যালেন্সিং রক
ব্যালেন্সিং রক

ভারসাম্যের পাথরের পাশেজিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ের এই ‘ব্যালেন্সিং রক’ বা ভারসাম্যের পাথর পৃথিবীতে এক আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাথরগুলো দেখে বারবার মনে হচ্ছিল হালকা টোকা লাগলেই গড়িয়ে পড়বে। তাই একটু ভয় নিয়েই পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। সঙ্গে জানলাম পাথরের পেছনের গল্পও—ভূমিকম্পের কারণে অদ্ভুতভাবে এসব পাথর একটার ওপর আরেকটা এমনভাবে বসে যায়, যেন তারা নিজেদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার খেলা খেলছে। জিম্বাবুয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের দেশীয় কাগজের মুদ্রায় এই পাথরের ছবি ব্যবহার করা শুরু করলে দর্শনার্থীদের মধ্যে এলাকাটির জনপ্রিয়তা চারদিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

মেসকুইট
মেসকুইট

যে গাছের বয়স প্রায় ৪৩৬ বছরবাহরাইন
ধারণাকরা হয়, মেসকুইট প্রজাতির গাছটি লাগানো হয়েছিল ১৫৮৩ সালে। সেই হিসাবে গাছের বয়স এখন ৪৩৬ বছর। বাহরাইনের মরুভূমির বুকে সেই গাছটি পরিচিত ‘ট্রি অব লাইফ’ নামে। গত বছর এ গাছ দেখার সুযোগ হলো। কিন্তু ট্রি অব লাইফ দেখে ফেরার পথেই আমাদের লাইফেই বাধল এক বিপত্তি। বিশাল মরুভূমির পথে আমাদের চালক পথ হারিয়ে ফেলেছেন। সূর্য তখন প্রায় ডুবতে বসেছে। মরুভূমির রাতের আবহাওয়া মোটেই ভালো নয়। তাই মনে একটা ভয় ঢুকে গিয়েছিল। চালক অনেকক্ষণ ধরে এদিক-সেদিক ঘোরার পর অবশেষে ‘ইউরেকা’ বলে এক চিৎকার দেন। ব্যস, আমরাও ফিরে এলাম।

ইস্টার আইল্যান্ড
ইস্টার আইল্যান্ড

দূর দ্বীপের ভাস্কর্চিলি
দ্বীপের নাম ইস্টার আইল্যান্ড। চিলির মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপটিকে বিচ্ছিন্ন করেছে প্রশান্ত মহাসাগর। শুধু বিচ্ছিন্নই নয়, ভূখণ্ড থেকে এটা এতটাই দূরে যে দ্বীপকে মনে হয় একটি বিন্দুর মতো। সে দ্বীপ দেখতে যাওয়ার সুযোগ হলো ২০১৬ সালে। জাহাজ থেকে দ্বীপে নেমে রীতিমতো থ বনে গেলাম মানুষের ধড়বিহীন মাথার ভাস্কর্য দেখে। ১৩০০-১৪০০ শতাব্দীতে এখানে মানুষের মুখের আদলে এসব ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। বিশাল সমুদ্রের এই দ্বীপে মানুষ কীভাবে এসে এসব ভাস্কর্য তৈরি করল, সেই বিস্ময় আমার কাটছিল না। বিস্ময় যখন কাটল, তখন ভাস্কর্যের কোনো একটি আমার চেহারার সঙ্গে মিলে যায় কি না, তা–ই খুঁজছিলাম!

নীল খাদ
নীল খাদ

গভীরতম নীল খাদবেলিজ
ব্ল্যাক হোল থাকে মহাকাশে, কিন্তু ব্লু হোলের অবস্থান মহাসমুদ্রে। গভীর নীল রঙের জন্যই এসব খাদ বা গহ্বরের নাম ব্লু হোল। এগুলোর ভেতরের পানির রং সাধারণ পানির চেয়ে কিছুটা আলাদা। মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজের ব্লু হোলের নাম শোনার পর থেকেই সেটি দেখার জন্য তর সইছিল না। চলতি বছরই ব্লু হোল দেখার ইচ্ছা পূরণ হলো। ব্লু হোল সবচেয়ে ভালো দেখা যায় উড়োজাহাজ থেকে। কিন্তু উড়োজাহাজে ওঠার পর সব ইচ্ছা পালিয়ে গেল। উড়োজাহাজ একবার বাঁয়ে তো আরেকবার ডানে হেলে যায়, একবার ওপরে তো আরেকবার নিচে নেমে যায়। এরই মধ্যে খানিকটা সময় ব্লু হোলটা দেখার সুযোগ পেলাম। বাকি সময় তো কখন উড়োজাহাজ অবতরণ করবে, সেটা নিয়েই ভাবছিলাম!

লিটল বয়
লিটল বয়

লিটল বয়ের স্মৃতিময় ভবনজাপান
১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর বোমা নিক্ষেপের কথা তো অনেকেরই জানা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে হিরোশিমা শহরের ওপর ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল আমেরিকান বোমারু বিমান। যাতে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় ৭০ হাজার মানুষের। বোমার প্রচণ্ড আঘাতে আশপাশের শহরের ভবন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। বোমার আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত ভবনগুলোকে পরবর্তী সময়ে ভেঙে ফেলা হলেও শুধু এই ভবনটি ভাঙা হয়নি। মূলত এই একমাত্র ভবনটি রাখা হয়েছে হিরোশিমার এক করুণ স্মৃতি হিসেবে এবং বোমার আঘাতের পর বেঁচে যাওয়া ভবনগুলোর অবস্থা কেমন ছিল, তা দেখানোর জন্যই গিয়েছিলাম সেই শহরে।