ঈদের ছুটিতে যেতে পারেন থাইল্যান্ড

সাফারি পার্ক। ছবি: লেখক
সাফারি পার্ক। ছবি: লেখক

সামনেই ঈদুল আজহা। এবারের ঈদুল আজহায় দীর্ঘ ছুটি আছে। এই ছুটি কাজে লাগিয়ে আপনি স্বল্প খরচে ঘুরে আসতে পারেন থাইল্যান্ড।

থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন অপারেটর ট্যুর প্যাকেজ দিয়ে থাকে। থাইল্যান্ড যাওয়ার আগে সেসব প্যাকেজের খোঁজখবর করে পছন্দসই একটি প্যাকেজে বেছে নিতে পারেন।

সাধারণত থাই এয়ারলাইনসে জনপ্রতি ভাড়া ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। অন্য এয়ারলাইনসে ভাড়া আরও কম। তবে এখন যাঁরা টিকিট কাটবেন, তাঁদের বেশি দামে টিকিট কাটতে হতে পারে।

বিভিন্ন দামের হোটেল পাওয়া যায় থাইল্যান্ডে। সেটা নির্ভর করে স্থান ও কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে তার ওপর। যেমন: সুইমিংপুল, স্পা, সকালের নাশতা হোটেল বিলের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত থাকে অনেক হোটেলে।

পাতায়া, থাইল্যান্ড। ছবি: লেখক
পাতায়া, থাইল্যান্ড। ছবি: লেখক

যাত্রা প্রারম্ভ
আমাদের ফ্লাইট ছিল বিকেলে। সুতরাং আমরা রাতে পৌঁছাই। আগে থেকেই হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাখি এয়ারপোর্ট থেকে পিকআপের জন্য। হোটেলের আশপাশে অনেক বাঙালি হোটেল ছিল। তাই রাতের খাবারটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলি। হোটেলের লবিতেই ছিল ট্রাভেল বুথ। পরের দিন সাফারি পার্ক যাওয়ার জন্য বুকিং দিতে তাই কোনো অসুবিধা পেরোতে হয়নি।

প্রথম দিন
হোটেলে সকালের নাশতা সেরে আমরা ঝটপট রেডি হয়ে নিই। সকাল আটটায় হোটেল থেকে রওনা হই। সাফারি পার্ক পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। ড্রাইভার নিজেই সব টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা প্রথমেই গেলাম পশুপাখি দেখতে।

সাফারি পার্কের নিজস্ব বাস আছে। কেউ চাইলে টিকিট কেটে বাসে করেই ঘুরে দেখতে পারেন পুরো পার্ক। কিন্তু নিজস্ব গাড়িতে করে ইচ্ছেমতো জায়গায় দাঁড়ানো যায়, যেটা বাসে সম্ভব না।

জেব্রা থেকে শুরু করে জিরাফ, ভালুক, গন্ডার, জলহস্তী, হরিণ—সবই আছে এই পার্কে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো বাঘ ও সিংহকে খাবার খাওয়ানো লাইভ দেখা। সাধারণত দিনে দুবার ওদের খাবার দেওয়া হয়—সকালে ও বিকেলে।

বিভিন্ন পশুপাখি দেখে আমরা ঢুকলাম সাফারি ওয়ার্ল্ডে, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের পাখি, রিভার সাফারি ও বিভিন্ন শো। প্রথমে ঢুকতেই চোখে পড়ল রংবেরঙের ম্যাকাউ। হাতের ওপর বসিয়ে ছবি তোলার সুযোগ রয়েছে সেখানে। কিছু দূর এগোতেই কিছু ফুড ও জুস কর্নার চোখে পড়ল। জুস কর্নারের ঠিক বাঁ দিকেই রাখা আছে কিছু বাচ্চা বাঘ, যা খাঁচার ভেতর। বাঘের সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলাম। শর্ত হলো—একটি বাঘকে ফিডারে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ছবি তুলতে হবে। খাওয়া শেষ, ছবি তোলাও শেষ।

এরপর ঘুরে ঘুরে ডলফিন শো, সিল শো, এলিফ্যান্ট শো দেখলাম। সবচেয়ে বেশি মজা পেলাম স্পাই ওয়ার ও কাওবয় স্টান্ট শো দেখে।

দুপুরের খাবার আমাদের প্যাকেজের মধ্যেই ছিল। বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে। যেকেউ তাঁর ইচ্ছেমতো রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন। আবার কেউ চাইলে বাইরে থেকে খাবার নিয়েও যেতে পারবেন। সাফারি পার্ক বিকেলেই বন্ধ হয়ে যায়। আমরাও তাই বেরিয়ে পড়লাম হোটেলের উদ্দেশে।

দমনাম সাদুয়াক ফ্লটিং মার্কেট, ব্যাংকক। ছবি: লেখক
দমনাম সাদুয়াক ফ্লটিং মার্কেট, ব্যাংকক। ছবি: লেখক

দ্বিতীয় দিন
পরের দিন সকালে আমরা বেরিয়ে পড়লাম পাতায়ার উদ্দেশে। সময় লাগল আড়াই ঘণ্টা। পাতায়ায় পৌঁছে আমরা একটি স্পিডবোট ঠিক করলাম পাতায়া আইল্যান্ডের জন্য। মাঝপথ পার হওয়ার পর দেখলাম, অনেক মানুষ প্যারাস্যুট রাইডিং করছে। ব্যস, আমরাও নেমে পড়লাম।

প্যারাস্যুট রাইডিং শেষে আবার রওনা হলাম পাতায়া আইল্যান্ডের দিকে। এবার চোখে পড়ল স্কুবা ডাইভিং পয়েন্ট। এসব ওয়াটার অ্যাকটিভিটিস চার্জেবল। শেষমেশ আমরা পাতায়া আইল্যান্ড পৌঁছালাম, এক ঘণ্টা পর। স্বচ্ছ পানির সমারোহ আর অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। রেস্টুরেন্টের যেন অভাব নেই। স্পিডবোট অপারেটরের সঙ্গে কানেকশন থাকায় বিচের সিট খুব দ্রুত পেয়ে গেলাম। বেশ কিছু সময় এখানে কাটালাম। তারপর আবার ফিরে চললাম পাতায়ায়। পাতায়া থেকে ব্যাংকক যাওয়ার পথে টাইগার জুতে নামলাম। ওখানে বাঘ ও কুমিরের শো হয়। অনেকটা সার্কাসের মতো লাগল।

পাতায়া সি বিচ। ছবি: লেখক
পাতায়া সি বিচ। ছবি: লেখক

তৃতীয় দিন
ফেসবুকে ছবি দেখার পর থেকেই ফ্লোটিং মার্কেটে যাওয়ার অনেক ইচ্ছা ছিল। ট্যুর শুরু করার সময় তাই সবার আগে লিস্টে এই নামই লিখলাম। প্রতিদিনের মতো এদিনও ট্যাক্সি বুক করি হোটেলের লবিতে বসা ট্রাভেল বুথ থেকে। পৌঁছাতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। টিকিট করে নৌকায় উঠে প্রথমে অল্প পানির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। দুই পাশে ছিল অনেক দোকান। বিভিন্ন ধরনের জিনিস দিয়ে ভর্তি সেই দোকানগুলো। কেউ সাজিয়েছে জামা, কেউ জুতা, কেউ খেলনা। আবার ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে ডাব, আইসক্রিমও বিক্রি হচ্ছে।

অল্প পানি পার হয়ে পৌঁছালাম বেশি পানিতে। নৌকা দোলা শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে মাঝি আমাদের লাইফ জ্যাকেট বের করে দিলেন। এতক্ষণ ফাঁকাই ছিল, যেইনা বড় জায়গায় ঢুকলাম, ভিড়ও বাড়তে শুরু করল। সঙ্গে দোকানের সংখ্যাও। মাঝামাঝি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কিছু ফটোশুট করলাম। তড়িঘড়ি কিছু গিফট আইটেমও কিনলাম। তারপর আবার ফিরে চললাম।

গাড়িতে উঠেই ড্রাইভারকে বললাম, শপিং মলে নিয়ে যেতে। জনপ্রিয় দুটি শপিং মল হলো—এমবিকে ও সিয়াম সেন্টার। সেখানে কেএফসিতে লাঞ্চ সেরে গেলাম শপিং করতে। সন্ধ্যা অবদি চলল সেটা। রাতে হোটেলে ফিরে পাশের বাংলা হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।

ওয়াত ফারা ইয়াই টেম্পলের বিগ বুদ্ধ, পাতায়া, থাইল্যান্ড। ছবি: লেখক
ওয়াত ফারা ইয়াই টেম্পলের বিগ বুদ্ধ, পাতায়া, থাইল্যান্ড। ছবি: লেখক

বিদায়ঘণ্টা
দুপুরে ফ্লাইট থাকায় আর কোনো প্ল্যান করিনি এদিন। আস্তেধীরে ঘুম থেকে উঠে নাশতা সেরে প্যাকিং সেরে ফেললাম। এয়ারপোর্ট ড্রপের ব্যাপারে আগেই কথা বলা ছিল হোটেলে। সময়ের অনেক আগেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাই। সেখানে মোটামুটি সব দোকান ঘুরে দেখার সুযোগ হয়। তিন দিনের থাইল্যান্ড সফর শেষে এবার দেশে ফেরার পালা।