ঢাকায় ডেঙ্গু, ডেডলাইন ২০১৯

েডঙ্গু হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য সময়মতো রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। ছবি: অধুনা
েডঙ্গু হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য সময়মতো রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। ছবি: অধুনা

ডেঙ্গুর সঙ্গে আমাদের পরিচয় ২০০০ সালে। সে বছর ঢাকা শহরে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসকেরা ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালে এর আগের বছর ১৯ জন রোগীর কেস রিপোর্ট করেছিলেন। অনুসন্ধিৎসু যে চিকিৎসক কাজটা করেছিলেন, তিনি জ্বর নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করতে যাওয়ার সময় পথেই অচেতন হয়ে পড়েন। ২০০০ সালে একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞর আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে ডেঙ্গুর আত্মপ্রকাশ। তাঁর প্রচণ্ড পেটব্যথাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস ভেবে অস্ত্রোপচার করার সময় সার্জন বিস্মিত হয়ে দেখেন যে পেটের ভেতরে রক্ত। তাঁর মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যে মারা যান একজন ডেন্টিস্ট। এরপরই নতুন এ রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন চিকিৎসকেরা। ২০০০ সালে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো, মারা যায় ৯৩ জন। সেবার ডেঙ্গু বিষয়ে সবার অভিজ্ঞতা ছিল কম, এমনকি দু–একটি হাসপাতাল ছাড়া পরীক্ষাও হতো না এর। 

ডেঙ্গুর বিবর্তন

মশাবাহিত মৌসুমি রোগটি এরপর থেকে মোটামুটি চার বছরে চক্রাকারে মূলত রাজধানী ঢাকায় দেখা দিতে থাকে। গত দু–তিন বছরে চিকুনগুনিয়া নামের নতুন মশাবাহিত রোগ এসে যোগ দিয়েছে ডেঙ্গুর সঙ্গে। প্রায় দুই দশকের লব্ধজ্ঞান আর অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা যেমন আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন, তেমনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং তাদের বিভিন্ন সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যার পরিবর্তন করেছে। 

ডেঙ্গুর উপসর্গ কী?

যেকোনো ভাইরাসজনিত জ্বরের মতো ডেঙ্গুতেও জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, কাশি, গলাব্যথা গা–ব্যথা থাকে। বিশেষত্ব হলো যে এই ব্যথা হাড়ে হাড়ে অনুভূত হয়, চিকুনগুনিয়ার মতো গিরায় বা সন্ধিতে নয়। মাথাব্যথার তীব্রতা চোখের পেছনে বেশি (রেট্রোঅরবিটাল); চোখ ঘোরালে বা আই মুভমেন্টে ব্যথা বাড়ে। ডেঙ্গু জ্বরে কাশি, পেটব্যথা, পাতলা পায়খানার প্রকোপ কম। তবে ক্ষুধামান্দ্য বমি ভাব থাকে। জন্ডিস হয় না। দেহের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণ ডেঙ্গুকে অন্য রোগ থেকে আলাদা করেছে। 

ডেঙ্গুর নানা ধরন 

ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু

ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুতে ওপরে বলা উপসর্গ ছাড়া আর কোনো সমস্যা হয় না। অনেকের ধারণা, রক্তক্ষরণ মানেই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মোড় নিয়েছে, তা ঠিক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, জ্বরের সঙ্গে প্লাটিলেট কাউন্ট এক লাখের কম ও রক্তে হিমাটোক্রিট ২০ শতাংশ কমবেশি হলে সেটা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার, এর সঙ্গে রক্তনালি লিকের (প্লাজমা লিকেজ) উপসর্গ—যেমন প্রোটিন কমা, পেটে বা ফুসফুসে পানি জমার মতো উপসর্গ থাকতে পারে।

কৃতজ্ঞতা: ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
কৃতজ্ঞতা: ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা

হেমোরেজিক ফিভার ও শক সিনড্রোম 

হেমোরেজিক ফিভার গ্রেড-১–এর উপসর্গও সব ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুর মতোই, কোনো রক্তক্ষরণ নেই শুধু টুরনিকেট পরীক্ষা করলে চামড়ার নিচে রক্তবিন্দু জমতে দেখা যাবে। কিন্তু গ্রেড-২ হলে চোখ, নাক, চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হয়। সতর্কসংকেত হলো বমি, পেটব্যথা, খাদ্যনালি, মূত্রনালি, শ্বাসনালি, যোনিপথে রক্তক্ষরণ—এগুলো ক্রমেই বাড়তে থাকা। এসব জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে। গ্রেড-৩ ও গ্রেড ৪–কে একত্রে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে। গ্রেড–৩-তে পালস বা নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ হয়ে আসে, গ্রেড-৪–এ নাড়ির স্পন্দন ও রক্তচাপ—কোনোটিই পাওয়া যায় না। শক সিনড্রোম হয়ে গেলে দেহের কোনো অঙ্গে রক্ত সরবরাহ ঠিকমতো হয় না, এ কারণে অরগান ফেল করে। একে বলে মাল্টি–অরগান ফেইলর। পরিমিত ফ্লুইড দিয়ে এ অবস্থা ঠেকানো সম্ভব। এটাই আসলে মারাত্মক বা সিভিয়ার ডেঙ্গু। 

এটিপিক্যাল ডেঙ্গু বা অন্য রকম ডেঙ্গু

২০০০ সালেও কিছু রোগী জ্বর আর বুকব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসার পর রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে হার্ট অ্যাটাক বলে মনে হয়েছে। হার্টের রোগী, প্যানক্রিয়েটাইটিস, অস্থিরতা বা রেস্টলেসনেস, খিঁচুনি, দুই পা অবশ হয়ে যাওয়া (গুলেন বারি সিনড্রোম)—এ জাতীয় অস্বাভাবিক উপসর্গগুলো ডেঙ্গুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, সে বিষয়ে বিতর্ক ছিল। কারণ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (সিয়ারো) গাইডলাইনে এসব উপসর্গকে অন্য রোগ বলা হতো, বলা হতো যে এগুলো ডেঙ্গুর জন্য নয়। এ ব্যাখ্যা পাল্টেছে। এখন এই জটিলতা হলে তাকে বলা হচ্ছে এটিপিক্যাল ডেঙ্গু। এগুলো এক বা একাধিক উপস্থিত থাকলে সেই ডেঙ্গুকে বলা হচ্ছে এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম। 

চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ নানা এশীয় দেশ থেকে প্রকাশিত জার্নালে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু জ্বরে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা ১১-৪২ শতাংশ। এই রোগীদের অধিকাংশেরই হার্ট ফেইলর এবং অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন দেখা দিয়েছে এবং অধিকাংশই আরোগ্য লাভ করেছেন। 

ডেঙ্গুর পর্যায়গুলো লক্ষ করুন 

ডেঙ্গু জ্বর তিনটি পর্যায়ে অতিবাহিত হয়। প্রথমত, জ্বর চলাকালীন বা ফেব্রাইল স্টেজ। এ সময় বিভিন্ন মাত্রায় তাপমাত্রা বাড়ে। সাধারণত ছয় দিনের দিন জ্বর কমে যায়। জ্বরের পরের সময়টাকে বলে এফেব্রাইল ফেজ বা জ্বর–পরবর্তী ফেজ। এটাকে ক্রিটিক্যাল ফেজও বলে। কারণ ডেঙ্গুর জটিলতাগুলো শুরু হওয়ার সময় এটাই। সিভিয়ার ডেঙ্গু এফেব্রাইল বা ক্রিটিক্যাল পিরিয়ডে, অর্থাৎ রোগের ছয়, সাত বা অষ্টম দিনে দেখা দেয়। এর লক্ষণগুলো হলো দ্রুত রক্তচাপ কমে যাওয়া, রক্তবমি, কালো পায়খানা, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, ত্বকের নিচে রক্ত জমা। এর সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, যকৃৎ বড় হওয়া, যকৃতের এনজাইম বেড়ে যাওয়া। বুকে, পেটে পানি জমা, ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। প্রেশার নেমে যাওয়ার জন্য রোগী আবোলতাবোল বকে, অস্থির আচরণ করে, রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মাল্টি–অরগান ফেইল করে।

রোগের তৃতীয় পর্যায়ে বা কনভালেসন্ট ফেজে জ্বর থাকে না কিন্তু প্রচণ্ড দুর্বলতা গ্রাস করতে পারে। একে বলে ক্রোনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম। 

চিকিৎসা কী? 

জ্বরের প্রথম থেকেই প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল পান করুন। খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, ফল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন। বয়স্ক ব্যক্তিদের দৈনিক তিন লিটার পানি পান করা উচিত। তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। দিনে চারবার প্যারাসিটামল দিতে পারবেন।

জ্বর চলে যাওয়ার পর থেকে সতর্কতা অবলম্বন করুন। জ্বরের ছয়, সাত, আট দিনের মাথায় ক্রিটিক্যাল ফেজ শুরু হয়। এ সময় নিয়মিত রক্তচাপ, নাড়িস্পন্দন মাপুন, প্রয়োজনে চার ঘণ্টা পরপর। পালস প্রেশার অবশ্যই ২০–এর বেশি থাকা উচিত। প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখুন। রোগী সম্পূর্ণ সচেতন আছে কি না বা অসংলগ্ন আচরণ করছে কি না, লক্ষ করুন। 

যেকোনো রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। ক্ল্যাসিক্যাল ও গ্রেড–১ হেমোরেজিক ডেঙ্গু বাড়িতেই চিকিৎসা করা সম্ভব। গ্রেড–২ হেমোরেজিক ফিভারে অতিরিক্ত সতর্কতা চাই, সতর্কসংকেত না থাকলে বাড়িতেই রাখতে পারেন। তবে গ্রেড–৩ ও ৪ হেমোরেজিক ফিভারের রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। এমন হাসপাতালে যাবেন, যেখানে ফ্লুইড মনিটরিং করা সহজ। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম দিনে ঠিকমতো ফ্লুইড দিতে পারাটাই মূল চিকিৎসা। রোগী শকে চলে গেলে নিবিড় পরিচর্যা বা আইসিইউ লাগবে। 

প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। ডেঙ্গু ছাড়াও নানা কারণে এটি কমে। এক লাখের নিচে কমে আসা জটিলতার লক্ষণ। বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে, তবে ১০-২০ শতাংশের ক্রিটিক্যাল লেভেলের (২০ শতাংশ) নিচে যায়। ৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়, যার কারণে রক্ত পরিসঞ্চালন লাগে। প্লাটিলেট ২০ হাজরের নিচে নামলে রক্তক্ষরণের ভয় থাকে। প্লাটিলেট ৫ হাজারের কম হলে ব্রেন, কিডনি, হার্টের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হয়। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমা ছাড়াও অন্য অনেক কারণেই রক্তক্ষরণ হতে পারে। এক ইউনিট প্লাটিলেট দিলে মাত্র ২০ হাজার বাড়ে, তাই প্লাটিলেট দিয়ে সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্লাটিলেটের তেমন দরকার নেই, বরং প্লাটিলেট দিলে রিকভারিতে দেরি হয়। 

রক্তক্ষরণ হলে যদি রক্তচাপ কমে যায়, নাড়িস্পন্দন দ্রুত হয়, হিমগ্লোবিন ১০–এর নিচে নেমে আসে, হিমাটোক্রিট কমে, তবেই রক্ত দিতে হয়। রক্তক্ষরণ আর রক্তনালির লিকিং মারাত্মক ডেঙ্গুর মূল কারণ। লিকিংয়ের জন্য ফুসফুসে, পেটে পানি জমতে পারে, বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে। স্যালাইন বা পানির চুলচেরা হিসাব রাখতে হবে দিনে কয়েকবার রোগীর পালস, প্রেশার দেখে। 

এবারের ডেঙ্গু যে কারণে আলাদা

এবারে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বেশি হচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গু হলে তা হেমোরেজিক ফিভারে মোড় নেয়। যেহেতু আমাদের দেশে ডেঙ্গু শুরু হয়েছে ২০০০ সাল থেকে, তার মানে অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো আক্রান্ত হয়েছে এবার। এবার তাই ডেঙ্গু ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুর মতো কেবল জ্বর বা মাথাব্যথা নিয়ে নয়, সরাসরি হেমোরেজিক ফিভার গ্রেড-২–এর উপসর্গগুলো নিয়েই আসছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষায় প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে গেছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ট্রপিক্যাল ডিজিজ রিসার্চ অর্গানাইজেশন ২০০৯ থেকে ডেঙ্গুকে নতুনভাবে বর্ণনা করেছে। ১. ডেঙ্গু সতর্কীকরণ সংকেত ছাড়া (প্রোবাবল ডেঙ্গু); ২. ডেঙ্গু সতর্কীকরণ সংকেতসহ; ৩. মারাত্মক ডেঙ্গু। লাতিন আমেরিকায় প্রাথমিক অবস্থায়ই রোগী অস্থির, প্রচণ্ড পেটব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। মূলত সেখানকার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দিয়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ডেঙ্গুর নতুন এই শ্রেণিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

এখন দেখা যাক কেন এবার হেমোরেজিক ডেঙ্গু বেশি হচ্ছে। ডেঙ্গুর তীব্রতা ভাইরাসের স্ট্রেইন (ডেন–১, ডেন–২ ইত্যাদি) দিয়ে নয়, ভাইরাস লোড দিয়ে নির্ণীত হয়। কারও একবার হলে জীবনে আর ডেন–১ দিয়ে সংক্রমণ হবে না। প্রথমবার সংক্রমণের পর নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বলে প্রথম বছরে আর ডেঙ্গু হয় না। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে রক্তের ম্যাক্রোফেজ বেশি ত্বরান্বিত হয় আর অ্যান্টিবডি এনহ্যানসড ডেস্ট্রাকশন বেশি হয়, মারাত্মক ডেঙ্গুও তাই বেশি হয়। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার হলে হেমোরেজিক বা সিভিয়ার ডেঙ্গু হবে এটা নিশ্চিত। কোন ভাইরাসের পর কোনটা দিয়ে হলে কতটা মারাত্মক হবে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কারও একবার ডেঙ্গু হলে দ্বিতীয়বার হওয়ার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ, তৃতীয়বার ০.৫ শতাংশ। 

কীভাবে রোগ শনাক্ত করবেন?

জ্বরের সময়, বিশেষ করে দ্বিতীয় দিন থেকে চতুর্থ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএস ১ এন্টিজেন পজিটিভ হলে রোগ নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়। তাই এই মৌসুমে জ্বর হলে পরদিনই এই পরীক্ষা করে ফেলুন। সরকার এই পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। এ ছাড়া রুটিন কিছু টেস্ট—যেমন চতুর্থ দিনে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, লিভারের এনজাইম এসজিওটি এসজিপিটি করা দরকার। রক্তের শ্বেতকণিকা চার হাজারের নিচে নেমে আসা স্বাভাবিক। প্লাটিলেট এক লাখের কম হলে ও হিমোটোক্রিট বাড়লে হেমোরেজিক ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। ডেঙ্গুর তীব্রতার মাত্রা বোঝার জন্য সিরিয়ালি বা পরপর কয়েক দিন প্লাটিলেট সংখ্যা দেখা হয়। এনএস ১ এন্টিজেন নেগেটিভ হলে ডেঙ্গু হয়নি, তা কিন্তু নিশ্চিত বলা যাবে না। লক্ষণ উপসর্গ ও অন্যান্য রিপোর্ট বিবেচনা করে তখন রোগ নির্ণয় করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমুদ্দিন : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড জেনারেল হাসপাতাল