রান্নার জায়গা থাকুক পরিচ্ছন্ন

শুভব্রত মৈত্র: শেফ ও সেরা রাঁধুনী প্রতিযোগিতার বিচারক
শুভব্রত মৈত্র: শেফ ও সেরা রাঁধুনী প্রতিযোগিতার বিচারক

খাবার তৈরির শুরুতেই ভাবতে হবে পরিচ্ছন্নতার কথা। কারণ, রান্নার সঙ্গেই স্বাস্থ্যের বিষয়টা জড়িত। খাবারের উপাদানে যাতে জীবাণু সংক্রমিত না হয়, সেদিকে ভালোমতো নজর রাখতে হবে।

খাবার তৈরির শুরুতে সঠিকভাবে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। রান্নাঘরে ময়লার ব্যাগ বা বালতি ঠিকমতো বন্ধ করে রাখতে হবে। খাবার সংরক্ষণের জায়গা ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে কম আর্দ৶ হতে হবে। এর চেয়ে কম আর্দ্রতা তেলাপোকা বাড়াতে পারে। কোকো, গুঁড়া দুধ ও বাদামজাতীয় খাবারে সহজেই পোকা ধরে যেতে পারে। তাই এসব খাবার ফ্রিজে রাখতে হবে। খাবার সংরক্ষণের জায়গা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত জিনিসগুলো সব সময় শুকনো রাখা দরকার।

খাবার ঠান্ডা ও সংরক্ষণ করতে রান্না করা খাবার ফ্রিজে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। ফ্রোজেন খাবার ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর থেকে কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। এই তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া বাড়তে পারে না। মুদি দোকানের জিনিসপত্র কিনে আনার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রিজে রাখা উচিত। গরমকালে খাবার আনা-নেওয়া করতে আলাদা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। অনেকে নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার করেন না, ফ্রিজ পরিষ্কার করার পাশাপাশি পচা খাবার সেখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। ফ্রিজে খাবারদাবার বেশি দিন না রাখাই ভালো। প্রতিটি খাবারের বাক্সে তারিখ দিয়ে রাখা যেতে পারে, যাতে খাবার নষ্ট বা পচে যাওয়ার আগে ব্যবহার করে নেওয়া যায়। ফ্রিজে অতিরিক্ত খাবার না রাখা ভালো। এতে ফ্রিজের ভেতর বাতাস চলাচলে সুবিধা হবে এবং খাবার বেশি ঠান্ডা থাকবে। কাঁচা মাংস আলাদা বাক্সে ভরে রাখুন।

খাবারে ব্যাকটেরিয়া কমাতে

বরফ হয়ে যাওয়া খাবারগুলোকে সিলড প্যাকেটে রেখে পানিতে ডুবিয়ে বা থাইক্লোওয়েভে দিয়ে নরম করে নিতে হবে। বরফ হয়ে যাওয়া খাবার কখনোই রান্নাঘরে কক্ষ তাপমাত্রায় নরম করা যাবে না। তাহলে বরফ হয়ে যাওয়া খাবারের ভেতরে বরফ থাকবে এবং বাইরে নরম হয়ে যাবে এবং এই অবস্থাতে জীবাণু সংক্রমণ বেশি হবে। গরম খাবার গরম অবস্থাতেই খেতে হবে। নয়তো খাবার ঠান্ডা করে যত দ্রুত সম্ভব ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। দুই ঘণ্টার বেশি সময় খাবার বাইরে রাখা যাবে না। কাটা ফলমূল বা শকসবজির ক্ষেত্রেও। খাবার পরিবেশনের জন্য পরিষ্কার বাসনপত্র ব্যবহার করতে হবে। কখনোই যে পাত্র খাবার তৈরির আগে ব্যবহার করা হয়েছে সেটাই রান্নার পরও ব্যবহার করা যাবে না। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা খাবার বের করেই পরিবেশন করতে হবে, নয়তো একটা বরফ রাখা পাত্রের ওপর রেখে পরিবেশন করুন। রান্না করা খাবার ছোট ছোট পাত্রে রাখুন এবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। খাবার গরম করার ঠিক আগে ফ্রিজ থেকে বের করতে হবে।

কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখার পদ্ধতি

সব সময় কাঁচা ও রান্না করা খাবারের চপার বোর্ড আলাদা রাখতে হবে। চপার বোর্ড কাচ বা প্লাস্টিকের হতে পারে। তবে বোর্ড কাচ বা প্লাস্টিক যেটাই হোক না কেন, ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। কাঁচা মাছ বা মাংসের রক্ত সব সময় কিচেন পেপার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিতে হবে। কখনোই ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কাপড় ব্যবহার করা যাবে না। কাঁচা মাছ বা মাংস রাখার পাত্রগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না, যদি সেটা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা না হয়। কাঁচা মাছ বা মাংস প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে রাখতে হবে, যাতে রক্ত বা ময়লা পানি ফ্রিজের ভেতর না পড়ে।

রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা

কাঁচা খাবার, বিশেষ করে মাংস ও পেস্ট্রি ধরার পর হাত ধুতে হবে। হাতে কেনো ধরনের কাটাছেঁড়া থাকলে তা ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করে পরিষ্কার গ্লাভস পরতে হবে। বেশি তাপমাত্রায় কাজ করলে রাবারের গ্লাভস না পরাই ভালো। খাবার তৈরি করার আগে হেয়ার নেট পরে নিতে হবে। খালি হাতে খাবার কম ধরতে হবে। যতবার খাবার চাখতে হবে, চামচটা ততবার ধুয়ে নিতে হবে। অ্যাপ্রোনে ভেজা হাত মোছা যাবে না। খাবার রান্নার জায়গায় ধূমপান করা যাবে না।

শুভব্রত মৈত্র: শেফ ও সেরা রাঁধুনী প্রতিযোগিতার বিচারক

শুভব্রত মৈত্রের রেসিপি

খাসির পায়া

উপকরণ: খাসির পা বা নলি ১ কেজি, তেল ২ টেবিল চামচ, সবুজ এলাচি ৩–৪টা, দারুচিনি ১ টেবিল চামচ, কালো এলাচি ২টি, তেজপাতা ৩টি, হলুদগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, পানি সিকি কাপ, আদা-রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, রাঁধুনী ধনিয়াগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, রসুনগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ভাজা পেঁয়াজগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, এক চিমটি ময়দাসহ টকদই ৩ টেবিল চামচ, গোলপজল ২ টেবিল চামচ, জায়ফল-এলাচিগুঁড়া আধা টেবিল চামচ করে, দুধে ভেজানো জাফরান আধা টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, ইস্টার কয়েক ফোঁটা, আটার খামির (দমের জন্য), ধনিয়াপাতা ও আদাকুচি পরিবেশনের জন্য।

প্রণালি: একটি পাত্রে তেল দিয়ে গরম করে নিন। গরম হয়ে এলে তাতে সবুজ এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, কালো এলাচি ও তেজপাতা দিন। এবার নলি দিয়ে হালকা করে ভেজে ফেলুন। লবণ ও হলুদগুঁড়া দিয়ে ভালো করে মেশান। পানি দিয়ে ঢেকে কিছুক্ষণ রান্না করুন। এবার আদা-রসুনবাটা, ধনিয়াগুঁড়া, লাল মরিচগুঁড়া, রসুনবাটা এবং ভাজা পেঁয়াজগুঁড়া দিন। ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে টকদই, গোলাপজল, গরমমসলা, জায়ফল, দারুচিনিগুঁড়া ও জাফরান দিতে হবে। ঢাকনা দিয়ে ২-৩ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবারে মাংসগুলো আলাদা একটা পাত্রে তুলে রাখুন। কয়েক ফোঁটা ইস্টার দিয়ে পাত্রটা ঢেকে দিন। পাত্রের চারপাশে আটার খামির দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে মৃদু আঁচে রান্না হতে দিন। হয়ে এলে ধনেপাতা কুচি ও আদা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।