পাহাড়-সমুদ্রের স্মৃতি

শেষবার চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম ২০১২ সালে। এবারের যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটা কনফারেন্সে অংশ নেওয়া। ‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি কনফারেন্স-২০১৯ ’-এ যোগ দিতে সেই যাত্রাটা ছিল এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে। কনফারেন্সের ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করেছিলাম ঘুরে বেড়ানোর।

প্রথমেই মেয়ের সঙ্গে রিকশায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চষে বেড়িয়েছি। প্রথমবার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা বলেই কি না, অ্যাডভেঞ্চারের মতো লাগছিল। ছোট পাহাড়, সবুজ গাছ, কোথাও কোথাও খানিকটা জঙ্গলের মতো প্রকৃতি আর নাম না জানা পাখির গুঞ্জন—সব মিলে অসাধারণ সময় কাটিয়েছিলাম। সুন্দর দিন কাটিয়ে আমরা সেদিন শহরে ফিরেছি।

পরদিন ভাটিয়ারীতে গিয়েছি। যেতে যেতে নজর কেড়েছিল ‘ক্যাফে ২৪ ’। গাড়ি থেকে নেমেই মনটা ভালো হয়ে গেল। এত মনোরম প্রকৃতি। ‘জাঙ্গল হাউস’ নামে ছোট ছোট টিলার ওপর কাঠের দোতলা বাড়ির মতো করে রাখা হয়েছে। বাইরের খাবার নিয়ে ভেতরে ঢোকা নিষেধ, তবে নিচের ক্যাফেটেরিয়া থেকে কেউ চাইলে খাবার কিনে ওপরে বসে খেতে পারবে। সামনেই একটা হ্রদ আছে। টিকিট সংগ্রহ করে ‘ক্যাফে ২৪ পার্কে’ ঢোকা যাবে। বৈচিত্র্যময় ঘরগুলো দেখতে বেশ লাগছিল।

‘ক্যাফে ২৪’ পার্কের ঠিক উল্টো পাশেই ‘সানসেট পয়েন্ট’। পাহাড়ের ওপরে বলে এখান থেকে সূর্যাস্ত সরাসরি দেখা যায়। এখানেও ছোট পাহাড়ের ওপর কাঠের বাড়ির মতো বসার জায়গা বানানো। নিচের ক্যাফেটেরিয়া থেকে কফি খেতে খেতে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখাটাও অন্য রকম ব্যাপার। বাচ্চাদের খেলার জন্য বন্দোবস্ত আছে। পাহাড়ের একদম শেষ সীমানায় ছোট করে কাঠের, সাদা রং করা সীমানির্ধারক। নিচের দিকে তাকালে বোঝা যায় কতটা ওপরে আমরা দাঁড়িয়ে! তবে ভেতরের দিকে গিয়ে কারও যদি মনে হয় নিচে নামবে, সে ব্যবস্থাও আছে। সিঁড়ি ওপর থেকে নিচের দিক পর্যন্ত বিস্তৃত এবং নিরাপত্তার জন্য রয়েছে গেটের ব্যবস্থা।

সানসেট পয়েন্টকে পেছনে ফেলে, আরেকটু এগিয়ে গেলেই ‘ভাটিয়ারী লেক’। প্রকৃতি তার সবটুকু সবুজ উজাড় করে দিয়েছে যেন। গভীর, স্থির, স্বচ্ছ বৃষ্টির পানি দিয়ে এই লেক পরিপূর্ণ। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সম্পূর্ণ লেক ঘোরা যায়। আমরা ছয়জন ছিলাম। ঘুরে বেড়ালাম হ্রদের জলে।

চট্টগ্রাম গিয়ে সমুদ্র দর্শন করব না, তা কি হয়! কাছেই পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। শেষে সেখানেই যাওয়া হয়েছিল। সৈকত থেকে কিছুটা দূরেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নোঙর করে আছে অজস্র জাহাজ। প্রায় সাত বছর আগে এসেছিলাম, আর এই আসা হলো। আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি সুন্দর ও পরিষ্কার। সৈকত অনেকটা জায়গাজুড়ে রেলিং দেওয়া। আবার কেউ যদি বসতে চায়, উজ্জ্বল রং করা সিমেন্ট দিয়ে বানানো টুলের মতো জায়গা আছে। সমুদ্রের পানি ছোঁয়ার জন্য একটা অংশ খোলা রাখা হয়েছে। আগে যেখানে বর্মিজ মার্কেট ছিল, সেখান এখন নেই।

সময় যেহেতু খুব অল্প ছিল, তাই শুধু সমুদ্র দর্শন করেই আমরা চলে এসেছিলাম।


নাভিরা আফতাবী বিনতে ইসলাম
ঢাকা।