সাগরতলের আশ্চর্য জগৎ

ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশাল এক সামুদ্রিক কচ্ছপ। একটু এগোলেই বড় বড় ক্যাট ফিশ। আরেকটু সামনে বড় সামুদ্রিক কোরাল মাছের খুনসুটি। সামুদ্রিক ইল খাবি খাচ্ছে পানির নিচে। চিংড়ি মাছের খেলাও দেখা যাবে। আছে লাল কাঁকড়া। জেলি ফিশ বিচিত্র ভঙ্গিতে খেলা দেখাচ্ছে!

সমুদ্রের ভেতরে কত বিচিত্র মাছ আর প্রাণী আছে, তা কজনই–বা জানে। কিন্তু সামনাসামনি এদের দেখা পেলে বিস্ময়ে চোখ যেন কপালে উঠে যায়! এমনই সব চমক দেখা গেল কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে।

কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ফিশ অ্যাকুয়ারিয়াম। নাম রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড। প্রায় ৮০ শতক জমির ওপর তৈরি চারতলা ভবনের তিনতলাজুড়েই এই ফিশ অ্যাকুয়ারিয়াম।

রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে দর্শনার্থী। ছবি: রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে দর্শনার্থী। ছবি: রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড

চারতলা ভবনের তিনতলাজুড়েই নান্দনিক শিল্পকর্মসমৃদ্ধ ছোট-বড় শতাধিক অ্যাকুয়ারিয়াম। বৈদ্যুতিক আলোয় ঝলমলে অ্যাকুয়ারিয়ামের স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটছে হাঙর, কোরাল, পাঙাশ, মাইট্যা, কামিলা, রুপচাঁদা, ইলিশ, জেলি ফিশ, লবস্টারসহ নানা প্রজাতির মাছ। সুড়ঙ্গের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মেলে এসব মাছের। এ যেন সাগরতলের এক আশ্চর্য জগৎ। অন্য রকম এক মাছের রাজ্য। অ্যাকুয়ারিয়ামগুলোয় রাখা হয়েছে কৃত্রিম প্রবাল। সেই প্রবালের ফাঁকে ফাঁকেই নানা রংবেরঙের মাছ সাঁতরে বেড়াচ্ছে।

আপনিও ঘুরে দেখতে পারেন সাগরতলের নাম না–জানা হরেক প্রজাতির মাছ ও জীবজন্তু। ছবি: রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড
আপনিও ঘুরে দেখতে পারেন সাগরতলের নাম না–জানা হরেক প্রজাতির মাছ ও জীবজন্তু। ছবি: রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড

অ্যাকুয়ারিয়ামে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা বিনোদনের পাশাপাশি অ্যাকুয়ারিয়াম রাখা নানা প্রজাতির মাছ সম্পর্কে জানতে পারবেন। বাংলাদেশে এ রকম অ্যাকুয়ারিয়াম এটিই প্রথম।

রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের পরিচালক আবদুল ভূঁইয়া শাহাদাৎ প্রথম আলোকে বলেন, এখানে শতাধিক অ্যাকুয়ারিয়ামে রয়েছে ১৯০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। আরও ১০০ প্রজাতির মাছ আনা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু অ্যাকুয়ারিয়ামে মিঠা পানির মাছও রাখা হবে। এসব মাছ ও প্রাণীর মধ্যে সামুদ্রিক আছে ১৪০ প্রজাতির। এ ছাড়া নোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণে বেড়ে ওঠা মাছ আছে ২০ ধরনের। আর মিঠা পানির আছে ৩০ প্রজাতির। তিনি জানান, তাঁদের নিজস্ব জাহাজ আছে, সেই জাহাজ দিয়ে এসব মাছ ও প্রাণী সংগ্রহ করা হয়েছে। এমনকি এসব মাছ ও প্রাণী কোনোটাই দেশের বাইরের নয়। দেশের সমুদ্রকে সবার সামনে তুলে ধরতে এখানের সবই বঙ্গোপসাগর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

নির্দেশনা অনুসারে মাছের খাবারও দিতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ছবি: রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড
নির্দেশনা অনুসারে মাছের খাবারও দিতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ছবি: রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড

মাছ ও প্রাণী নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাদের জন্য এটি অনন্য একটি জায়গা বলে জানালেন আবদুল ভূঁইয়া শাহাদাৎ। বছরজুড়েই শিক্ষার্থীরা এখানে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তাঁদের জন্য প্রবেশ মূল্যে ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর যারা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পান, তাঁরা প্রমাণ সাপেক্ষে এখানে বিনা মূল্যে ঢুকতে পারবেন।

এ পর্যন্ত এটি ঘুরে দেখেছেন পাঁচ লাখ পর্যটক। এখানে যাঁরা বেড়াতে আসেন, শুরুতেই তাঁদের ছবি তোলা হয়। ঘুরে বের হওয়ার সময় সেই ছবি বড় করে লেমিনেটিং করে দেওয়া হয় বিনা মূল্যে। এখানে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০০ টাকা। এ ছাড়া লম্বায় তিন ফুটের কম ছোট শিশুরা বিনা মূল্যে ঢুকতে পারে।