এ দেশের বিউটি পারলার

পারলার এখন শহুরে সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। ছবি: নকশা
পারলার এখন শহুরে সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। ছবি: নকশা

আরাম, নিজের জন্য একটু সময়, বিলাসী সেবা, সৌন্দর্যচর্চা, সাজগোজ—সবকিছুর জন্যই সৌন্দর্যসেবাকেন্দ্র বা বিউটি পারলার হয়ে উঠেছে আদর্শ জায়গা। বয়স এখানে কোনো বিষয় নয়। সব বয়সীরাই যান সৌন্দর্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে। বেশ কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশে বিউটি পারলার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পারলার-সংস্কৃতি গড়ে ওঠার কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। 

● ষাটের দশকের কথা। ১৯৬৩ সালে ঢাকায় প্রথম বিউটি পারলার চালু করেন চীনা নাগরিক কার্মেল চ্যাং লিউ শেই। শুরুতে এর কোনো নাম না থাকলেও ১৯৬৫ সালে এটি মে ফেয়ার নামে আবার চালু হয়। কাছাকাছি সময়ে হংকং বিউটি পারলারও ছিল ঢাকায়। আরও পরে লি বিউটি পারলার চালু হয়। মূলত এ দেশে আসা চীনারাই এই পারলারগুলো পরিচালনা করতেন। সেই সময়ে অভিনেত্রী এবং অভিজাত পরিবারের নারীরাই সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্রের সেবা গ্রহণ করতেন। 

● প্রথম দিকে বিয়ের সাজ, চুল কাটা—এ রকম দু-তিনটি সেবাই মূলত দেওয়া হতো মেয়েদের পারলারে। 

● স্বাধীনতার পর প্রথম বাঙালি হিসেবে জেরিনা আজগর খোলেন লিভিং ডল বিউটি পারলার। সেটা সত্তরের দশকের কথা। চীনা পারলারগুলোতে গ্রাহকদের সঙ্গে অপেশাদার ব্যবহার দেখে জেরিনা আজগর অনুভব করেন পারলার চালু করা উচিত। সৌন্দর্যচর্চার পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দিতেন তিনি। পুরানা পল্টনের গাজী ভবনে একটি ঘরে দুটি চেয়ার নিয়ে শুরু করেন পারলার যাত্রা। ১৯৯৬ সালে চলে যান ঢাকার গুলশানে। 

● ঢাকার বাইরে প্রথম বিউটি পারলার চালু হয় চট্টগ্রামে, লুসি বিউটি পারলার। 

● নব্বইয়ের দশকে এসে বিউটি পারলারের সংখ্যা বেড়ে যায় বাংলাদেশে। বেড়ে যায় সেবা নেওয়ার পরিমাণও। শুরু হয় নগর সংস্কৃতির নতুন ধারা। 

● ঢাকায় জনপ্রিয় সৌন্দর্যসেবাকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আছে পারসোনা, ফারজানা শাকিল’স মেকওভার স্যালন, ওমেন্স ওয়ার্ল্ড, কিউবেলা, রেড বিউটি পারলার অ্যান্ড স্যালন, হারমনি স্পা অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা বিউটি স্যালন, মিউনিজ ব্রাইডাল, বানথাই বারবার অ্যান্ড বিউটি স্যালন, হেয়ারোবিক্স, অরা বিউটি লাউঞ্জ, বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ, মেনস কেয়ার, অ্যাডোনিস, ডিভাইন বিউটি স্যালন, লাবেল বিউটি স্যালন, নিল’স, প্রিভে স্যালন অ্যান্ড স্পা ইত্যাদি। 

● চট্টগ্রামে আছে লুসি, পারসোনা, ইভস, হাবিব তাজকিরাস, আলভিরা’স, টাচ অ্যান্ড গ্লো, ফেয়ার টাচ, নির্ভানা, নিউ লুক, বিউটি বাফে, ব্লাশ বিউটি লাউঞ্জ, লিয়েনা ইত্যাদি। 

● বরিশালের অপ্সরী বিউটি পারলার, রুনি’স বিউটি পারলার, কাঞ্চি ডিলাক্স, প্রিয়া বিউটি পারলার, নাজমা বিউটি পারলার, ববি বিউটি পারলার, দীপালী বিউটি পারলার, কৃষ্ণচূড়া বিউটি পারলার, দোলা বিউটি পারলার, চন্দ্রমুখী বিউটি পারলার, রিয়েন বিউটি পারলার ইত্যাদি বেশ পরিচিত। 

● যশোরেও পারলারের বেশ দাপট। আছে হলি, টুইঙ্কেল, জেসিকা, দোলা, ড্রিম গার্ল, সানন্দা, ক্ল্যাসিক ফেয়ার, বিউটি ক্যাজুয়াল, আশা ইত্যাদি। 

● খুলনায় আছে এক্সক্লুসিভ কানিজ হেয়ার অ্যান্ড বিউটি, ফেম বিউটি পারলার, জেসি’স বিউটি পারলার, দুলহান বিউটি পারলার, এশিয়ান জেন্টস পারলার, রেজটি বিউটি পারলার, অপ্সরা বিউটি পারলার, বিউটি ক্যাসেল, ফেয়ার অ্যান্ড গ্ল্যামার বিউটি পারলার, তানিয়া’স বিউটি পারলার, ফেইস প্লেস বিউটি পারলার ইত্যাদি। 

● নিবন্ধিত পারলারের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মতো। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়। 

● ছেলেদের মোট পারলার বা সেলুনের সংখ্যা পাঁচ লাখ। 

● নারী কর্মজীবীদের মোট সংখ্যার ১৮ শতাংশ পারলারে কাজ করছেন।

● বাংলাদেশে পারলারের সেবা এবং সৌন্দর্য পণ্যের বাজার বছরে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের। 

● পারলারের কর্মী হিসেবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা মেয়েরা বিশাল একটা জায়গা দখল করে আছেন। দক্ষতা ও কর্মক্ষমতাই সেটার কারণ।

● কিছু পারলার বাদে পুরো দেশে প্রতিটি পারলারে গড়ে প্রতিদিন ১০ জন করে গ্রাহক যান সেবা নিতে। 

● বেশির ভাগ গ্রাহক বিকেলের দিকে যান পারলারে। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সেবা নেন বেশি।


সূত্র: সৌন্দর্যসেবা খাত নিয়ে কাজ করা সামাজিক উদ্যোগ উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন ও রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন