নখ রাঙাতে এখন

মডেল: চাঁদনি, সাজ পারসোনা, ছবি: কবির হোসেন
মডেল: চাঁদনি, সাজ পারসোনা, ছবি: কবির হোসেন

‘নখের নিচে রেখেছিলাম

তোমার জন্য প্রেম...।’ 

কবি হেলাল হাফিজের পদ্যে নখের নিচে প্রেমের কথা থাকলেও প্রেমের অবস্থান ঠিক কোথায়, তা এক বিরাট তর্কের বিষয় হতে পারে। নখের নিচে প্রেম? মানা কিংবা না মানা আপনার বিষয়। তবে নখের ওপর আঁকা আলপনা আর রংকে অস্বীকার করার জো আর নেই। সাজের এক অনন্য অনুষঙ্গ নেইলপালিশ। যুগে যুগে সাজে আসে পরিবর্তন। নখের সাজের ব্যাপারেও একই কথা। পরিবর্তন তো হয়ই। মেহেদি আর আলতা ছিল আদি যুগের নখ রাঙানোর পদ্ধতি। এখন পাথর, নেইলপালিশ ইত্যাদি দিয়েই সাজানো হচ্ছে নখ। 

পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লিমিটেডের পরিচালক নুজহাত খান বলেন, চোখ, ঠোঁট কিংবা নখের সাজে এখন ধাতব (মেটালিক) রঙেরই প্রাধান্য বেশি। মেরুন, কালো আর বিভিন্ন ধরনের ক্রিমি নিউট্রাল রংও চলছে বেশ। অমব্রেও (অর্থাৎ, ভিন্ন রঙের শেডের একত্রীকরণ) বেশ প্রচলিত। নখের সাজে গ্লিটার, পাথর আর মুক্তার ব্যবহারও হচ্ছে। ত্রিমাত্রিক নকশার ব্যবহারও চলছে ফ্যাশনধারায়। আধা চাঁদের নকশা (যা নখের গোড়ার দিকে করা হয়ে থাকে) আর দুটি টোনের ব্যবহারও চলছে। ব্যবহার হতে পারে গ্রাফিক্যাল নকশাও।

নখের আকৃতি

চলতি ধারার নেইলপালিশ তো লাগাবেন, তার আগে জেনে নিন নখের আকৃতির চলতি ধারা। বর্গাকার নখের দিন আর নেই। বরং কাঠবাদামের আকার, গোলাকার, ডিম্বাকার, স্টিলেটো আকার—এগুলোর মধ্যে থেকে পছন্দের আকার বেছে নিতে পারেন বলে জানা গেল নুজহাত খানের কাছ থেকে। ছোট–বড়, নাকি মাঝারি—যেমন নখে আপনি স্বচ্ছন্দ, তেমনটাই রাখুন।

মেটালিক রঙে নখের সাজ

পোশাকে রুপালি, সোনালি বা তামাটে রঙের ভিত্তি থাকে। সেটিই বেছে নিতে পারেন নেইলপালিশে। সাধারণত সব রঙের পোশাকের সঙ্গেই তিনটি রঙের যেকোনো একটির কাজ থাকে। ফলে সেই রঙের নেইলপালিশ বেশ মানিয়ে যায়। কোনো অনুষ্ঠানে হয়তো এমন একটা পোশাক পরলেন, যেটি মূলত কালো আর তার সঙ্গে আছে সোনালি রং। এ ক্ষেত্রে নখের অগ্রভাগে থাকল সোনালি ছোঁয়া আর পোশাকের রং, অর্থাৎ কালো রঙেই রাঙালেন নখের বাকি অংশ। আবার সামনের দিকে কালো আর বাকিটা সোনালি—এভাবেও হতে পারে। কিংবা নখে যেকোনো রং ব্যবহার করলে সেটির ধাতব ধাঁচটাও বেছে নিতে পারেন।

দুই রং এক হলে

দুটি আলাদা রঙের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানালেন নুজহাত খান। তবে দুটি রং খুব জটিল নকশায় ফুটিয়ে তোলা জরুরি নয়। ফরাসি নেইল আর্টের মতো শুধু নখের সামনের দিকে একটি রং আর বাকি অংশে ভিন্ন রং ব্যবহার করা যেতে পারে। কিংবা নখের মধ্যের অংশে একটি রং, এর চারপাশে গোল করে অন্য রং ব্যবহার করলেন। হয়তোবা নখের সামনের দিকে ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের মতো একটি রং ব্যবহার করা হলো, বাকি অংশে অন্য রং। 

সব নখে একই রং, কেবল একটি নখে অন্য রং—এভাবেও দুই রঙের সমন্বয় করা যেতে পারে। সাধারণত দুই হাতের অনামিকাকেই বেছে নেওয়া হয় এই আলাদা রঙের জন্য। আলাদা রং না করে গ্লিটার বা পাথরও কাজে লাগানো যায়।

পাঁচ আঙুলে পাঁচ রং?

পাঁচটি নখে পাঁচ রং। ভাবছেন, এ আবার কোন পাগলামি? তবে পাঁচটি রঙের সামনের পাঁচটি ভিন্ন রং আর বাকি পুরো নখে পোশাকের ভিত্তি রংটি থাকলে বেশ ফ্যাশনদুরস্তই দেখায়। এই ভিত্তি রংটা পোশাকের মেটালিক রং হতে পারে (সোনালি, রুপালি বা তামাটে)। আবার পোশাকের মূল রংও হতে পারে। ভিন্ন কিছু করতে চাওয়াটা সম্পূর্ণই নিজের ব্যাপার। তবে মানানসই উপায়ে ভিন্ন কিছু করা হলে সেটি সুন্দর কিছুও হতে পারে। পাঁচ নখের অগ্রভাগে পাঁচটি ভিন্ন রং, আর সব নখের বাকি অংশে স্বচ্ছ নেইলপলিশ (ফ্রেঞ্চ নেইল স্টাইলে)—এ রকমও হতে পারে।

আরও কিছু

আজকাল জেল নেইলপলিশও পছন্দ করছেন অনেকে। এটা বেশ চকচকে, গ্লিটারের মতো চমকদারও। আবার টেকেও বেশি দিন।

এ ছাড়া সব নখে একই নেইলপলিশ ব্যবহার করে ভিন্ন একটি রং দিয়ে এর ওপর অক্ষর লেখা যেতে পারে। নেইল আর্টের শুরুর দিকে নখজুড়ে নানা নকশার ব্যবহার হতো। তবে আজকাল নখে গ্রাফিকসের ব্যবহার হলেও তা খুবই সামান্য স্থান জুড়ে থাকে।

একেবারে নেইলপলিশ ছাড়াও থাকতে পারেন। সাধারণভাবে ম্যানিকিউর করা হাতেই ফুটে উঠতে পারে অপার সৌন্দর্য। তবে চাইলে এর মধ্যেও সামান্য একটু নকশার ছোঁয়া রাখতে পারেন। একটু স্ট্রাইপ বা কোণ দিয়ে সামান্য রঙের ছোঁয়া থাকল না হয়। আপনার নখ হয়ে উঠবে অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা।