অন্দরসজ্জায় বেঞ্চ

অন্দরসজ্জায় বেঞ্চ নিয়ে আসবে ভিন্নতা। মডেল: জিনিয়া, ছবি: নকশা
অন্দরসজ্জায় বেঞ্চ নিয়ে আসবে ভিন্নতা। মডেল: জিনিয়া, ছবি: নকশা

বেঞ্চ শব্দটি শুনলেই স্কুলঘরের আনন্দময় ছবিটাই ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে। বেশ কিছু দোকানের বিক্রয়কর্মীকে বেঞ্চ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় পাল্টা প্রশ্ন পেলাম স্কুলের বেঞ্চ খুঁজছি কি না। অন্দরসজ্জায় বেঞ্চ খুব একটা প্রচলন না পেলেও দেখতে লাগে বেশ। অন্য রকম একটা ধারণাও বটে-স্কুল কিংবা পার্কের বেঞ্চ চলে আসছে অন্দরসজ্জায়। আরামদায়ক নানা নকশার বেঞ্চ রাখা যেতে পারে অন্দরে। স্কুল তো বটেই, বেঞ্চ সাজানোর প্রসঙ্গে হোস্টেলজীবনে টিভিরুমের বেঞ্চে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখার দৃশ্যটা ফুটে উঠছে নিজের সামনেই। ‘গণ’ ব্যবহারের বিষয়টা রেখে এখন বরং জেনে নেওয়া যাক পারিবারিক দৃশ্যপটে বেঞ্চের জায়গা কোথায় হতে পারে।

রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরীন চৌধুরী বলেন, বেঞ্চ মানেই তো চার পায়ার ওপর তক্তা। বেঞ্চের বিষয়টাও যেন অনেকটা দোলনার মতোই। শৈশবের স্মৃতি আমরা ভুলতে পারি না, দোলনা দেখলেই দোল খেতে ইচ্ছে করে। তেমনি বেঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের শৈশবের স্মৃতি। গ্রামের বাড়ির মুদি দোকানের বাঁশের বেঞ্চের মতো ঐতিহ্য আমরা চাইলেই ধরে রাখতে পারি।

সুবিধামতো বেঞ্চ
বেঞ্চের সুবিধা অনেক। বিশেষ করে ছোট বাসায়। চওড়া কম বলে জায়গা নেয় কম। কিন্তু চারজনের বসার কাজটা করে দিল আরকি। স্কুল বেঞ্চের ওপর কিছু পরিবর্তন অন্দরসজ্জায় দারুণভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। ঘরে রাখার জন্য বেঞ্চগুলোতে হয়তো হেলান দেওয়ার জায়গা থাকল। খানিকটা ঢেউখেলানো হাতল থাকল, হাতির শুঁড়ের মতো। বসার জায়গাটায় ফোম দেওয়া যেতে পারে আরামের জন্য। সোফার মতো কুশন রাখতে না পারলেও দুই পাশে দুটি কুশন খারাপ লাগবে না দেখতে। চেয়ারের কভারের মতো বেঞ্চের কভারের ব্যবস্থা করতে পারেন।

বসার রুমের
মেহমানদের বসার স্থান বা ড্রয়িংরুমের সোফা যে উপকরণে (বেত, কাঠ, বাঁশ প্রভৃতি) তৈরি, সেই উপকরণের বেঞ্চই বেছে নিন ডিভাইনের বদলে। বেঞ্চের কভারের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখুন সোফার কভারের।

পারিবারিক রুম
লিভিং রুমটা তো একেবারে নিজের এলাকা। বেঞ্চের বসার জায়গাটায় ফোম না দিয়ে পুরো বেঞ্চটাই রিকশা পেইন্ট করিয়ে নিতে পারেন। এক পাশে হয়তো একটা কাঠের বাক্স বা ট্রাংক আছে, যেটির ভেতর কিছু জিনিস তোলা আছে। বাক্সটির ওপর বসার জায়গা। এই বসার জায়গাটুকুও রিকশা পেইন্ট করিয়ে নিন। পর্দার জন্য বেছে নিন চাপা সাদা কিংবা কমলা। নানা রঙে রঙিন রিকশা পেইন্টের পাশে একটাই রং থাক পর্দায়।

খাবার ঘর
খাবারের টেবিলের যেদিকটা দেয়ালের কাছে, সেদিকটায় দেয়ালের দিকে টানা বেঞ্চ রাখতে পারেন। হেলান দেওয়ার জায়গাও থাকতে পারে। চাইলে চেয়ার একেবারেই না রেখে দুদিকেই বেঞ্চ রাখা যায়। টেবিল ক্লথ, রানার প্রভৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখুন বেঞ্চের কভারের।

ছাদে-বারান্দায়
ছাদের বাগানে বা বড় বারান্দায় নকশাদার বেঞ্চ রাখতে পারেন। এসব জায়গায় ধুলাবালু, রোদ-বৃষ্টি আসতে পারে, তাই মেটাল শিট, রড আয়রন বা কাস্ট আয়রনের বেঞ্চ বেছে নেওয়া ভালো।

খেয়াল রাখুন
বেঞ্চের উচ্চতা রাখুন চেয়ারের উচ্চতার মতোই, ৩০-৩২ ইঞ্চি। তবে চওড়া ১৮ ইঞ্চির বেশি নয়। ঘরের দেয়ালের রং ও অন্যান্য আসবাবের রং—সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেঞ্চ রাখুন, যেন এটিকে বেমানান না দেখায়। পরিকল্পনা করুন বাজেট বুঝে। কাঠ আর মেটালের দরদাম দেওয়া হলো। বাঁশ বা বেতের সামগ্রীর দাম তুলনামূলকভাবে কম পড়ে।

বাজারের খোঁজখবর
গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেটের জি ৬/জি ৮ নম্বর দোকান হোমেক্সে পাওয়া গেল রড আয়রন আর কাঠের তৈরি বেঞ্চ। সঙ্গে রয়েছে একই ধরনের উপকরণে তৈরি চৌকা টেবিল। টেবিলের একটা লম্বা ধার জুড়ে বড় বেঞ্চ (যাতে ৩ জন বসতে পারে), টেবিলের প্রস্থ বরাবর দুই দিকে দুটি ছোট বেঞ্চ (একজন করে বসতে পারে); টেবিলের আরেকটা লম্বা ধার ফাঁকা-এমন ‘থিম’ চিন্তা করেই সেটটা রাখা হয়েছে বলে জানা গেল। তবে ক্রেতার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী সেটসহ বা সেট ছাড়া দুভাবেই বেঞ্চ বিক্রি করা হয়। একই মার্কেটের অন্যান্য দোকানেও বেঞ্চের খোঁজ পাবেন। মেটাল ও প্লাস্টিকের বেঞ্চ, ঢালাই লোহা ও কাঠের বেঞ্চ কিংবা শুধু কাস্ট আয়রনের বেঞ্চ পাওয়া যায়। রড আয়রন আর কাঠের তৈরি বেঞ্চ পাবেন ৮ হাজার টাকায়, একজন বসতে পারবে। তিনজনের বেঞ্চ ১৫ হাজার টাকায়। এ রকম একটি বড় বেঞ্চ আর দুটি ছোট বেঞ্চসহ টেবিল পাবেন ৪৫ হাজার টাকায়। একজনের উপযোগী কাস্ট আয়রনের বেঞ্চ ১৫ হাজার টাকা। দুজন বসার উপযোগী কাস্ট আয়রনের বেঞ্চের দাম মোটামুটি ২০ হাজার টাকা, ঢালাই লোহা ও কাঠের তৈরি বেঞ্চ ১৮ হাজার টাকা, মেটাল ও প্লাস্টিকের ‘রকিং’ বেঞ্চ ১৮ হাজার টাকা। এসব বেঞ্চে হেলান দেওয়ার সুযোগ আছে। সঙ্গে মানানসই টেবিলও নিতে পারেন।

বানিয়ে নিতে চাইলে
গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেটের লিলি ফার্নিচার, লা-সানি ও অন্যান্য দোকানে কথা বলে জানা গেল, ফরমাশ করলে বেঞ্চ বানিয়ে দিতে পারে তারা। বেঞ্চের আকার, নকশা, পুরুত্ব ও উপকরণের ভিত্তিতে খরচটা কমবেশি হবে। তবু একটা ধারণা নেওয়া যাক, সাদামাটা নকশার বেঞ্চ বানাতে কেমন খরচ পড়তে পারে। তিনজন বসার উপযোগী বেঞ্চ বানাতে ১২ হাজার-১৬ হাজার টাকা, যার পায়া কাঠের, বসার জায়গাটা কাঠ বা প্রক্রিয়াজাত কাঠের তৈরি। একজনের উপযোগী এ ধরনের বেঞ্চ বানাতে ৬ হাজার-৭ হাজার টাকা পড়বে। প্রক্রিয়াজাত কাঠে খরচ একটু কম। কাঠ আর প্রক্রিয়াজাত কাঠ যদি থাকে একই বেঞ্চে, তাহলে রং মিলিয়ে কাঠ বা প্রক্রিয়াজাত কাঠ (বোর্ড) বাছাই করার একটা বিষয় থাকে। পুরোটাই প্রক্রিয়াজাত কাঠ দিয়ে করা হলে তিনজনের উপযোগী বেঞ্চ ৬ হাজার-৭ হাজার টাকা, একজনের উপযোগী বেঞ্চ ৩ হাজার টাকা।

ফরমাশ দিয়ে একটু কম খরচে বেঞ্চ বানাতে পারেন মধ্যবাড্ডা থেকে। কাঠুরী ফার্নিচার, শিকদার ফার্নিচার, নিউ দেশ ফার্নিচার ও অন্যান্য দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। কাঠের মানের ওপরে খরচটা নির্ভর করে। কাঠ দিয়ে তিনজনের বেঞ্চ বানাতে ১ হাজার-৭ হাজার টাকা, একজনের বেঞ্চ বানাতে ১ হাজার-৬ হাজার টাকা পড়বে। প্রক্রিয়াজাত কাঠ দিয়ে তিনজনের জন্য ৫ হাজার-৫ হাজার ৫০০ টাকা, একজনের জন্য ৪ হাজার-৪ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। তিনজনের জন্য মেটাল শিট দিয়ে বেঞ্চ বানালে ৩ হাজার-৪ হাজার টাকা লাগবে, একজনের হলে লাগবে ২ হাজার-৩ হাজার টাকা। কাস্ট আয়রনের বেঞ্চ বানাতে খরচটা বেড়ে যাবে। তিনজনের বেঞ্চ তৈরিতে ১৪ হাজার-১৫ হাজার টাকা, একজনের হলেও ১৩ হাজার-১৪ হাজার টাকা। আসবাবের অন্যান্য দোকানেও খোঁজ নিতে পারেন।