স্ট্রোকের পর ব্যায়াম জরুরি

স্ট্রোক হলে সাধারণত শরীরের কোনো কোনো অংশের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রোগীরা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, দৈনন্দিন কাজকর্ম একা একা সম্পাদন করা কঠিন হয়। স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতের রোগীর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধপত্র যেমন জরুরি, তেমনি এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব রয়েছে।

কেন ব্যায়াম দরকারি

ব্যায়ামের ফলে পক্ষাঘাতের রোগীর অবস্থার কতটা উন্নতি হবে, তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যত দ্রুত ফিজিওথেরাপি শুরু করা যায়, ততই এর সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারেন। ফিজিওথেরাপি কার্যকরভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর পেশি কতটা দুর্বল হয়েছে, এটিও একটি বিষয়। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগী যদি নিজের নৈমিত্তিক কাজটুকু করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন, তাতেই অনেক লাভ। যদি ধীরে ধীরে অন্যান্য কাজ করার ক্ষমতাও ফিরে পান (যেমন লিখতে পারা), তাহলে তা আরও স্বস্তির। তবে শতভাগ সেরে ওঠা হয়তো সম্ভব নয়।

কারও কারও মুখ বেঁকে যায়, কথা বলতে ও খাবার খেতে অসুবিধা হয়, কেউ কেউ ঘুমের সময়ও চোখ পুরোপুরি বুজতে পারেন না—একেক রকম রোগীর জন্য একেক ধরনের ব্যায়াম আছে। তবে ফিজিওথেরাপির ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে।

করণীয়

চিকিৎসকের কাছ থেকে ফিজিওথেরাপি সম্পর্কে জেনে নিন। ফিজিওথেরাপি সেন্টারে বা হাসপাতালে থাকার সময় করানো যায় আবার বাড়িতে গিয়ে ফিজিওথেরাপি করানোর ব্যবস্থাও আছে। প্রাথমিকভাবে পেশাদার, অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য দরকার হলেও পরবর্তী সময়ে পরিবারের লোকজনকেই শিখে নিয়ে এ দায়িত্ব নিতে হবে। স্ট্রোকের রোগীর উন্নতি খুব ধীর। তাই মানসিক সমর্থন খুবই জরুরি। অনেক সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে স্ট্রোক হলে সঙ্গে সঙ্গে ফিজিওথেরাপি না দেওয়া ভালো, কখন শুরু করতে হবে, তা চিকিৎসকই বলে দেবেন।

ব্যায়াম না করলে কী হয়

ফিজিওথেরাপি না নেওয়া হলে রোগী পেশির শক্তি তেমন একটা ফিরে পান না। বিছানা থেকে উঠতে না পারা, হাঁটতে না পারা, নিজের দৈনন্দিন কাজ করতে না পারার কারণে রোগী মানসিক যন্ত্রণা ও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। খাদ্যনালি, জিব ইত্যাদি আক্রান্ত হলে নাকে নলের মাধ্যমে খাওয়াতে হয়। এটাও একটা বড় ঝক্কি। মুখমণ্ডলের পেশি দুর্বল হলে কথা জড়িয়ে আসে। চোখ বুজতে না পারলে চোখে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

সাধারণভাবে দুর্বল পেশি বা দুর্বল পাশটি রোগী কম ব্যবহার করতে চান। ফলে এই দুর্বল পেশির আকার ছোট হয়ে আসে, কুঁচকে যায় ও শক্ত হয়ে যায়। অবশ অংশে সংক্রমণ, ঘা বা বেড সোর, রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো জটিলতা হতে পারে।