মেঘ-পাহাড়ের দেশ মেঘালয়

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ দেশের বাইরে থেকে সারা বছর মেঘালয়ে পর্যটক ঘুরতে চান। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ দেশের বাইরে থেকে সারা বছর মেঘালয়ে পর্যটক ঘুরতে চান। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা

মনে হবে কোনো এক মেঘের দেশে এসেছেন। হাত বাড়ালেই মেঘ। প্রতি মুহূর্তে মেঘ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঠান্ডা হওয়া এসে আপনাকে ভিজিয়ে দেবে। যেন পুরো এলাকাকে মেঘে ঘিরে রেখেছে। প্রত্যেক পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজেও মেঘ। এ জন্য বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই রাজ্যের নাম রাখেন মেঘালয়।

এতক্ষণ যে কথা বললাম তা উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম অনিন্দ্য সুন্দর মেঘালয়ের। এই মেঘালয়কে নিয়ে অনেকে গান ও কবিতাও লিখেছেন। কেউ কেউ মেঘালয়কে রূপের রাজা বলে নাম দেন। এই রূপের রাজাকে দেখতে অন্যান্য দেশেরে পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ দল বেঁধে যাচ্ছে বেড়াতে।

পাহাড়, ঝরনা আর পাহাড়ি লেক মিলে শিলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা
পাহাড়, ঝরনা আর পাহাড়ি লেক মিলে শিলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা

মেঘালয়ের শিলংয়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৫ হাজার ৬ ফুট। পাহাড়, ঝরনা আর পাহাড়ি লেক মিলে শিলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। শুধু সৌন্দর্য নয়, মেঘালয় নামের মধ্যে রয়েছে মাহাত্ম্য। মেঘের আলয়, মানে মেঘের বসত যেখানটায়। পাহাড়ের কোলে মেঘের নিত্য খেলা আর জলপ্রপাতের গর্জনের সঙ্গে অপরূপ মেঘালয় ঘুরতে হবে সৌন্দর্য পিপাসু মন নিয়ে। এ ছাড়া খাসিয়া, গারো ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাপন এবং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য শিলংকে দিয়ে বাড়তি রূপ।

দিনটি ছিল ঈদুল আজহার ছুটি, ১১ আগস্ট। সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের কাজ করছি। এরই মধ্যে আমাদের চারজনের দলটি গরমে হাঁসফাঁস করছে। স্থলবন্দরের কাজ শেষে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। ৪০ মিনিটের মতো পথ এগোনোর পর সবার মাঝে স্বস্তি ফিরে এল। কারণ, স্থান আর আবহাওয়া ব্যাপক পরিবর্তন। ঠান্ডা হাওয়া আর মেঘ এসে আমাদের নিয়মিত ভিজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

১২ আগস্ট চেরাপুঞ্জি উদ্দেশ্য রওনা। শিলং শহর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে চেরাপুঞ্জি। ২৫ কিলোমিটার পথ এগোলেই প্রথমে চোখে পড়ল মকডক সেতু। সেতুর পাশে ডাউন সিং সায়েম ভিউ পয়েন্ট। এই পয়েন্টে বসে অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। পাহাড়গুলো যেন সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর মজমাই গুহা, নহখালিকাই ঝরনার ভিউ পয়েন্ট, সেভেন সিস্টার ঝরনার ভিউ পয়েন্টসহ চেরাপুঞ্জিতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থানে রয়েছে। চেরাপুঞ্জি অর্থ কমলালেবুর দ্বীপ। সেখানে কমলা ও পান-সুপারি চাষ হয় বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চেরাপুঞ্জি।

দেখে মনে হবে কোনো এক মেঘের দেশ। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা
দেখে মনে হবে কোনো এক মেঘের দেশ। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা

শিলং শহরে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে, উমিয়াম লেক, হেরিটেজ, ইউলিয়ামসন, ডন বস্কো জাদুঘর, বিমানবাহিনী জাদুঘর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, বিসপ অ্যান্ড ব্যাডন ঝরনার ভিউ পয়েন্ট, শিলং পিক, এলিফ্যান্ট ফলস বা হাতির ঝরনা। এ ছাড়া রয়েছে ক্লিন ভিলেজ, লিভিং রোড সেতু, ক্যারেংছড়ি ঝরনা, লাইট লুমগিরি, ডাবল ডেকার জীবন্ত শেকড়ের সেতু।

সিলেটের তামাবিল সীমান্ত থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে শিলং শহর। এই ৮৩ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা। ডাউকি ইমিগ্রেশন কার্যালয় সামনে থেকে ট্যাক্সি, চুমো ও ইনোভা গাড়ি পাওয়া যাবে। চুমো ও ইনোভা গাড়ির সরাসরি শিলং শহরে গেলে ভাড়া নেবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর ট্যাক্সি ভাড়া নেবে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তবে শিলং পৌঁছার আগে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানে রয়েছে। সেই সব দর্শনীয় স্থানের দেখলে এক হাজার টাকা বাড়তি দিতে হবে। ট্যাক্সি গাড়িগুলোতে চারজন বসানো যায়। আর চুমো ও ইনোভা গাড়ি গুলোত সাতজন। শিলংয়ের আবাসিক হোটেলগুলোতে তিনজনের বেড দুই হাজার ২০০ থেকে ছয় হাজার টাকা, দুজনের বেড এক হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও একজনের বেড ৭০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে পর্যটক নিভা মারাক ও রাঙামাটির নিপুণ চাকমা বলেন, মেঘালয়ে পুরো রাজ্যটা অপরূপ সুন্দর। পাহাড়, জলপ্রপাত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন মেঘালয়কে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এই প্রথম মেঘালয়ে বেড়াতে এসেছি খুব ভালো লাগছে।

সেভেন সিস্টার ঝরনার ভিউ পয়েন্টসহ চেরাপুঞ্জিতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থানে রয়েছে। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা
সেভেন সিস্টার ঝরনার ভিউ পয়েন্টসহ চেরাপুঞ্জিতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থানে রয়েছে। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা

শিলংয়ের গাড়ি চালক শান্তনু দে বলেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ দেশের বাইরে থেকে সারা বছর মেঘালয়ে পর্যটক থাকেন। বিভিন্ন ছুটি ও শীত মৌসুমে একটু বেশি পর্যটক বেড়াতে আসেন। এ সময় আমাদের হাজারো গাড়ি সংকুলান হয় না।

সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের কর্মরত এস আই রুমি বললেন, বাংলাদেশ থেকে এবার ঈদে রেকর্ড সংখ্যক শিলংয়ে পর্যটক গেছেন। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার পর্যটক আসা-যাওয়া করেছে। ইমিগ্রেশনে টানা ১০ দিন ধরে ভিড় ছিল।