পুরির পেটে টাকি

ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি কয়েকবার ঘুরেফিরে নিউজফিডে এল। ছবিতে লেখা একটি শব্দে চোখ আটকে যায়, ‘টাকি মাছের পুরি’! টাকি মাছের ভর্তা অথবা পেঁয়াজ দিয়ে ভুনা করে খাওয়ার কথাই জানা ছিল। কিন্তু এখন দেখছি পুরির পেটেও টাকি ঢুকেছে। ‘বিয়িং ফুডি’ নামের এক ফুড ব্লগারের পোস্ট করা সেই ছবি দেখে এই অভিনব পুরির খোঁজ মিলল রাজধানীর ওয়ারীতে।

৮ নম্বর জোড়পুল লেন, টিপু সুলতান রোড, ওয়ারী। এই ঠিকানায় গিয়ে খান হোটেল কোন দিকে জিজ্ঞেস করতেই একজন বলল, আরেকটু সামনে গেলেই পাবেন। টাকি পুরির দোকানের নাম খান হোটেল, জানা ছিল। দোকানটা ঠিক পাড়ার ছোটখাটো ভাতের হোটেল। ঘড়িতে তখনো পাঁচটা বাজেনি। তবে বিকেলের নাশতার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। একজন পুরি বেলছেন, আরেকজন ভাজছেন।

দোকানমালিকের খোঁজ করলে কর্মচারীরা ফোন করেন মালিক বিল্লাল হোসেনকে। মধ্যবয়সী এই ব্যক্তি এসে জানান টাকি পুরির আদ্যোপান্ত। তাঁর হোটেলটির বয়স প্রায় ৬০ বছর। বাবার হাত ধরে শুরু। বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘একদিন আমার বাসায়ই টাকি মাছের ভর্তা খাওয়ার সময় মনে হইল, এইটা দিয়া পুরি বানাইলে কেমন হয়। ভর্তা থেকে একটু নিয়ে নিজের বাসায়ই টাকি পুরি বানাই। ভালোই লাগে। মনে হইল দোকানেও শুরু করা যায়।’

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে টাকি মাছের পুরি বানাচ্ছে খান হোটেল। পুরির রেসিপিও দিলেন বিল্লাল হোসেন। মাছের ভর্তাটা নিজের বাসাতেই বানিয়ে ভর্তায় গরমমসলা মেশানো হয়। দোকানে এনে টাকি মাছের ভর্তার সঙ্গে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, ধনেপাতা, শুকনা মরিচের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় পুরির পুর।

বিকেল পাঁচটার আগেই টাকি মাছের পুরি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় খান হোটেলে।  প্রথম আলো
বিকেল পাঁচটার আগেই টাকি মাছের পুরি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় খান হোটেলে। প্রথম আলো

বিল্লাল হোসেন জানান, শীতে এই পুরি খেতে বেশি স্বাদ। তখন মাছ বেশি পাওয়া যায় বলে পুরে মাছের পরিমাণ বেশি থাকে। শীতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ কেজি টাকি মাছের পুরি তৈরি হয়, অন্য সময়ে ৭ থেকে ৮ কেজি। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এই পুরি পাওয়া যাবে। প্রতিটি টাকি মাছের পুরির দাম ১০ টাকা। পুরির সঙ্গে দেওয়া হয় মজার চাটনি। শর্ষেবাটা, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা আর টক দই দিয়ে বানানো চাটনি টাকি মাছের পুরির সঙ্গে মাখিয়ে খেতে হয়। বেশ যে লাগে, তা বোঝা গেল রেস্তোরাঁয় খেতে আসা মানুষজনের তৃপ্ত মুখ দেখে।