জলে ত্বক তাজা

পানি পানে ত্বক থাকবে ভালো। মডেল: নুসরাত ফারিয়া, ছবি: নকশা
পানি পানে ত্বক থাকবে ভালো। মডেল: নুসরাত ফারিয়া, ছবি: নকশা

‘ত্বক যেমন তেমন। মেকআপ করে ঢেকে ফেলা যাবে।’ খুব ভুল একটি ধারণা! একবার এক আড্ডায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া বলছিলেন, ‘আমি প্রচুর পানি পান করি। এই দেখুন আমার ত্বকে কোনো সমস্যা নেই। খুব সুস্থ থাকি।’ পানি পান করা যে এই অভিনেত্রীর রূপের রহস্য, তা অবলীলায় স্বীকার করলেন। সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। আর্দ্রতা বজায় থাকলে মেকআপটাও সুন্দর করে বসে।

হারমনি স্পার রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বললেন, ‘ত্বকের কোষ ভালো রাখার জন্য পানি পান করা জরুরি। পানি পানে ঘামের সঙ্গে বর্জ্য বের হয়ে যায়। ত্বকেও অক্সিজেন চলাচল করে। এতে ত্বক আর্দ্র থাকে এবং মেকআপ খুব সুন্দর করে বসে যায়। শুষ্ক ত্বকে মেকআপ ভালো হয় না।’ পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান জানালেন, সঠিক পরিমাণে পানি পান না করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, আর্দ্রতা বজায় থাকে না। পরে ব্রণ ও বলিরেখা দেখা দেয়। পানি পান হচ্ছে এর প্রধান সমাধান। তিনি আরও বলেন, পানির মধ্যে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে, তা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

হঠাৎ করেই যদি কারও ত্বকের আর্দ্রতা লোপ পায় কিংবা যাঁদের বরাবরই শুষ্ক ত্বক, তাঁরা পানির সঙ্গে লেবুর রস ও পুদিনা পাতা মিশিয়ে পান করতে পারেন। এমন পরামর্শ দিলেন রাহিমা সুলতানা। তিনি জানালেন, তৈলাক্ত ত্বক হলেও বেশি করে পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে সময়ে সময়ে। ডায়েটের ক্ষেত্রে পানির ভূমিকা কম না। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি। জানান অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পানি পান করতে হবে সঠিক পরিমাণে। কম না, বেশিও না। অনেক সময় অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বের হতে না পারলে ওজন বৃদ্ধি পায়। ঋতু, শরীরের পানি শোষণ, ঘাম, কাজকর্ম, উচ্চতা এবং ওজনের ওপর নির্ভর করে পানি পান করতে হয়। এটি শুধু ডায়েটের ক্ষেত্রেই কাজে লাগে না। শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে।’ ইদানীং অনেকেই মুঠোফোনে পানি পান করার অ্যাপস ব্যবহার করে থাকেন। তবে এ ব্যাপারে তামান্না চৌধুরী সতর্কতা অবলম্বন করতে বললেন। অ্যাপস আপনার ওজন ও উচ্চতা জেনে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান করতে বলবে। কিন্তু আপনি কেমন আবহাওয়ায় আছেন, কতটুকু কাজ করেছেন, কেমন ঘাম ঝরেছে—এসব কিছু বলে দিচ্ছে না। অথচ এগুলোর ওপরও পানি পানের পরিমাণ নির্ভর করে। কম কিংবা অতিরিক্ত পানি পান দেহের ক্ষতি করে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও কাজের ধরন বুঝে অনেক চিকিৎসক সাধারণত প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করতে বলেন। তবু নিজেরটা বুঝে–শুনে, চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে পানি পান করলে ভালো।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক আফজালুল করিম বললেন, ‘মানবদেহ হচ্ছে যন্ত্রের মতো। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পানি পান করতে হবে। নইলে অকেজো হয়ে পড়বে।’ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় ও চর্মরোগগুলো দূরে রাখতে পানি পান করতেই হবে। কোনো না নেই। আফজালুল করিম জানান, মলমূত্র ত্যাগ ও ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। এর জন্য কমপক্ষে দিনে ৬০০ মিলিলিটার পানি পান করুন। ত্বকের আর্দ্রতাও বজায় থাকবে। তিনি এ ব্যাপারে আরেকটি ধারণা দিলেন। শুধু পানি খেলেই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা যাবে না। ত্বকের আর্দ্রতা নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপরও। তাই শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়াতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন তিনি। তৈলাক্ত ত্বক যাদের, তারা গরমের দিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে সেটা বোকামি হবে। তাই আফজালুল করিমের পরামর্শও একই, আবহাওয়া ও দৈহিক চাহিদা বুঝে পানি পান করতে হবে।