পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া

একটু ছুটি মিললে পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। মডেল: লাবন্য, নিধি, ছাইফুল ইসলাম ও রাহামা। ছবি: অধুনা
একটু ছুটি মিললে পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। মডেল: লাবন্য, নিধি, ছাইফুল ইসলাম ও রাহামা। ছবি: অধুনা

ব্যস্ত জীবন। এই সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিক রাখতে ‘কোয়ালিটি টাইম’–এর কোনো বিকল্প নেই। পরিবারের সব সদস্য মিলে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া হতে পারে সুন্দর সময় কাটানোর একটি উপায়। মানসিক প্রশান্তি তো আসেই। মন ভালো থাকে, আনন্দে থাকে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দৃঢ় হয় মানসিক বন্ধন, বাড়ে হৃদ্যতা। এমনটাই মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার।

যখন দূরে কোথাও আমরা ঘুরতে যাই, তখন কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে কাটানো হয় একান্ত দীর্ঘ কিছু সময়। ভাগাভাগি হয় নিজেদের সুখ–দুঃখের গল্পগুলো, যা সম্পর্কের বন্ধনকে মজবুত করতে সাহায্য করে। এদিকে যখন নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া হয়, তখন নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় পরিস্থিতির সামনাসামনি পড়তে হয়, যা আমাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। পাশাপাশি নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ, উচ্ছলতা, সম্পর্কে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।

পরিবার নিয়ে বেড়ানোর এই চল আমাদের জীবনযাপনের এক নতুন অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু যে বড় ছুটি পেলে মানুষ বেড়াতে যাচ্ছে তা–ই নয়, সাপ্তাহিক এক দিন বা দুই দিনের ছুটিতেও পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে সবাই। হঠাৎ করেই বাড়ির বাইরে ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার কারণ হচ্ছে, মেয়েরা এখন কাজ করছেন ঘরের বাইরে। আগে যেমন ছুটি পেলেই আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যেত সবাই। এখন যেহেতু স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবী, সে ক্ষেত্রে একটি দিনের ছুটিতে সবাই চান মানসিক প্রশান্তি। যে কারণে কারও বাসায় বেড়াতে যাওয়ার বদলে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। একটু ছুটি পেলেই এখন পরিবারের সবাই মিলে চলে যাচ্ছে কোনো প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান অথবা কোনো রিসোর্টে। ঘোরাঘুরির পাশাপাশি গান, আনন্দ, খেলাধুলায় মেতে উঠছে সবাই।

দৈনন্দিন নগরজীবনে কাজের চাপে সামাজিকতা রক্ষা করা বেশ কঠিনই বটে। এতে ঠুনকো হয়ে আসছে সম্পর্কের বন্ধন। মেখলা সরকারের মতে, পরিবারের সবাই মিলে এই বেড়াতে যাওয়ার মধ্য দিয়েই আরও দৃঢ় হবে সম্পর্কের গভীরতা। হয়তো দিনগুলো খুব অল্প; তারপরও প্রকৃতির সান্নিধ্যে দূরে কোথাও কয়েকটা দিন কাটিয়ে এলে সেই ভালো লাগার মুহূর্তের রেশ পরিবারের সবার মধ্যেই রয়ে যাবে অনেক দিন। বিশেষ করে যেসব শিশুর মা–বাবা দুজনই চাকরিজীবী, সেসব শিশুর কাছে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি যে কত আনন্দের, এটা শুধু তারাই জানে। ব্যস্ত মা–বাবার সঙ্গে নিভৃতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো কয়েকটি দিনের প্রভাব রয়ে যায় তার জীবনজুড়ে।

পাশাপাশি শিশুর জন্য এটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ব্যাপারও বটে। বেড়াতে যাওয়ার আগের যে প্রস্তুতি, তার মধ্য দিয়ে তারা দায়িত্ব নিতে শেখে। এই যেমন ব্যাগ গোছানো, সবকিছু ঠিকভাবে নেওয়া—এসব কাজ ছোটদের মধ্যে ভাগ করে দিলে তারা কাজ শেখার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। এদিকে ঘরের ভেতর একটানা থাকতে থাকতে যে বদ্ধ সময় কাটে, সেখান থেকে একটা ব্যতিক্রম ছোঁয়াও পায় তারা। বাইরে ঘুরে বেড়ানোর ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতেও সাহায্য করে। কারণ, শিশু যত নতুন জিনিস দেখবে, তত তার জানার পরিধি বাড়বে।