সরগরম শাঁখারীবাজার

ধুনচি
ধুনচি

আকাশের মুখটা তখন বেজার। টিপটিপে বৃষ্টিও সঙ্গী। ঢাকার শাঁখারীবাজারের সড়ক ধরে একটুখানি হাঁটতেই ছায়া যেন অন্ধকার হয়ে গেল। সড়কের দুই পাশে বাঁশের খুঁটি বাঁধা শেষ। ওপরে দেওয়া হচ্ছে ত্রিপলের ছাউনি। ২৮ সেপ্টেম্বরের সেই দিনটি ছিল শুভমহালয়া। শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু। কদিন পরই তো শুরু দুর্গাপূজার মূল উৎসব। শাঁখারীবাজারের সড়কজুড়ে মাচার ওপর বসে যাবে একটার পর একটা মণ্ডপ, সপরিবার দেবী দুর্গা।

কিনতে এসে পূজার অন্যতম অনুষঙ্গ জলশঙ্খ দেখছেন একজন ক্রেতা। ছবি: লেখক
কিনতে এসে পূজার অন্যতম অনুষঙ্গ জলশঙ্খ দেখছেন একজন ক্রেতা। ছবি: লেখক

আর এখন? পূজার অনুষঙ্গের কেনাকাটায় সরগরম শাঁখারীবাজার। এমনিতেই পুরান ঢাকার এই সড়কের ব্যস্ততা প্রতিদিনের। পূজার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই এখানে মেলে। আর সবই অথেনটিক। আদি সামগ্রী যেমন আছে, তেমনি এ সময়ের উপকরণে তৈরি সামগ্রীও রয়েছে। সস্তা থেকে দামি—সব পণ্যই পাওয়া যায় শাঁখারীবাজারের সার সার দোকানে। দুর্গাপূজার নানা আচার–উপচারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লাগে অনেক ধরনের পণ্য। প্রতিমার পূজা, ভোগ, ফুল সাজানো থেকে শুরু করে প্রতিমার শাড়ি–গয়না, অস্ত্রশস্ত্র—এসবের প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি শাঁখা–পলা, শঙ্খ এসবের বিক্রিও এ সময়টায় বেশি। সকাল ১০টা–১১টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত, কোনো কোনো দিন ভোর পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। পাইকারি ও খুচরা সব রকমের বেচাকেনায় শাঁখারীবাজার নিচ্ছে উৎসবের প্রস্তুতি, অন্যদেরও প্রস্তুত করে দিচ্ছে উৎসবের জন্য।


প্রতিমার সাজ
দেবী দুর্গা যেহেতু সপরিবার বাপের বাড়ি মানে মর্ত্যে আসেন, তাই পরিবারের সবার জন্যই পোশাক লাগে। প্রত্যেকের সাজ আবার ভিন্ন ভিন্ন। সাজের জন্য লাগে মুকুট, টোপর, হার, চূড়া, কানের দুল, নূপুর ইত্যাদি। সব মিলিয়ে সেট হিসেবে বিক্রি হয়। এক সেট গয়নার দাম ১৫০ টাকা থেকে শুরু। ২০ হাজার টাকা দামের গয়নাও রয়েছে। মা বাসন্তী ভান্ডারে দেখা গেল সমানে গয়না বানিয়ে চলেছেন দোকানের স্বত্বাধিকারী শংকর সরকারসহ তিন–চারজন। শংকর ৪০ বছর ধরে এই গয়না তৈরির কাজ করছেন। তিনি বললেন, ‘পাথর, পুঁতিসহ বিভিন্ন উপকরণ আসে ভারত থেকে। আমরা তৈরি করি এখানে।’


জমকালো পোশাক
প্রতিমার গায়ে পরানো হয় ঝলমলে রঙিন সব পোশাক। সেগুলো সিল্ক, ভেলভেট, সাটিন কাপড়ে তৈরি। নকশাও নানা রকম। ময়ূর, প্রদীপ নানা রকম নকশায় লাল, সবুজ, নীল, সোনালি–রুপালি রঙে শাড়ি ও অন্যান্য পোশাক প্রতিমার পরনে ওঠে। এগুলো গজ হিসেবে বিক্রি হয়। প্রতি গজ কাপড়ের দাম ১৫০ থেকে ৮০০ টাকা।


ভোগের থালা
ভোগ দেওয়ার জন্য কাঁসা বা পিতলের থালা, বাটি ও গ্লাসের প্রয়োজন। এগুলো ওজনদরে কিনতে হবে। পিতলের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং কাঁসার কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা।


পূজার অনুষঙ্গ
সব পূজাতেই নানা অনুষঙ্গ লাগে। দুর্গাপূজার উপকরণগুলো একটু বিশেষই হয়। কাঁসা বা পিতলের উপকরণ ব্যবহৃত হয় বেশি—বললেন নাগ ভান্ডারের প্রদীপ কুমার নাগ। তাঁর ভাই মিঠুন নাগ যোগ করলেন, ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়ামের উপকরণও আছে, তবে সেগুলো ঘরোয়া পূজার জন্য কেনেন অনেকে।

মোটামুটিভাবে যেসব উপকরণ লাগে, তার তালিকাও পাওয়া গেল নাগ ভান্ডার থেকে ঘট, ধুপচি (ধুনচি), পঞ্চপ্রদীপ, প্রদীপ, কাঁসর বা কাঁশি, ঘণ্টা, ডাব (কাঁসার), মঙ্গলঘট, ত্রিপতি, জলশঙ্খ, গাছা প্রদীপদান, পুষ্পথালা ইত্যাদি। এগুলোর দাম প্রতিটি ১৫০ থেকে ১ হাজার টাকা।

সহযোগিতা: জয়দেব সরকার