র্যাম্প মডেলদের ফিটনেস-রহস্য

ছবি: আবু নাসের
ছবি: আবু নাসের
>র‌্যাম্প মডেলদের কাছে ফিট থাকাটা তাঁদের পেশারই অংশ। নিজেদের সেভাবেই প্রস্তুত করেন তাঁরা। ফিট না থাকলে কেউ র‌্যাম্প মডেল হতে পারবেন না। এখনকার র‌্যাম্প মডেলরা জিমে যান, শরীর ভালো রাখার জন্য নানা নিয়ম মেনে চলেন। এটা তাঁদের ক্যারিয়ার বা পেশাগত চাহিদা থেকেই করেন। লিখেছেন মডেল ও কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ

র‌্যাম্প মডেলরা এমনিতেই অনেক প্রাণবন্ত থাকেন। ‘স্বতঃস্ফূর্ত, প্রাণবন্ত’ স্বভাবের কারণে তাঁদের অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়।

আমরা র‌্যাম্প মডেলরা কিন্তু জানি ফিট থাকাটা আমাদের কাজেরই একটা অংশ। একেকটা পেশার জন্য একেকভাবে প্রস্তুত হতে হয়। ফিট না থাকলে কেউ র‌্যাম্প মডেল হতে পারবেন না। একটা সময় হয়তো আমরা নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়ার করে ফিট থাকতাম। কেউ কেউ জিনগতভাবেই স্লিম ছিলেন। কিন্তু এখনকার যে প্রজন্ম, সে প্রজন্ম নিজেদের ফিট রাখার জন্য আরও অনেক কষ্ট করে। এখনকার র‌্যাম্প মডেলরা জিমে যান, শরীর ভালো রাখার জন্য নানা নিয়ম মেনে চলেন। এটা তাঁদের ক্যারিয়ার বা পেশাগত চাহিদা থেকেই তাঁরা করেন।

র‌্যাম্প মডেলদের ডায়েট
ডায়েট চার্ট আসলে একেকজনের একেক রকম হয়, র‌্যাম্পের মডেলদের বেলায়ও তা–ই। তবে সবাই পরিমিত খাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকেন। আমি যদি এই কথাটা সহজভাবে বলি, তাহলে বলতে হবে ‘সময়মতো, পরিমিত খাওয়া’। এ দুটি বিষয় যদি মেনে চলা যায়, তবে যে কেউ ভালো থাকতে পারবেন।

একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা যখন মহড়া করি, তখন সেটা টানা দুই–তিন ঘণ্টা ধরে করি। এখানে কিন্তু র‌্যাম্প মডেলদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। মহড়ার সময় কেউ বসেও থাকেন না। সেখান থেকে একজন মডেল যখন র‌্যাম্পে যান, তখন কিন্তু অনেক হাঁটতে হয় তাঁকে। বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকের মতো আয়োজনে ১০০ ফুটের বেশি দীর্ঘ মঞ্চ থাকে। সেখানে একটা মডেল কমপক্ষে ৮০০ থেকে হাজার ফুট হাঁটেন। শুধু শোয়ের সময়। মহড়ার কথা বাদই দিলাম। মহড়া আর শোয়ের দিনগুলোতে অনেক সময় ভারী খাওয়া হয়ে যায় মডেলদের। তবে মহড়া আর শোতে যে পরিশ্রম হয় তাতে প্রচুর ক্যালরি খরচ হয়।

ফ্যাশন শোতে হাই হিল পরতে হয়, এ জন্য র‌্যাম্প মডেলদের ফিট থাকতে হবে। ছবি: অধুনা
ফ্যাশন শোতে হাই হিল পরতে হয়, এ জন্য র‌্যাম্প মডেলদের ফিট থাকতে হবে। ছবি: অধুনা

ব্যায়াম
আমরা যখন মডেলিং করতাম, তখন খুব একটা জিমে যেতাম না। এখনকার মডেলরা জিমে যান। আমাদের সময় আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করার সুযোগ তেমন ছিল না। এখনকার মডেলরা অনেক কিছু অনুসরণ করেন। আন্তর্জাতিক মডেলদের সঙ্গে তুলনা করে দেখেন, তাঁরা কতটা ফিট। ফলে জিমে যাওয়া অনেক জরুরি হয়ে গেছে নিজেকে এই পেশায় টিকিয়ে রাখার জন্য। তাই যাঁরা ভালো করছেন বা ভালো করতে চান, তাঁরা সবাই নিয়মিত জিমে যান। জিমে যাওয়াটা এখন শুধু একটা অপশন নয়, এটা জীবনযাপনের অংশই হয়ে গেছে।

জিমে কত সময় থাকবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলাটা ভুল হবে। এটা একেকজনের শারীরিক গঠনের ওপর নির্ভর করে। জিমের বিভিন্ন ভাগ থাকে। কার্ডিও অনেকে ৪০ মিনিট ধরে করেন। তারপর স্ট্রেন্থ ট্রেনিংও হয়। এভাবে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা সময় দিলেই জিম করা হয়ে যায়।

ঘুম
শরীর ফিট রাখার জন্য ঘুমটা খুবই জরুরি। ওয়ার্ক আউট করলে ঘুম ভালো হয়। আর খাবার কম খেলে শরীর একটু হলেও দুর্বল হয়ে যায়। একজন র‌্যাম্প মডেলের জন্য দিনে আট ঘণ্টা ঘুম খুবই দরকার। এই সময়টুকু প্রতিদিন ঘুমাতে হবে, না হলে শরীর ঠিক থাকবে না।

অনেকেই মনে করেন তাঁরা শুধু শারীরিক পরিশ্রম করেন। আমি বলব, প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি মডেলরা মানসিক পরিশ্রমও করে থাকেন। সারা দিন পরিশ্রম করে আমি যদি ঠিকভাবে আট ঘণ্টা না ঘুমাই, তাহলে সুস্থ থাকতে পারব না। অসুস্থ হতে না চাইলে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার।

সৌন্দর্যচর্চা
র‌্যাম্প মডেলদের জন্য সৌন্দর্যচর্চা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, ত্বকের কথা। ত্বকের ওপর আমরা নিয়মিত মেকআপ করি। তাই ত্বক সুন্দর রাখার জন্য সচেতন থাকতে হয়। চুল সুন্দর রাখতে হয়, কারণ আমাদের নানা রকম হেয়ারস্টাইল করতে হয়।

দুটি বিষয় মেনে চলতে হবে—এক. জিম এবং দুই. খাওয়াদাওয়া। এই দুটি ঠিকমতো করলে আপনার ত্বক ও চুল আপনা–আপনি ভালো থাকবে। মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য মাসে একটা ফেসিয়াল করা। চুলের জন্য হেয়ার ট্রিটমেন্ট করতে পারেন।

উঁচু জুতা
ক্যাটওয়াক (র‌্যাম্পে হাঁটা) হিল ছাড়া ঠিকমতো হয় না। তবে এটাও ঠিক হাই হিল জুতা বা স্যান্ডেল পরে হাঁটা স্বাস্থ্যকর নয়। এ জন্য দেখবেন র‌্যাম্প মডেলরা শুধু মঞ্চে ওঠার সময় হাই হিল পরেন। অন্য সময় স্লিপার বা ফ্ল্যাট স্যান্ডেল–জুতা পরেন।

এমন পোজের আড়ালে আছে আজরা মাহমুদের ফিটনেস ধরে রাখার দীর্ঘ চর্চা। ছবি: রিয়াদ আশরাফ
এমন পোজের আড়ালে আছে আজরা মাহমুদের ফিটনেস ধরে রাখার দীর্ঘ চর্চা। ছবি: রিয়াদ আশরাফ

নতুনদের জন্য কিছু পরামর্শ
নতুনদের অনেক বেশি পরিশ্রম করে নিজেকে তৈরি করতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে পারিশ্রমিক বাড়ে। তো পরিশ্রম করার মনমানসিকতা যদি না থাকে, তাহলে র‌্যাম্প মডেলিংয়ে আসা উচিত নয়। অনেক পরিশ্রম করে একটা জায়গায় গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জেদ মনের মধ্যে থাকতে হবে। এই জেদ ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলেই র‌্যাম্পে আসা উচিত। দূর থেকে দেখে মডেলিং অনেক আনন্দময় মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে কষ্টকর।

ফ্যাশন মঞ্চ তারকা হওয়ার একটা সিঁড়ি, এ কথা অনেকে বলে থাকেন। আমি বলব, এটা দোষের কিছু নয়। এটা বিশ্বের সব দেশেই স্বীকৃত। ভারতের ক্যাটরিনা কাইফ, বিপাশা বসু তো র‌্যাম্প মডেলই ছিলেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনও একসময় মডেলিং করতেন। র‌্যাম্প থেকে অনেকে সিনেমায় যাবেন, কেউ নাটকে যাবেন, কেউবা নাচের সঙ্গে যুক্ত হবেন। এটা কোনো সমস্যা নয়।

মডেলিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাথায় বুদ্ধি থাকা। এরপর আসে শারীরিক সৌন্দর্য। মাথায় বুদ্ধি থাকলে মানুষ যেখানেই যাবে, নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে; এটা হলো প্রথম কথা। আর দ্বিতীয় হলো, নাচগানের সঙ্গে যুক্ত থাকলে র‌্যাম্প মডেলিংয়ে সুবিধা হয়। নাচের যে তাল-লয় থাকে, সে ধারণাটি একজন মডেলের জানা থাকলে ভালো।

এখন আমরা আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশন শো করি। আন্তর্জাতিক মানের র‌্যাম্প মডেলসহ সবকিছু আমাদের দেশে রয়েছে। আগে আমরা শুধু বিনোদনের জন্য ফ্যাশন শো করতাম। এখন আমরা প্রকৃত অর্থে ফ্যাশন শো বলতে যা বোঝায়, সে ধরনের আয়োজনেই কাজ করে থাকি। এখন ক্ষেত্র বড় হচ্ছে, প্রতিযোগিতা বাড়ছে—তাই নিজেকে প্রস্তুত করাটা জরুরি।

লেখক: মডেল, কোরিওগ্রাফার
অনুলিখিত