চিরকুটে ধন্যবাদ
স্কুলফেরত মেয়ের টিফিনবক্স খুলে মা খুব অবাক! একটুকরো কাগজে আঁকাবাঁকা অক্ষরে মেয়ে কিছু লিখেছে মাকে। ‘প্রতিদিন শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে পছন্দের খাবার বানিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ, মা’। ছোট্ট এই চিরকুট পেয়ে মায়ের কতখানি আনন্দ হয়েছিল, বলতে পারেন? এ রকম অকৃত্রিম আনন্দ ও ভালো লাগার বোধ তৈরি করতে পারে ‘ধন্যবাদ’ চিরকুট বা থ্যাঙ্ক ইউ নোট।
কোনো উৎসব–পার্বণ কিংবা নিতান্ত কোনো কারণ ছাড়াও মাঝেমধ্যে আমরা উপহার পেয়ে থাকি। অফিসে কিংবা কর্মক্ষেত্রে কখনো সহকর্মীর কাছ থেকে পাই বড় কোনো সহযোগিতা। বিপদ-আপদ অথবা জীবনের নানান জটিলতায় বন্ধুরা পাশে থাকে। বিভিন্ন সময় আমরা অন্যদের কাছে কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো ঘটনার সম্মুখীন হই। তখন ফিরতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে পাঠাতে পারি একটি ধন্যবাদ চিরকুট।
ধন্যবাদ জানাতে অনেকেই হয়তো মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমকে বেছে নিই। দায়সারা গোছের ধন্যবাদ দিয়েই কাজ সারি। এর পরিবর্তে সুযোগ থাকলে আমরা লিখতে পারি একটি ধন্যবাদ চিরকুট। কেউ কেউ অবশ্য স্টিকি নোটে লিখে ধন্যবাদ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি মনে করি, একটু ভিন্নতা আনা যেতে পারে। কেবল দায়বদ্ধতা থেকে ধন্যবাদ না জানিয়ে লিখতে পারেন ব্যক্তিগত ভালো লাগার কথা।
যতটুকু আনন্দ ও পরিতৃপ্তি আপনি পেয়েছেন, সে কথা মনে রেখে আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ করে লিখুন। নোটের লাইনগুলোই বলে দেবে আপনি কতটা আনন্দ পেয়েছেন। হৃদয় থেকে উৎসারিত ভালোবাসার শব্দগুচ্ছ অবশ্যই অন্যদের ছুঁয়ে যাবে। তাই যত্ন নিয়ে লিখুন কৃতজ্ঞতার চিঠি। ধন্যবাদ চিরকুট পাঠাতে হয় মূল ঘটনার পরপরই, মানে উপহার পাওয়া কিংবা কোনো উপকার পাওয়ার পর, যত দ্রুত সম্ভব ধন্যবাদ পাঠিয়ে দিন।
ধন্যবাদ চিরকুট লেখার জন্য আপনাকে প্রথমে কারণ ও ধরন খুঁজে নিতে হবে। যে শিক্ষক আপনাকে গণিত কিংবা বিজ্ঞান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করেছেন, তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর নোট নিশ্চয়ই বাল্যবন্ধুর জন্য লেখা নোটের চেয়ে ভিন্ন হবে। লিখতে পারেন A5 আকারের কাগজে। সর্বোচ্চ দুই পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন চিরকুটের পরিধি। যাকে লিখছেন, তার নামের বানান যেন ঠিক থাকে। পৃষ্ঠার উভয় দিকে লেখা পরিহার করুন।
আপনার পাওয়া উপহার, অনুষ্ঠান কিংবা উপকারটি কীভাবে আপনার কাজে এসেছে, সেটাও জানিয়ে দিন। চাকরির ইন্টারভিউর ফিরতি ধন্যবাদ চিরকুট যত দ্রুত সম্ভব পাঠানো উচিত। উষ্ণ কোনো আন্তরিক শব্দ ও বাক্যে বার্তা শেষ করুন। ইচ্ছা করলে ব্যবহার করতে পারেন কোনো চমৎকার হ্যান্ডমেইড পেপার। চিরকুটের সঙ্গে পাঠাতে পারেন ছোট্ট উপহারও।
প্রিন্সেস ডায়ানা যেকোনো অনুষ্ঠানের আগেই ধন্যবাদ চিরকুট লিখে রাখতেন, যাতে কখনো সেটা পাঠাতে দেরি না হয়। যদি অনুষ্ঠানের সময় কিংবা পরপরই আপনার কোথাও যাওয়ার থাকে, তাহলে আগেই চিরকুট পাঠিয়ে দিন। যার কাছে নোট পাঠাচ্ছেন, সে যদি যথাসময়ে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে কিছুদিন পর আরেকটি ধন্যবাদ চিরকুট পাঠাতে পারেন। দুটি নোট একসঙ্গে পাওয়ার আনন্দ নিশ্চয়ই দ্বিগুণ হবে!
প্রযুক্তির এই সময়ে প্রিয়জনদের কাছে এখন চিঠি লেখার সময় হয় না। সামাজিক মাধ্যম, ই–মেইল, মেসেজিং ইত্যাদি যোগাযোগকে অতি সহজ করে দিয়েছে। তাই কাগজ-কলম আর ফুল আঁকা চিঠি লেখার খাতা নিয়ে সাড়ম্বরে এখন আর বসাও হয় না। আবেগ প্রকাশের এই অনুষঙ্গ কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। একটি ধন্যবাদ চিরকুট আপনাকে সেই পুরোনো চিঠির ভালোবাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
ধন্যবাদ চিরকুট যেমন হতে পারে ব্যক্তিগত, তেমনি এটি হতে পারে সামাজিক ও দাপ্তরিক। মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-প্রিয়জন কিংবা অফিসের বস, দোকানের বিক্রয়কর্মী, প্রতিদিন সকালে দেখা হওয়া পত্রিকার হকার, যে কেউই পেতে পারে ধন্যবাদ চিরকুট। একটুকরো কাগজ বয়ে নিয়ে চলুক আপনার আন্তরিকতার বার্তা।