কতবেলে কত কী

>এখন সময় কতবেলের। শুধু ভর্তা আর জুসই নয়, কতবেল দিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক অনেক খাবার। রেসিপি দিয়েছেন ফাতিমা আজিজ

কতবেলের জুস

উপকরণ: কতবেল ২২৫ গ্রাম, পানি প্রয়োজনমতো, চিনি স্বাদমতো, লবণ সিকি চা-চামচের একটু বেশি, নারকেলের দুধ আধা কাপের বেশি ও বরফকুচি ইচ্ছেমতো।
প্রণালি: একটি বোলে কতবেলের পাল্প ও দেড় কাপ পানি নিয়ে একটি কাঁটাচামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মেশানো হলে ক্লিন পেপার দিয়ে ঢেকে ৮ ঘণ্টা রেফ্রিজারেটরে রাখুন অথবা সারা রাত রাখুন। পাল্প পানিতে ঢেলে থকথকে হলে স্ট্রেইনারে নিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে নেড়ে একটি পাত্রে ক্বাথ বের করুন। সিকি কাপ থেকে আধা কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে ক্বাথ স্ট্রেইনারে ছেঁকে বের করুন। কতবেলের বীজগুলো ছাড়া ছাড়া হলে সেই বীজগুলো ফেলে দিতে হবে। লবণ মিশিয়ে রাখুন।
একটি সসপ্যানে চিনি ও পানি মিশিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। চিনি মিশে একটু ঘন হলে চুলা বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। এবারে একটি জগে কতবেলের ক্বাথ ও চিনির শিরা দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। আধা কাপ নারকেলের দুধ মিশিয়ে নাড়ুন। পরিবেশনের আগে গ্লাসে ঢেলে প্রতিটি গ্লাসে ২ টেবিল চামচ করে নারকেলের দুধ ও বরফকুচি দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন। 

চিংড়ির পুরে কতবেল আলুর দম

উপকরণ: চিংড়িবাটা ১৩০ গ্রাম, গোলাকার আলু ৮টি, চিনাবাদাম ভাঙা ৪ টেবিল চামচ, কতবেলের ক্বাথ দেড় টেবিল চামচ, কোরানো কতবেল অর্ধেকটা, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, কিশমিশ ২ টেবিল চামচ, কাজুবাদামবাটা ২ টেবিল চামচ, ফেটানো টক দই ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ স্লাইস ১টি, টমেটোবাটা সিকি কাপ, লেমন জেস্ট সিকি চা-চামচ, সিরকায় ভেজানো শুকনা মরিচবাটা দেড় চা-চামচ, লবণ সিকি চা-চামচ, আদাবাটা দেড় চা–চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, সরিষার তেল ৪ টেবিল চামচ ও চিনি ১ চা-চামচ।
প্রণালি: আলু ছিলে ধুয়ে চামচ দিয়ে কুরিয়ে হাঁড়ির মতো গর্ত করে নিন। অর্ধেকের বেশি কোরানো আলু এক চিমটি লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। এই আলু তেলে ভেজে উঠিয়ে রাখুন।
প্যানে একটু সরিষার তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজকুচি ভেজে আধা চা-চামচ করে আদা ও রসুনবাটা, সিকি চা-চামচ লবণ ও মরিচবাটা দিয়ে কষিয়ে নিন। প্রয়োজনে সামান্য পানি দিয়ে কষাবেন। এবার কিছুটা কিশমিশ, চিনাবাদাম দিয়ে নেড়ে বেটে রাখা চিংড়ি মিশিয়ে রান্না করুন। কষানো হলে মাছের পেস্টকে ঝুরি ঝুরি করার জন্য ডাল ঘুঁটনি দিয়ে চেপে চেপে নিয়ে কুরিয়ে রাখা আলুর কিছুটা মিশিয়ে নাড়ুন। সামান্য লেমন জেস্ট দিয়ে নেড়ে নামিয়ে রাখুন। একটি বাটিতে উঠিয়ে রেখে ছড়িয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
ঠান্ডা হলে ভেজে রাখা গর্ত করা আলুর মধ্যে চিংড়ির মিশ্রণ ভরে ওপরে কোরানো কতবেল, লবণ ও সামান্য চিনি দিয়ে মেখে প্রতিটি আলুর মুখ গোল করে চেপে বন্ধ করে দিন। আবার অন্য একটি প্যানে ২ টেবিল চামচ সরিষার তেল গরম করে কয়েকটি গোটা চিংড়ি ২ মিনিট তেলে ভেজে উঠিয়ে রাখুন। এই একই তেলে পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে সিকি চা-চামচ করে চিনি ও লবণ দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ভেজে একে একে বাকি আদা ও রসুনবাটা, টমেটোবাটা, বাকি হলুদগুঁড়া, মরিচবাটা, কিশমিশ, কাজুবাটা ও ফেটানো টক দই দিন। ধনেপাতা দিয়ে নেড়ে কষিয়ে নিন। এবার লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে নেড়ে সামান্য লেমন জেলি দিয়ে নাড়ুন। চিংড়ির মিশ্রণ দিয়ে নেড়ে সিকি কাপ পানি ও পুরভরা আলু দিয়ে নেড়ে সাবধানে উল্টে দিয়ে মসলার সঙ্গে মিশিয়ে নিন।

কতবেলের ঝাল-মিষ্টি-টক আচার

উপকরণ: পাকা কতবেল (ভেতরে সাদা হবে) ৪টি, সিরকা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে বাটা সাদা সরিষা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, সিরকা দিয়ে পাঁচফোড়নবাটা ১ চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া সোয়া চা-চামচ, ভাজা পাঁচফোড়ন গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ভাজা শুকনা মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল দেড় কাপ, চিনি ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো, গোটা শুকনা মরিচ ৬টি, গোটা রসুন ৬টি, তেঁতুলের ক্বাথ ২ টেবিল চামচ, সিরকা ১ টেবিল চামচ ও ভাজা ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: কতবেল ভেঙে ছোট ছোট টুকরা করে নিন। কড়াইতে ১ কাপ সরিষার তেল গরম করে ভাজা ধনেগুঁড়া বাদে সব মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে কতবেল মিশিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। চিনি, লবণ, তেঁতুলের ক্বাথ ও সিরকা মিশিয়ে জ্বাল কমিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। কতবেল থেকে তেল ছাড়া শুরু করলে নামিয়ে নিন। অন্য একটি প্যানে বাকি সরিষার তেল গরম করে তাতে গোটা শুকনা মরিচ ও রসুনের কোয়া দিয়ে নেড়েই সঙ্গে সঙ্গে কতবেলের আচারের মিশ্রণে ঢেলে ভাজা ধনেগুঁড়া মিশিয়ে নেড়ে চুলা বন্ধ করে দিন। আচার দুদিন রোদে শুকিয়ে স্টেরিলাইজ করা কাচের বোতলে ভরে বায়ুরুদ্ধ করে ঢাকনা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে।

কতবেলের ভর্তা

উপকরণ: পাকা কতবেল ৪টি, লবণ ২ চা-চামচ, চিনি ৩ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৮টি, কালো গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, ধনেপাতাকুচি স্বাদমতো, সরিষার তেল ২ চামচ ও চাট মসলা ইচ্ছেমতো।
প্রণালি: কতবেল ভেঙে ভেতরের অংশ কুরিয়ে নিন। এবার হাত দিয়ে আলতোভাবে কিছুটা মেখে লবণ, চিনি, গোলমরিচের গুঁড়া, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতাকুচি মিশিয়ে নিন। এবার চাট মসলা দিয়ে মেখে সরিষার তেল দিয়ে মেখে পরিবেশন করুন। 

কতবেলের জেলি

উপকরণ: পাকা মাঝারি কতবেল (ভেতরে সাদাটে ভাব) ১০টি, পানি ৮ কাপ, চিনি ৫ কাপ, কাগজিলেবুর রস ২ চামচ, আগার আগার আধা চা–চামচ ও বোতল ২টি।
প্রণালি: কতবেলের ভেতরের অংশ বের করে ছুরি দিয়ে কেটে অর্ধেক টুকরা করে রাখুন। পানি দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে দুই ঘণ্টা জ্বাল দিন। কিন্তু ভুলেও নাড়া যাবে না। কতবেল সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে অর্ধেক হলে নামিয়ে নিন। একটি সাদা পাতলা সুতির কাপড়ে পানি নিংড়ে তা অন্য একটি হাঁড়ির ওপর কাপড়টি রেখে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করুন। মনে রাখবেন, কাপড়টি দুই ভাঁজ করে হাঁড়ির মুখে রাখতে হবে। এবারে মুখ বন্ধ হাঁড়ির কাপড়ের ওপর জ্বাল দেওয়া কতবেল ঢেলে দিন। কতবেল নাড়ানো যাবে না। আলতোভাবে কাপড় চিপে রস নিংড়ে নিন। এখান থেকে ১ টেবিল চামচ রস তুলে রাখুন। প্রতি কাপ রসের জন্য ১ কাপ করে চিনিসহ জ্বাল দিতে হবে। মাঝারি আঁচে ঘন ঘন নাড়ুন। চিনি গলে গেলে আলাদা করে রাখা কতবেলের রসটুকু আগার আগার গুলে মিশ্রণে দিয়ে নাড়ুন। ফেনা উঠলে লেবুর রস দিন। অন্যদিকে প্রথমেই জেলির জন্য রাখা বোতল ভালো করে ধুয়ে ফুটিয়ে শুকিয়ে নিন। জেলি জ্বাল দিয়ে ঘন হয়ে এলে বোতলে ঢেলে একটি সসপ্যানে বোতলের অর্ধেক পানি নিয়ে বোতলগুলো সারা রাত পানিতে রেখে ঠান্ডা হতে দিন। সকালে মুখ বায়ুরুদ্ধ করে বন্ধ করে দেবেন।