ভালো ঘুমের সহজ ৫ পদ্ধতি
ঘুমপাড়ানি গান কিংবা ঠাকুরমার ঝুলির গল্প শুনে ঘুমাতে যাওয়ার ইচ্ছা হয় কখনো? ব্যস্ত এই সময়ে সেই আশা কেবলই বিলাসিতা। রাত নিঝুম হয় না বলে ঘুমের বুড়ির দেখা মেলা কষ্টকর। একটু নিশ্চিন্ত শান্তির ঘুমের জন্য আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। তবু ঘুম কোথায় পালায় প্রতি রাতে, কে জানে! হারানো ঘুমের খোঁজ কেউ রাখুক বা না রাখুক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আপনার জন্য সহজে ঘুমিয়ে পড়ার ৫টি পদ্ধতি জানাচ্ছে অধুনা।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান
ছুটির দিন লম্বা সময় ঘুমিয়ে থাকতে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু এই ভালো লাগার বিষয়টি পরিহার করতে হবে। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে ঘুমাতে যান। নির্ধারিত সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। নিত্যদিনের অভ্যাস আপনার শারীরিক ঘড়িকে ঠিকঠাক সময়ে টিকটিক চলতে সাহায্য করবে। ঘুমানোর আগে কোনো ধরনের ভারী শারীরিক কসরত করবেন না। এতে শরীর উত্তপ্ত ও অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ঘুম সহজে আসতে চাইবে না আপনার কাছে।
শোবার ঘর শুধুই ঘুমানোর জন্য
যে ঘরে আপনি নিয়মিত ঘুমাতে যান, সে ঘরটিকে ঘুমানোর জন্যই বরাদ্দ রাখুন। শোবার ঘরকে বিনোদনের ঘর কিংবা টিভি রুম বানিয়ে না ফেলাই উত্তম। জানালায় ভারী পর্দা টানানো থাকলে সুবিধা হবে ঘুমাতে। চোখের ওপর কোনো কাপড় কিংবা আইশেড দিয়ে নিতে পারেন। পরিপূর্ণ অন্ধকার আপনার চোখকে প্রশান্তি দেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রী শোবার ঘর থেকে দূরে রাখা অপরিহার্য। তাই বিছানায় শুয়ে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে ব্যস্ত থাকা যাবে না। চুপচাপ শুয়ে থাকার ২৫–৩০ মিনিটের মধ্যে যদি ঘুম না আসে, তাহলে অন্য ঘরে অথবা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। সম্ভব হলে হালকা আলোতে কিছু পড়তে পারেন। একটু ঘুম ঘুম ভাব হলে আবার শোবার ঘরে ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এবার ঘুম আসবেই!
আগামীকালের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন
পরদিনের সকালটা সহজ করে নেওয়ার জন্য রাতেই কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন। এতে খুব বেশি চিন্তা নিয়ে ঘুমাতে যেতে হবে না। রাতের পোশাক পরতে পরতেই ঠিক করে রাখতে পারেন আগামী দিনের অফিসের জামা-জুতো। দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে গুছিয়ে ফেলুন অফিস ব্যাগ। এই ধরনের ছোট ছোট অভ্যাস আপনাকে কিছুটা স্বস্তি দেবে। রাতের সঙ্গে সকালের রুটিনের সংযোগ আপনাকে রাখবে কর্মচঞ্চল। এই স্বতঃস্ফূর্ততা সহজে ঘুমকে ডেকে আনবে আপনার আঙিনায়।
শান্ত শীতলতায় অবগাহন করুন
সারা দিন নানা ব্যস্ততা আর ছোটাছুটিতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আমাদের শরীরের ছন্দ থাকে তুঙ্গে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শান্ত করুন শরীর ও মনের গতিবেগ। ঘুমানোর ঘণ্টা দুয়েক আগে ঠান্ডা জলে গোসল করে নিতে পারেন। ঘুমানোর সময় পড়তে পারেন বই। যোগব্যায়ামও কাজে আসতে পারে। হালকা লয়ের মিউজিক কিংবা গান শুনতে পারেন। এগুলো আপনার শরীরের পেশিগুলোকে সহজ ও শান্ত করবে। সম্ভব হলে রাতের খোলা হাওয়ায় খানিকটা হেঁটেও আসতে পারেন।
দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো লিখে রাখুন
আমাদের কাজের দিনগুলোতে আমরা নানামুখী চাপের সম্মুখীন হই। ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক ঝামেলা থাকে। সবকিছু নিয়ে বাসায় ফিরে ঘুমাতে গেলে আমাদের ঘুম ব্যাহত হয়। তাই আপনার সমস্যা ও অপছন্দের ঘটনাগুলো লিখে রাখুন। সমাধানও ভেবে নিয়ে নোট রাখতে পারেন। পরদিন যাতে এমন ঝামেলা না হয়, সে বিষয়ে আগে থেকেই ডায়েরিতে সতর্কতামূলক নির্দেশনা নিয়ে নিন। নিয়মিত এই অভ্যাস আপনার ক্ষতিকর চিন্তা ও স্মৃতি থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে। সেই সঙ্গে রুটিন তৈরি হওয়ার ফলে স্বস্তিতে থাকবেন আপনি। তবে যদি লম্বা সময় ধরে ঘুমের সমস্যা হতে থাকে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ, দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের অসুখ আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।