বাইরে খেলি, পড়ে যাই আবার উঠে দাঁড়াই

সন্তান কোথায় খেলছে, কাদের সঙ্গে খেলছে সে সম্পর্কে অবগত থাকুন। ছবি: অধুনা
সন্তান কোথায় খেলছে, কাদের সঙ্গে খেলছে সে সম্পর্কে অবগত থাকুন। ছবি: অধুনা

প্রতিযোগিতার এই তুমুল সময়ে খেলার মতো একটা বিষয় অভিভাবকেরা সময় নষ্ট বলেই মনে করেন। কিন্তু শিশুর মানসিক বিকাশে দারুণভাবে সাহায্য করে।

খেলাধুলা আসলেই কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বা কীভাবে এটা সাহায্য করে শিশুকে তার মননশীলতাকে উৎকর্ষে নিয়ে যেতে?

সামাজিক ও সমস্যা সমাধানে দক্ষতা তৈরি

খেলার দলে বিভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা নানা মনোভাবের শিশুর সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ হয়। ভিন্ন মানসিক গঠনের মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়, কথোপকথন, মেলামেশা ও খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা শিশুকে সামাজিক করে তোলে। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানসিক গঠন সম্পর্কে একরকম ধারণা তৈরি হয়। এ ছাড়া খেলায় উদ্ভূত নানা সমস্যা (যেমন: নিয়ম ভঙ্গ, ঝগড়া–বিবাদ), মোকাবিলার মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই শিশুর সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে।

আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

আত্মবিশ্বাস মানে নিজের প্রতি আস্থা এবং নিজের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য জানা। একজন খেলোয়াড়ের নিজের কৌশল, দুর্বলতা এবং নৈপুণ্যের প্রতি ধারণা থাকে। পাশাপাশি খেলার মাধ্যমে অন্যদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা, বন্ধুত্ব তৈরি, খেলায় নিজের পারদর্শিতা দেখানোর সুযোগ, দলের কাছে আস্থা অর্জন একটি শিশুকে নানাভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

জীবনমুখী করা

খেলাধুলার মাধ্যমে তৈরি হওয়া আত্মবিশ্বাস শিশুর মধ্যে নানা কাজে উদ্দীপনা তৈরি করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থায় বেড়ে ওঠা অন্যান্য শিশু–কিশোরের সঙ্গে সম্পর্ক, তাদের সঙ্গে ভালো-মন্দ নানা অভিজ্ঞতা শৈশব থেকেই শিশুকে মানুষ ও জীবনসংশ্লিষ্ট করে তুলতে সাহায্য করে। খেলার কারণে নিজের দলের সদস্যদের প্রতি যে দায়িত্ববোধ ও সহযোগী মনোভাব তৈরি হয়, সেটি তাকে সামাজিক মানুষ হিসেবেও বেড়ে উঠতে সাহায্য করে এবং আত্মকেন্দ্রিক হতে বাধা দেয়।

চাপ নেওয়ার ক্ষমতা

খেলায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে অনেক সময় তীব্র স্নায়ুচাপের সম্মুখীন হতে হয়। হারব কি জিতব—এ মনোভাব যেমন উদ্বিগ্ন করে, তেমনি আমাদের পরিস্থিতি মোকাবিলার করার দক্ষতা ও মস্তিষ্কের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। খেলায় হেরে গেলে মন বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয় ঠিকই কিন্তু একই সঙ্গে ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়, যা পরবর্তী সময়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি বা ব্যর্থতা সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উদ্বিগ্নতা কমায়

খেলাধুলা মূলত শরীরচর্চার মতোই একটি বিষয়। নিয়মিত শরীরচর্চার মতো খেলাও যেমন সেরোটনিন, ডোপামিন ও অন্যান্য স্নায়ুরাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের মাধ্যমে মনের উদ্দীপনা বাড়াতে সাহায্য করে। সব সময় পড়ালেখার মতো চাপদায়ক বিষয় শিশুর মস্তিষ্ককে ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন করে, যা ধীরে ধীরে তার পড়ালেখার আগ্রহ কমিয়ে ফেলতে পারে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর যে আনন্দ হয়, সেটা তার চাপ কমাতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের ক্লান্তি কমায় এবং সৃজনশীল হতে সাহায্য করে।

খেলা নিয়ে অভিভাবকের আশঙ্কা বা ভুল ধারণা

বাইরে খেলার ব্যাপারে অভিভাবকদের কিছু নেতিবাচিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে, যেমন: এতে পড়ালেখার সময় নষ্ট হয়, অন্যদের সঙ্গে মিশে বখে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বা মাদকাসক্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে—

খেলাধুলার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খেলে বাসায় আসা নিশ্চিত করুন।

সন্তান কোথায় খেলছে, কাদের সঙ্গে খেলছে সে সম্পর্কে অবগত থাকুন।

সন্তানের খেলার সাথিদের জানার অন্যতম উপায় হলো তাদের মাঝেমধ্যে আপনার বাসায় আমন্ত্রণ জানান। তাদের সঙ্গে সন্তানের মেলামেশার ধরন দেখুন।

শেষ কথা

খেলার মাঠের অভিজ্ঞতাই আমরা বড় হয়ে জীবনমাঠে দেখি। খেলার হারজিতের চক্র আমরা বাস্তবজীবনেও দেখি। নিশ্চিত জিতে যাওয়া খেলায় বন্ধুর পেছন থেকে ‘ল্যাং’ মারার কারণে যেমন মাঝেমধ্যে পড়ে যাই, আবার পড়া থেকে উঠে দাঁড়াই; আমাদের জীবন–পরিক্রমাও
তেমনি। খেলা আমাদের জীবনবোধকে শাণিত করার জন্য, ভবিষ্যতের জীবনকে মোকাবিলা করার জন্য অনন্য। কাজেই আপনার শিশুকে খেলতে দিন। খেলার অধিকার
তার শিক্ষার অধিকারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।