জীবন বাঁচাতে সাঁতার

শিশুদের সাঁতার শেখানোর মধ্য দিয়ে পানিতে ডুবে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকেরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুইমিং কমপ্লেক্সে।  জুয়েল শীল
শিশুদের সাঁতার শেখানোর মধ্য দিয়ে পানিতে ডুবে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকেরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুইমিং কমপ্লেক্সে। জুয়েল শীল

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সেই হিসাবে প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় ১১ হাজার শিশু। পানি থেকে শিশুর জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি জরুরি সাঁতার শেখানো। সাঁতারই পারে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু ঠেকাতে। এ জন্য সাঁতার শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন সংশ্লিষ্ট লোকজন।

নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিআরবি) যৌথ গবেষণায় সাঁতার না জানায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান উঠে আসে। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই গবেষণা শেষ হবে ২০২০ সালের জুন মাসে। গত এপ্রিল মাসে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণার বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, প্রতি বছর পানিতে ডুবে যারা মারা যায় তাদের ৪০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে, যার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়েই ঝুঁকি বেশি ।

সংবাদ সম্মেলনে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের পরিচালক কেলি লারসন জানিয়েছিলেন, ৭টি উপজেলার ১ থেকে ৪ বছর বয়সী প্রায় ৭১ হাজার শিশুর ওপর জরিপ চালানো হয়। প্রতি বছর পানিতে ডুবে যে ১১ হাজার শিশু মারা যায়, তার মধ্যে এই বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি।

শিশুদের সাঁতার শেখানোর মধ্য দিয়ে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকেরা। সাঁতার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করার পাশাপাশি শরীর সতেজ রাখে।

জানতে চাইলে জাতীয় সাঁতারু এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সাঁতার কমিটির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, সাঁতারই পারে পানিতে ডুবে মৃত্যু ঠেকাতে। সাঁতার জানলে অন্তত ৫-১০ মিনিট ভেসে থাকতে পারবে। তখন তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এ জন্য সারা দেশে ৫ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখানোর আওতায় আনা দরকার।

দুই মাস আগে চট্টগ্রামে উদ্বোধন হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের একটা সুইমিং কমপ্লেক্স। নগরের কাজীর দেউড়িতে সিজেকেএসের ব্যবস্থাপনায় এই কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। এখানে সাঁতার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অন্যদের সাঁতার শেখার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে তা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল। এখানে এক মাস সাঁতার কাটার জন্য ৩ হাজার টাকা ফি।

সাঁতার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করার পাশাপাশি শরীর সতেজ রাখে।  প্রথম আলো
সাঁতার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করার পাশাপাশি শরীর সতেজ রাখে। প্রথম আলো

এ ছাড়া নগরের আগ্রাবাদ হোটেলের সুইমিংপুলেও সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। সেটাও ব্যয়বহুল। সপ্তাহে দুই-তিন দিন করে এই সাঁতার শেখানো হয়। নগরের জাতিসংঘ পার্কে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি সুইমিংপুল রয়েছে। কিন্তু এই পুলটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। তবে জীবন বাঁচাতে সরকারি–বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সাঁতারু মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, নগরের শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য নগরের বিভিন্ন পুকুর ও দিঘিগুলোকে কাজে লাগানো যায়। এ ছাড়া গ্রামেগঞ্জে সাঁতার শেখানোর জন্য পুকুরের অভাব নেই।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সাঁতার শেখার জন্য কিংবা সাঁতারু হতে হলে সুইমিংপুল আবশ্যক নয়। যেকোনো পুকুর কিংবা দিঘিতে সাঁতার অনুশীলন করা যায়। বর্তমানে দেশের দুই সেরা সাঁতারুর বাড়ি কুষ্টিয়া অঞ্চলে। তাঁরা হলেন দক্ষিণ এশিয়া গেমসে সাঁতারের সোনাজয়ী মাহফুজা খাতুন ও পুরুষ বিভাগে ব্রোঞ্জজয়ী মাহফুজুর রহমান। কিন্তু সেখানে কোনো ভালো সুইমিংপুল নেই।

জানতে চাইলে মাহফুজা খাতুন বলেন, জীবন রক্ষার জন্য সাঁতার জরুরি। শিশুদের বড় একটি অংশ মারা যায় পানিতে ডুবে। এ জন্য পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থাৎ বিদ্যালয়গুলোকেও সচেতন হতে হবে।

এখন উপজেলাভিত্তিক সুইমিংপুল করার চিন্তাভাবনাও চলছে। আর পুকুর তো রয়েছেই। তাই ইচ্ছা থাকলে এবং সচেতন হলেই এটা সম্ভব হবে।