শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে করণীয়

শিশুর শারীিরক ও মানসিক বিকাশের বাইরে খেলাধুলা জরুরি। ছবি: অধুনা
শিশুর শারীিরক ও মানসিক বিকাশের বাইরে খেলাধুলা জরুরি। ছবি: অধুনা

শিশুর বিকাশ নিয়ে মা–বাবারা এখন বেশ সচেতন। কী করলে আরও সফলভাবে সেটি করা সম্ভব, তাঁরা তা অনলাইনে–পত্রিকায় তথ্য সংগ্রহ করেন। বই কেনেন। নিজেরা জেনেবুঝে সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিশুকে নিয়ে যান। প্রথমে বলা রাখা ভালো, বড় কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেমন দরকার কঠোর পরিশ্রম এবং অসীম ধৈর্য ঠিক তেমনভাবে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য মা–বাবাকে হতে হবে যত্নবান। একই সঙ্গে আদরও করতে হবে। আবার কিছু নিয়ম–কানুন মেেন চলার অভ্যাস করতে হবে। অনেক সময় শিশুরা দুষ্টুমি করে, আমরা না বুঝে তাদের ভয় দেখাই, শাস্তি দিই। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস কমে যায়। শিশুর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তার কথার গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি শিশুর ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হবে। 

এবার কিছু টিপস দিই 

* মা–বাবার জীবনে সন্তান অমূল্য সম্পদ এবং সন্তান পেয়ে যে তাদের জীবন ধন্য হয়েছে, এটা তাকে বোঝাতে হবে।

*সন্তান শিশু হলেও সে যে একজন পরিপূর্ণ মানুষ, এই সন্মান তাকে করলে তার ভেতর আত্মসম্মান বোধ জাগ্রত হবে।

* সন্তানের কাজের প্রশংসা করতে হবে, তার কাজের সমালোচনা না করে কীভাবে করলে কাজটা সুন্দর হবে তা নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

* সন্তানের প্রতিটি মতামত গুরুত্বসহকারে শুনতে হবে। সন্তানের সঙ্গে তার ভালো লাগা, খারাপ লাগা বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললে তার ভেতরে চিন্তা করার দক্ষতা তৈরি হবে। 

* সন্তান যে জিনিসগুলো ব্যবহার করে, সেটা তার পছন্দ অনুযায়ীই যদি কেনা সম্ভব হয়, তবে সন্তানের মতামত প্রদানের অভ্যাস গঠন হবে। তার বিছানায় চাদর, পড়ার টেবিল, কোন পোশাক পরবে, সেসবের ব্যাপারে তার পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।

* আমরা অনেকেই শিশুকে মেঝেতে নামতে দিই না। খেলনা দিয়ে খেলতে দেই না। আমাদের ভয় থাকে সন্তান পড়ে যেতে পারে বা আঘাত পেতে পারে। কিন্তু শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য তারা হাঁটবে, খেলবে—এ জন্য সন্তানকে নিয়ে মা–বাবার ভয় পেলে চলবে না। তাকে তার মতো থাকতে দিতে হবে। 

* অনেক সময় মা–বাবা সন্তানের সব কাজ করে দেন। এটা করা ঠিক নয়। এতে করে সন্তান দায়িত্ব নিতে শেখে না। দায়িত্ব নিতে ভয় পায়। বাচ্চাকে আমাদের ছোট ছোট দায়িত্ব দিতে হবে। যেমন হতে পরে সন্তান খাওয়ার পরে তার প্লেটটা সে নিজেই পরিষ্কার করবে। পরিষ্কার করে যথাযথ স্থানে রাখা। স্কুল থেকে বাসায় আসার পরে স্কুল ড্রেস, জুতা–মোজা নিজেই খুলে রাখবে। ঘুমানো সময় তার নিজের বিছনা নিয়েই পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে কোনো শিশুরা যদি এগুলো না করে, তাহলে তাকে বকা দেওয়া যাবে না। সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে নিজের কাজ নিজেই করা উচিত। নিজের কাজ করা কোনো খারাপ কিছু নয়।

* শিশুরা যদি ইচ্ছে করে কিছু করতে চায়, সেটা আমরা তাদের জন্য ক্ষতিকর না হলে নিষেধ করব না। আমরা তাদেরকে সাহস দেব। তার কাজে সহযোগিতা করব এবং তাকে উৎসাহ দেব। 

* অনেক সময় শিশুরা নিজের দামি একটা খেলনা ভেঙে ফেললে আমরা তাকে বকা দিই। বাচ্চারা কোনো কিছু ভেঙে বা নষ্ট করে ফেললে তারই কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। ওকে তখন আমরা বলব যে তোমার খেলনাটা ভেঙে গেছে, তাই তোমার অনেক মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা সতর্ক থাকব যেন খেলার সময় খেলনাটা না ভেঙে যায়।

* সন্তানের সঙ্গে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে সেটা পালন করা উচিত। একই সঙ্গে সন্তানকে ভালো কিছু করার জন্য পুরস্কার দিতে হবে। ধরুন, আপনার সন্তানকে সপ্তাহের শুরুতে বললেন যে তুমি যদি পাঁচ দিন স্কুলে যাও, তাহলে শুক্রবার তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাব। সে যদি ঠিকভাবে পাঁচ দিন স্কুলে যায়, তাহলে অবশ্যই তাকে শুক্রবার ঘুরতে নিয়ে যাওয়া উচিত। আর সে যদি চার দিন গেল, এক দিন গেল না, তখন কিন্তু তাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। যখন সে পাঁচ দিন ঠিকভাবে স্কুলে যাবে, তাহলে আমরা তাকে সপ্তাহ শেষেই পছন্দের কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাব। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর যদি আমরা ঘুরতে না নিই, তাহলে তার মন ভেঙে যাবে। সন্তানকে কোনো কথা দিলে সে কথা রাখতে হবে। এতে সন্তানও শিখবে কথা দিয়ে কথা রাখতে হয়।

* খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলামে আগ্রহী করতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে।

* পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

লেখক: সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।