হৃদ্বান্ধব খাবারদাবার

একান–ওকান হতে হতে অনেকেই জানেন, কিছু কিছু খাবার আছে, যা কিনা মরণব্যাধি হৃদ্​রোগের অন্যতম কারণ। সমীকরণ সোজা হয়ে গেল; কিছু কিছু খাবার যদি আমরা আমাদের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে পারি কিংবা নিদেনপক্ষে কমিয়ে আনতে পারি, তবে হৃদ্​রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে পারি। আর প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় কিছু খাদ্যের সংযোজন হৃদ্​রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিপত্র তেমনটা প্রমাণ করেছে। আসুন, এ বিষয়টিকে আমরা আটটি ধাপে করার চেষ্টা করি। 

ধাপ-১ 

কতটুকু খাবার খাবেন, খেতে বসে প্রথমেই ঠিক করবেন। বুদ্ধিমানেরা শুরুতেই ছোট প্লেট সামনে টেনে খাবার টেবিলে বসেন। খাবার খাওয়ার সময় একটা বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা খুব জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে আপনার খাবারের সিংহভাগটাই যেন আসে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার থেকে আর ছোট অংশটা যেন আসে উঁচু ক্যালরির খাদ্য থেকে। 

ধাপ-২ 

শাকসবজি ও ফলমূল হচ্ছে কম ক্যালরিযুক্ত কিন্তু খাদ্যপ্রাণ ও প্রয়োজনীয় খনিজে ভরপুর। এতে প্রচুর আঁশ থাকায় এগুলো হৃদ্​রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যেমন কমায়, অন্যদিকে মলদ্বারে ক্যানসারের প্রকোপও হ্রাস করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আপনার সারা দিনের খাদ্যতালিকায় আধা কেজি শাকসবজি ও ফলমূল আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে হৃদ্​রোগের ভয়াল ছোবল থেকে। শাকসবজি ও ফলমূল সব সময় তাজাই খেতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফ্রিজে রাখলেও চলবে। 

ধাপ-৩ 

খাদ্যে আস্ত শস্যদানা লাল আটা, লাল চাল, ওট, বাদামি পাউরুটিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। যথাসাধ্য এড়িয়ে চলতে হবে সাদা আটা, সাদা পাউরুটি, ডোনাট, বিস্কুট, কেক, নুডলস, মাখনযুক্ত পপকর্ন। 

ধাপ-৪ 

নানা গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের পর স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা রোজকার খাবারের মোট ক্যালরির ৫-৬ শতাংশ কেবল চর্বি থেকে সংগ্রহ করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এর মানে আপনার দৈনিক চাহিদা যদি হয় ২০০ ক্যালরি, তাহলে স্যাচুরেটেড চর্বি খেতে পারবেন দৈনিক ১১ থেকে ১৩ গ্রাম পর্যন্ত। প্রাণিজ চর্বি যেমন গরু, খাসি ইত্যাদি পরিত্যাজ্য। মাখন, মার্জারিন না খাওয়াই শ্রেয়। খুব ভালো হয় জলপাই বা ক্যানোলা তেল খেতে পারলে। কারণ, এর মধ্যে যে চর্বি বিদ্যমান তা হলো হৃদ্​বান্ধব মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। 

বাদাম, বিচি–জাতীয় খাবার এবং মাছে আছে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। তিসির তেলে আছে অফুরান হৃদ্​বান্ধব ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। সরিষা আর ক্যানোলা একই বর্গের তরু। খাদ্যে নারকেল, কোকোয়া বাটার, তুলা বীজ ও পাম অয়েল বাদ দিতে পারলে ভালো হয়।

ধাপ-৫ 

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কম চর্বিযুক্ত আমিষ রাখুন। এ পর্যায়ে সর ছাড়া দুধ, দই, কম চর্বির দুধ ও পনির রাখতে পারেন। রাখতে পারেন ঠান্ডা পানির মাছ, সেদ্ধ ডিম, চামড়া ছাড়ানো মুরগি, বিচি–জাতীয় খাবার, সয়াবিন এবং সয়া-জাত খাদ্য। কমিয়ে খেতে চেষ্টা করুন সরসহ দুধ, মিষ্টান্ন, প্রাণীর যকৃৎ, প্লীহা, বৃক্ক, হাড়ের মজ্জা ইত্যাদি। হটডগ, সসেজ, বেকন, কাবাব, ফাস্ট ফুড বর্জন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। 

ধাপ-৬ 

লবণ খাওয়া কমিয়ে আনুন। রক্তচাপ বৃদ্ধিসহ শরীরের আরও অনেক সমস্যার উদ্রেককারী লবণ। খাদ্য মজাদার করার জন্য প্রয়োজনে মসলা বাড়িয়ে দিন। পাতে কোনোমতেই লবণ খাওয়া যাবে না। তরকারিতে বেশি লবণ মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। মনে রাখতে হবে, আপনার জন্য বরাদ্দকৃত লবণের পরিমাণ ২৪ ঘণ্টায় ১ চা–চামচের কম। 

ধাপ-৭ 

প্রতিদিন একই খাবার কারই–বা ভালো লাগে! তাই আপনার খাদ্যতালিকা থেকে সপ্তাহের মেনু আগেভাগেই প্রণয়ন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে খাবারের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

ধাপ-৮ 

যথারীতি নিয়ম মেনে খাবার খান—খুবই ভালো কথা। তবে মাঝেমধ্যে অনিয়ম খুব একটা ক্ষতির কারণ হবে না। তবে মনে রাখতে হবে, এটা কেবলই মাঝেমধ্যের ব্যাপার। এ অনিয়ম যেন প্রাত্যহিক অভ্যাস হয়ে না দাঁড়ায়।

অধ্যাপক হারিসুল হক 

হেড, হার্ট ফেইলিওর রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা