তাঁত ও কারুশিল্পের জমকালো আয়োজন

ফ্যাশন শোতে ছিল বিয়ে নিয়ে আয়োজন। ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাশন শোতে ছিল বিয়ে নিয়ে আয়োজন। ছবি: সংগৃহীত

বিয়েতে দেশীয় পণ্যের নানা আয়োজন দিয়ে শেষ হলো দ্বিতীয়বারের মতো হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভ্যাল–২০১৯। উৎসবের শেষ দিন বাঙালি বিয়ের আট ধরনের অনুষ্ঠান নিয়ে হয় বিশেষ ফ্যাশন শো। বিয়ের সব অনুষ্ঠানে বর-বধূ দেশীয় পোশাকে কীভাবে নিজেদের তুলে ধরবেন, তাই দেখানো হয়েছে ফ্যাশন শোতে।

তাঁত ও দেশীয় পণ্যের ব্যবহার, প্রদর্শন ও পণ্যের প্রচারে জন্য ‘দেশি ভালোবাসি’ এই প্রতিপাদ্যে ২৩ অক্টোবর শুরু হয়েছিল এই উৎসব। এতে চার দিন ধরে চলে তাঁত ও কারুপণ্যের মেলা। রাজধানীর গুলশানের গার্ডেনিয়া গ্র্যান্ড হলে অনুষ্ঠিত এই উৎসব যৌথভাবে আয়োজন করেছিল এসএমই ফাউন্ডেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স অব বাংলাদেশ (এএফডিবি)। মেলাটি প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত জন্য উন্মুক্ত ছিল সবার জন্য।

মেলায় ছিল ৪৫টি স্টল। স্টলগুলোতে প্রদর্শিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত ও কারুপণ্য। ছিল নকশিকাঁথা, বেনারসি, টাঙ্গাইল শাড়ি, জামদানি শাড়ি, রাজশাহী সিল্ক, খাদি, শতরঞ্জি, পটচিত্র, পাটজাত পণ্য, রিকশাচিত্র, লুঙ্গি, গামছা এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার তৈরি কাপড়, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য।

উৎসবে পোশাকের প্রদর্শনীও ছিল
উৎসবে পোশাকের প্রদর্শনীও ছিল

শেষ দিনের ফ্যাশন শোতে পানচিনি ও হলুদের পোশাকগুলো ডিজাইন করেছেন মানতাশা আহমেদ। মুসলিম বিয়ের পোশাক ডিজাইন করেছেন সামার খান ও ওয়ারেজ আবদুল। হিন্দু বিয়ের পোশাক ডিজাইন করেন বিপ্লব সাহা। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিয়ের পলোয় পোশাকটির ডিজাইনার ছিলেন আওয়াং লেন, গ্রামের বিয়ের পোশাকের আয়োজনে ছিলেন নুর এ জান্নাত। খ্রিষ্টান ধর্মের বিয়ের পোশাক তৈরি করেছেন শাহানা জেফরিন। বউভাতের পোশাক ডিজাইন করেছেন ফারজানা রিপা।

মডেলদের বর–বধূ বেশে সাজিয়েছিল বানথাই বিউটি অ্যান্ড স্যালন। পুরো ফ্যাশন শোয়ের কোরিওগ্রাফি করেন ইমু হাশমি। এ ছাড়া উৎসবে ছিল মিরপুর বেনারসি ও মণিপুরি তাঁতিদের বুননপ্রক্রিয়া প্রদর্শন। বাঁশ ও কাঠ ব্যবহারে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নৌকা তৈরির প্রদর্শনের পাশাপাশি লোকজ শিল্পীর দল মাটির গানের সংগীত পরিবেশনা ছিল। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য তুলে ধরা হয়েছিল জামদানি, নকশিকাঁথা, মিরপুর বেনারসি, টাঙ্গাইল তাঁত, সিরাজগঞ্জ তাঁত, মণিপুরি তাঁত, রাঙামাটি তাঁত, খাদি, রাজশাহী সিল্ক, পাটের পোশাক ও পণ্যের ফ্যাশন-শো, সেমিনার।

ফ্যাশন শোতে দেখা যায় দেশীয় শাড়ি
ফ্যাশন শোতে দেখা যায় দেশীয় শাড়ি

এই উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২৪ অক্টোবর শুধু বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এদিন তাঁতিদের জন্য ছিল বিশেষ ফ্যাশন শো। টাঙ্গাইল তাঁতের তাঁতি নীলকমল বাসক, জামদানির তাঁতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মিরপুর বেনারসির তাঁতি শামীম আক্তার, রাঙামাটি তাঁতের রেনুকা চাকমা, সিরাজগঞ্জ তাঁতের তাঁতি ওয়ারেস আবদুল, নকশিকাঁথার তাঁতি শাহীনুর আলমের পোশাক পরে মঞ্চে হাঁটেন মডেলরা। বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তাসহ বিদেশি অতিথিরা সেদিন আমন্ত্রিত ছিলেন। দিনটিকে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ডে হিসেবে অবহিত করা হয়।

অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। ২৩ অক্টোবর উৎসব উদ্বোধন করেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কে এম হাবিব উল্লাহ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এএফডিবির সভাপতি মানতাশা আহমেদ, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম।