ছোটদের যোগ

শিশুরাও শিখতে পারে যোগব্যায়াম। কৃতজ্ঞতা: যাত্রাবিরতি
শিশুরাও শিখতে পারে যোগব্যায়াম। কৃতজ্ঞতা: যাত্রাবিরতি

প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস থেকে উঠে আসা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম। প্রাচীন, উপকারও বেশ। যোগব্যায়াম বলতে তো ভারিক্কি সব আসন অনুশীলনের কথাই মাথায় আসে। শিশুরা এর বুঝবেই বা কতটুকু, আর অনুশীলন করতে পারবেই বা কতটা। এমন ভাবার সুযোগ নেই একেবারেই। শেখার সঠিক পরিবেশ আর সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে শিশুরাও পারে যোগব্যায়ামের অনুশীলন করতে।

হাসি-মজা-দুষ্টুমিতে শিশু যেকোনো কিছুই শিখতে পারে অনায়াসে। পড়তে হবে বলে পড়া, আর মনের ক্ষুধায় পড়া—এ দুয়ের মধ্যে ফারাক অনেকটা। লেখাপড়ার মতো একই কথা খাটে যেকোনো ধরনের দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে। যোগব্যায়ামও এর ব্যতিক্রম নয়।

যোগব্যায়ামের শিক্ষক আনিকা রব্বানি রাজধানীর বনানীর যাত্রাবিরতি-তে প্রতি মঙ্গলবার বিকেলে শিশুদের যোগব্যায়াম শেখান। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য যোগব্যায়াম খানিকটা আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। খেলতে খেলতেই সব শেখে ওরা। শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়মকানুন থেকে শুরু করে যোগব্যায়ামের দেহভঙ্গি, ধ্যান—সবই শেখানো হয় খেলার ছলে। ২০১৫ থেকে চলছে শিশুদের যোগব্যায়ামের ক্লাস। সাড়াও পাচ্ছেন বেশ।

কেন প্রয়োজন?
শরীরের জন্য ব্যায়াম দরকার। এমনকি শিশুদের জন্যও। আজকের দিনে শিশুদের জন্য বাইরে ছোটাছুটি, দৌড়ঝাঁপ করার সুযোগ কম। যোগব্যায়ামে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে। পেশি টানটান করার অনুশীলন হয়। মানসিক চাপ কমে। শিশুরা নানা ধরনের চাপে থাকতে পারে, যা তারা অনেক সময়ই প্রকাশ করতে পারে না। পরীক্ষার চাপ, চারপাশের অস্থিরতা, পারিবারিক অশান্তি, এমনকি নিজের শারীরিক সমস্যার কারণেও চাপে থাকতে পারে শিশু। ক্ষেত্রবিশেষে শিশু আগ্রাসী হয়ে ওঠে। যোগব্যায়ামে ধ্যানের ধারণা দেওয়া হয়। ফলে শিশু চিন্তাকে একদিকে কেন্দ্রীভূত করতে শেখে, শিশুর মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে। মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে। আনিকা রব্বানি জানালেন এমনটাই।

প্রতিটি শিশুই আলাদা, প্রত্যেকেই নিজ গুণে অতুলনীয়। ও এটাতে প্রথম হলো, তুমি পারলে না—এ ধরনের কোনো প্রতিযোগিতা নেই যোগব্যায়ামে। এতে শিশু নিজেকে নিজের মতো করেই গ্রহণ করতে শেখে। অসুস্থ প্রতিযোগিতার মানসিকতা দূর হয়। যোগব্যায়াম করলে শিশু মানসিকভাবে স্থির হয়, হতাশা দূর হয়। বিশেষত আমাদের সমাজে মেয়েদের এই আত্মবিশ্বাস খুবই জরুরি। একটা বিশেষ কিছু করছি বা শিখছি, এ বোধটাও আসতে পারে শিশুর মধ্যে। আবার দলগত শিক্ষায় শিশু সবাইকে একসঙ্গে গ্রহণ করতে শেখে, সবার সঙ্গে মিলে অনুশীলনে উৎসাহ ও আগ্রহ পায়। লাজুক বাচ্চাদেরও উৎসাহ দেওয়া হয়। বকাঝকা, শাস্তি, পরীক্ষা ‘ক্লাস’ শব্দটির সঙ্গে যত ঋণাত্মক শব্দ চলে আসে, তার একটিও নেই এই ক্লাসে। এর ফলাফল দীর্ঘমেয়াদি।

ক্লাস নিয়ে কথা
শিশুরা আনন্দের মধ্য দিয়ে ব্যায়াম শেখে এখানে। আনিকা রব্বানির কথার সত্যতা মিলল সরেজমিনে। ফুটফুটে একদল শিশু হাসিখুশিভাবে দুষ্টুমির মাঝেই শিখছে যোগব্যায়াম। বাড়িতেও চর্চা করছে ‘বাড়ির কাজ’। এই বাড়ির কাজ একেবারেই বাঁধাধরা কিছু নয়। অভিভাবকেরা কী ভাবছেন? কথা হলো তামজিদা কারিমের সঙ্গে। তানতাসিরা ফেরদৌস আর তাবশিরা তাঁর দুই সন্তান। জানালেন, সন্তানদের আনন্দের জন্যই নিয়মিত এখানে ক্লাস করাচ্ছেন তাদের। বন্ধুদের সঙ্গে যোগব্যায়ামের অনুশীলন হয় বেশ। বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২–এর (সেগুনবাগিচা) শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার শেরিন খান বলেন, তাঁর সন্তান জারিয়া দারুণ উপভোগ করে এ সময়টুকু। রাজধানীর ব্যস্ত সময়ের যানজট পার হয়েও তিনি ওকে নিয়ে আসেন এখানে। এমনকি কতটা শেখা হলো, সেটাও বাড়িতেও কাউকে দেখাতে পছন্দ করে জারিয়া; ঘুমের আগে ভালো ভালো কথা বলে—সবই এই ক্লাস থেকে পাওয়া। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্তসম্পর্কটাও চমৎকার বলে মনে করেন তিনি। শিশু চিকিৎসক হিসেবে এটাও জানালেন, যোগব্যায়াম শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।

জেনে নিন
সাধারণত সাত বছর বয়স থেকে যোগব্যায়াম শুরু করা যায়। উচ্চতা, ওজন, এমনকি শ্বাসকষ্টজাতীয় রোগ, কোনোটাই যোগব্যায়ামের পথে বাধা নয়। শিক্ষকের কাছে শিখে যোগব্যায়াম করলে শিশুর ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি নেই। যাত্রাবিরতিতে সাধারণত মাসের শুরুর দিকে ভর্তি করানো হয় শিশুদের। খরচ প্রতি মাসে ৩৫০০-৪০০০ টাকা (ক্লাসের সংখ্যার ভিত্তিতে)। মাসের শেষে মূল্যায়নও হয়। তবে তা তথাকথিত পরীক্ষার মতো কিছু নয়। ক্লাস থেকে শিখে আসা ব্যায়াম অনুশীলন করতে বাড়িতে যোগব্যায়ামের ম্যাট রাখা ভালো। ব্যায়ামের যেকোনো ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।