নকশা থেকে উদ্যোক্তা

চট্টগ্রামের ডিজাইনার সুলতানা নূরজাহান অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন নকশা থেকে। ছবি: জুয়েল শীল
চট্টগ্রামের ডিজাইনার সুলতানা নূরজাহান অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন নকশা থেকে। ছবি: জুয়েল শীল

সুই–সুতার সঙ্গে সুলতানা নূরজাহানের সখ্য স্কুলজীবন থেকে। নবম শ্রেণিতে গার্হস্থ্যবিজ্ঞানের ক্লাস করার সময় একদিন দিদিমণি হাতে তুলে দিলেন এই দুটি জিনিস। এরপর চার দশক পেরিয়ে সুই–সুতা আগলে রেখেছেন সযতনে। সেই পথ ধরে তিনি এখন চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। গড়ে তুলেছেন ফ্যাশন হাউস মিয়াবিবি। রয়েছে তাজনূর প্রোডাকশন হাউস নামে পোশাক তৈরির কারখানাও।

২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের নাসিরাবাদ আবাসিকের ফ্ল্যাটে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনে আমার অন্যতম প্রেরণা প্রথম আলোর “নকশা”। আমরা নিজেদের মতো কাজ করেছি। কিন্তু সেই কাজের ফিনিশিং টাচ দিয়েছে নকশা। শুরুর দিকে নকশায় ঘরে বসেই পোশাক তৈরির জন্য নানা ধরনের প্যাটার্ন দেওয়া হতো। এসব কাটিং দেখে আমরা পোশাক তৈরি করতাম। আবার কিছু পোশাকের ড্রয়িং দেওয়া হতো রং করার জন্য। “নিজেই যখন ডিজাইনার” নামের এই অংশে পোশাকের ছবি নিজের মতো করে রং করে পাঠাতাম। পরের সপ্তাহে ছাপা হতো কোন রংটি ম্যাচ করেছে। এতে করে পোশাকের রঙের ব্যাপারে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যেত। এভাবে নকশা আমার আত্মবিশ্বাসকে পোক্ত করেছে।’

সুলতানা নূরজাহানের মতে, নকশা তাঁকে আত্মবিশ্বাসের ভিত গড়ে দিয়েছে। এই পুঁজিই তাঁর বড় সম্বল। এখনো প্রতি মঙ্গলবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন নকশা। দেখে নেন হালের ফ্যাশন ধারা। জানালেন, বিদেশি বেশ কিছু ফ্যাশন ম্যাগাজিন নিয়মিতই তিনি পড়েন। কিন্তু তৃপ্তিটা পান নকশা পড়ে। কারণ, ফ্যাশনে চলতি ধারা দেখতে হলে নকশায় চোখ বোলাতেই হবে। যাঁরা নতুন কাজ করতে আসবেন, তাঁদের নকশা নিয়মিত পড়াটা জরুরি।

এ তো গেল নকশা। এবার খোলেন প্রথম আলো ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতার স্মৃতির ঝাঁপি। সুলতানা নূরজাহান বলেন, চট্টগ্রামের নতুন ফ্যাশন ডিজাইনার উঠে আসার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম এই ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা। ডিজিইনাররা নিজেদের কাজ পরখ করতে পারেন এর মাধ্যমে। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।

সুলতানা নূরজাহান ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রথম আলো ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় নিয়মিতভাবে অংশ নেন। প্রথমবার পুরস্কার পাননি। দ্বিতীয় বছর থেকে পুরস্কার পাওয়া শুরু। ২০১১ সালে এসে হন সেরাদের সেরা। তখন বিভিন্ন বিভাগে ১৪টি পুরস্কার জেতেন তিনি। বললেন, ‘চট্টগ্রামের জন্য বড় পাওয়া যে এই প্রতিযোগিতা এখনো টিকে আছে। নিয়মিতভাবেই প্রতিবছর আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ একই সময়ে ঢাকায় শুরু হওয়া অনেক আয়োজন এখন বন্ধ হয়ে গেছে।’

সুলতানা নূরজাহান ফ্যাশন ডিজাইন শুরু করেন ১৯৯৩ সালের দিকে। ঘরোয়াভাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৫ সালের দিকে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারে ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে তাঁর পোশাক বিক্রি শুরু। পরিসর বড় হলে ১৯৯৭ সালের দিকে চলে আসেন মিমি সুপার মার্কেটে। এরপর মিয়াবিবি ব্র্যান্ডের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলেন প্রবর্তক মোড়ে।

১৯৯২ সালে বিয়ে হয় বড় পরিবারে। স্বামী ব্যবসায়ী। কিন্তু কখনোই তাঁর কাজের বাধা হয়ে দাঁড়াননি। বরং সব সময় ছিলেন বন্ধুর হাত, যা এখনো অব্যাহত আছে। বিয়ের পর নিজের কাজের পাশাপাশি স্নাতকোত্তর ও ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। চার ছেলের মধ্যে দুজন প্রকৌশলী। দুজন এখনো পড়াশোনা করছেন। প্রতিদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেই পছন্দ সুলতানা নূরজাহানের। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি যুক্ত রয়েছেন চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হিসেবে।