মা-মেয়ের নকশাযাপন

নকশায় যে চুড়ের ছবি ছাপা হয়েছিল, সেটিই বানিয়ে নিয়েছেন মা। মেয়েকে নিয়ে তাই দেখাচ্ছেন। ছবি: নকশা
নকশায় যে চুড়ের ছবি ছাপা হয়েছিল, সেটিই বানিয়ে নিয়েছেন মা। মেয়েকে নিয়ে তাই দেখাচ্ছেন। ছবি: নকশা

মেয়েটি নকশার অনুরাগী। এ কথা তিনি ই–মেইলে জানিয়েছিলেন নকশা দলকে। সে কারণেই তাঁদের বাড়িতে যাওয়া। গিয়ে দেখা গেল, মেয়েটির মায়ের হাতে একটি অন্য রকম চূড়। এটি কি নকশা দেখে কেনা? কৌতুক করে বলতেই মেয়ের মা অবাক করে দিয়ে বললেন, অবশ্যই। শুধু হাতের গয়না নয়, সাজপোশাক, রান্নাবান্না—সবই তাঁরা নকশা দেখে করেন। ‘নকশার যে কপিতে এই চূড়ের ছবি ছাপা হয়েছিল, সেটি কি দেখাতে পারেন?’ প্রশ্ন মাটিতে পড়তে না পড়তেই জমিয়ে রাখা নকশার গাদা থেকে মা সেই কপি বের করে দিলেন। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারির নকশার প্রথম পৃষ্ঠায় যে চূড়ের ছবি ছাপা হয়েছে, সেটিই পরে আছেন মেয়েটির মা। বললেন, নকশা দেখে ঢাকা থেকে কিনেছেন।

মেয়েটির নাম আনিকা তাসনিম বিনতে সাজিদ। বাবা মো. সাজিদ হোসেন রাজশাহী নগর পুলিশের একজন উপকমিশনার। এখন নগরের বোয়ালিয়া জোনে কর্মরত। মা কাজী সালমা সাজিদ গৃহিণী। আনিকারা দুই বোন ও এক ভাই। ভাই সবার ছোট। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চান্দপাড়া গ্রামে। রাজশাহীতে তাঁরা কেশবপুর এলাকায় থাকেন।

আনিকা রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বাবা সাজিদ হোসেন বললেন, নকশা নিয়ে মেয়ের মাতামাতির শেষ নেই। নকশা দেখে খাবার তৈরি করা, পোশাক পছন্দ করা, নেইলপলিশ থেকে শুরু করে চুলের ছাঁট সবকিছুই নকশার মতো হতে হবে। তবে মেয়ে পড়াশোনায় ভালো। লেখাপড়া ঠিক রেখে নকশার পেছনে সময় দেন, এ জন্য তিনি আপত্তি করেন না।

আনিকার মায়ের কথা হচ্ছে, নকশার খাবারের রেসিপি দেখে প্রতি শুক্রবারে ছুটির দিনে মেয়ে লেগে যান সেই খাবার তৈরি করতে। ভালোই লাগে। মা বলেন, ‘আসলে আমি প্রথমে নকশা সংগ্রহ শুরু করেছিলাম। ২০০৮ সাল থেকে নকশা গুছিয়ে রেখেছি।’ মায়ের দেখাদেখি মেয়েও নকশার ভক্ত হয়ে গেছেন। নকশা তাঁর পরিবারের প্রতি শুক্রবারের ভিন্ন স্বাদের খাবার তৈরির একটি প্রেরণা। নকশার রেসিপি অনুযায়ী তৈরি করা সরিষা তেলে শাহি বিরিয়ানি, শাহি মাটন রেজালা, ইয়াখনি পোলাও, ভাপা ডিমের কোরমা, চটপটি, বোরহানি, বিভিন্ন ধরনের পানীয়, স্যুপ ইত্যাদি তাঁদের খুব প্রিয়। বর্তমান বিশ্ব ফ্যাশনের ধারা বুঝতে, গয়না ও অনেক দরকারি জিনিস নকশা দেখেই তাঁরা কিনে থাকেন। প্রথম আলো এবার ২১ বছর পূর্ণ করছে। আনিকার মা বলেন, ‘নকশার জীবনে এ রকম হাজারও একুশ আসুক।’

‘আমরা বাড়িতে সবাই নকশার ভক্ত, এটা আমাদের গৃহকর্মী মেয়েটিও জেনে গেছে। নিচে পেপার দিয়ে গেলে মঙ্গলবার নকশার দিনে কাজের মেয়ে আগেই পেপার দিয়ে যায়। এমনও হয়েছে, কোনো কারণে পত্রিকার ভেতরে নকশা নেই। সেদিনের আরেকটা পেপার বাজার থেকে কিনে আনতে হয়, না হলে বাবার অফিস থেকে নকশা পাতাটা বের করে আনতে হয়।’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কেশবপুরের বাসায় বসে কথা বলতে বলতে মনে হলো, তাঁদের নকশাপ্রীতির একটা নমুনা দেখা যাক। বললাম, ‘পরিবারের সবাই কি এখনই নকশার কোনো সাজে সেজে আসতে পারেন?’ তাঁরা পাঁচ মিনিট সময় চাইলেন। এই সময়ের মধ্যে মেয়েটির বাবা একটি পাঞ্জাবি পরে এলেন, মা ও তাঁর দুই মেয়ে সালোয়ার–কামিজ পরে এলেন। তাঁরা বললেন, সব নকশা দেখে কেনা।

আনিকার বাবা বললেন, ‘আমি কোনো দিন নিজের পাঞ্জাবি কিনতে যাইনি। ওরা মা-মেয়ে নকশা দেখেই আমার পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে আসে।’