কাজী তাসলীমার রান্নাসেবা

বাড়িতে কেক তৈরি শেখাচ্ছেন কাজী তাসলীমা সায়েরা। ছবি: সংগৃহীত
বাড়িতে কেক তৈরি শেখাচ্ছেন কাজী তাসলীমা সায়েরা। ছবি: সংগৃহীত

সাতকরা একটি লেবুজাতীয় ফল। টক–ঝাল রান্নায় ব্যবহার হয়। এ ফল সিলেটে উৎপাদন ও আমদানি বেশি থাকায় আঞ্চলিক ফল হিসেবে সমাদৃত। প্রথম আলোর নকশায় নানা অঞ্চলের রান্নাবান্নার রেসিপি দেখে একদিন সাতকরা দিয়ে আঞ্চলিক রান্নার রেসিপি তৈরি করলেন। নকশায় ছাপাও হলো। সেই থেকেই রান্না শেখানো শুরু করলেন সিলেটের কাজী তাসলীমা সায়েরা। তিনি প্রশিক্ষক আর তাঁর প্রশিক্ষক নকশা। ঘরোয়া পরিসরে রান্না শেখান বলে প্রতিষ্ঠানটির নাম দিয়েছেন ‘গৃহিণী’।

রান্না শেখানোটা স্বেচ্ছাসেবা হিসেবে নিয়েছেন, বললেন কাজী তাসলীমা। সিলেট নগরীর শেখঘাটের শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় তাঁর বাসা। সেখানে রান্না শেখানোর আলাদা একটা ঘর রেখেছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ শেষে ‘গ্রুপ’ করে চলে রান্না শেখানোর আয়োজন।

সাতকরা ছাড়াও সিলেটের আঞ্চলিক রান্নার নানা রকম পদ এবং টকজাতীয় রান্না, বিভিন্ন উৎসবে নানা স্বাদের কেক তৈরি করেন কাজী তাসলীমা। জানালেন, নতুন নতুন খাবার তৈরির ধারণা পান প্রথম আলোর মঙ্গলবারের ক্রোড়পত্র নকশা থেকে। নতুন রেসিপিও শেখেন নকশা পড়ে। বললেন, ‘এ পর্যন্ত সিলেটের তিন শতাধিক নারী আমার কাছ থেকে রান্না শিখেছেন।’

রান্না শেখানোর ঘরোয়া আয়োজনকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা রয়েছে কাজী তাসলীমার। জানালেন, ২০০২ সালে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরে থাকার সময় তিনি ‘গৃহিণী’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে কয়েকটি ধাপে ১২৫ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ২০০৩ সালে রান্না শেখানোর আয়োজনে একটি স্বীকৃতিও মেলে তাঁর। স্টারশিপ আয়োজিত রেসিপি প্রতিযোগিতায় তিনি বিজয়ী হন।

সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট শহরে এসে বসবাস শুরু করে কাজী তাসলীমার পরিবার। ২০০৬ সাল থেকে সিলেটে গৃহিণী কার্যক্রম শুরু করেন। সিলেটে এ পর্যন্ত ২০০ জনকে দিয়েছেন প্রশিক্ষণ। বাটারফ্লাইয়ের ‘কুকিং ট্রেইনার’ হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি সিলেটে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন গ্রাসরুটসের সদস্য। স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে পরিপাটি পরিবার তাসলীমার।

গৃহিণীর কার্যক্রমটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবীর মতো করে পরিচালনা অব্যাহত রাখা তাঁর ভবিষ্যৎ লক্ষ্য। এ কাজেরও প্রেরণা নকশা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে রান্না শিখতে আসেন দুই ধরনের মানুষ। পড়াশোনার কারণে রান্নাবান্নায় মনোযোগ ছিল না, এ রকম তরুণী, আর বিয়ের পর গৃহিণী। রান্না নিয়ে এঁদের সবার আগ্রহ বেশি। আমি যেমন নকশা অনুসরণ করি, তাই শুরুতেই তাঁদের বলি নকশা নিয়মিত পড়তে। নকশার আয়োজন নিয়মিত দেখলে শেখার প্রতি আগ্রহ জন্মাবেই।’

রান্নাবান্না শেখানোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলে জানান কাজী তাসলীমা। মানুষের মধ্যে পর্যটনকেন্দ্রিক যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক রান্নাও সমাদৃত হচ্ছে। চট্টগ্রামে গিয়ে মেজবানি মাংস কিংবা সিলেটে গিয়ে সাতকরার খাবারে পর্যটকদের আগ্রহ থাকেই। অঞ্চলভিত্তিক রান্নায় সিলেটের সাতকরা মাছ ও মাংসের তরকারিতে ব্যবহার হয়। এ ছাড়া রয়েছে সাতকরার খাট্টা বা টক।

কাজী তাসলীমা জানালেন ‘সাতকরায় গরুর গোশত ভুনা’ রান্নার রেসিপি ২০০০ সালে প্রথম আলোর নকশা দেখে তিনি রান্না করেছিলেন। বললেন, একসময় এ খাবার অপ্রচলিত ছিল। এখন সিলেটের হোটেল-রেস্তোরাঁতেও এটি বেশ চলে।