অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকরে বিপদ

জীবাণু ক্রমে নিজেদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বলে অ্যান্টিবায়োটিক একসময় আর তার বিপরীতে কাজ করে না, এটাকে বলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা সহিষ্ণুতা।

রেজিস্ট্যান্স অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানবসৃষ্ট। বিশ্ব অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সপ্তাহ পালিত হয় প্রতিবছর নভেম্বরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিবায়োটিক সহিষ্ণুতাকে অদৃশ্য মহামারি আখ্যা দিয়েছে।

কীভাবে সহিষ্ণুতা উৎপন্ন হয়

জীবাণুগুলো নিজেদের এমনভাবে পরিবর্তন করে যে অ্যান্টিবায়োটিককে তার শরীরে আর প্রবেশ করতে দেয় না বা অ্যান্টিবায়োটিক যে জায়গায় (যেমন কোষের প্রাচীর) কাজ করে সেটার আদল বা গঠনেই পরিবর্তন আনে। কখনো এমন এনজাইম উৎপাদন করে, যা অ্যান্টিবায়োটিককে ভেঙে ফেলে। এই সহিষ্ণুতা জীবাণুর পরবর্তী প্রজন্মে ছড়ায়। ৬০ শতাংশ টাইফয়েড জ্বরে এখন সিপ্রফ্লক্সাসিন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নিউমোনিয়া বা মেনিনজাইটিস সারাতে অনেক বেগ পেতে হয়।

আমরা কীভাবে দায়ী

ঠান্ডা, কাশি, জ্বর অথবা ডায়রিয়ায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করলে কারণ না জেনেবুঝে চট করে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নিলেন বা দোকানদারের কথায় কি আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলেন—এ অভ্যাস অ্যান্টিবায়োটিক সহিষ্ণু জীবাণুর জন্ম দিচ্ছে। মৌসুমি জ্বরজারি, পেট খারাপ, সর্দি–কাশি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসজনিত। ভাইরাসের বিপরীতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। এই অযৌক্তিক ব্যবহারের ফল হচ্ছে শরীরের উপকারী জীবাণু ধ্বংস হয়ে অধিকতর আগ্রাসী জীবাণুগুলোকে সুযোগ করে দেওয়া। অনেকেরই ধারণা, বহুল প্রচলিত মেট্রোনিডাজল বা ফ্লাজিল ট্যাবলেট মল শক্ত করার ওষুধ কিন্তু আসলে এটাও একটি অ্যান্টিবায়োটিক, যা চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

আবার দুই–তিন ডোজ ওষুধ খাওয়ার পর জ্বর সেরে যায়, কাশি কমে যায় বা পেট ভালো হয়ে যায়, তারপর মেয়াদ শেষ না করে অনেকে ওষুধ বন্ধ করে দেন। এতে জীবাণুটি আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে। বয়স অনুযায়ী কম মাত্রায়, নিম্নমানের ওষুধ, নির্দেশিত সময়কালের কম সময় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া রেজিস্ট্যান্সের অন্যতম কারণ।

কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়

জীবাণু সংক্রমণ নিশ্চিত না করে কখনো অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না। সাধারণত জীবাণুর কালচার সেনসিটিভিটি করেই নিশ্চিত হওয়া যায় কোন জীবাণু দিয়ে সংক্রমণ হয়েছে এবং কোন অ্যান্টিবায়োটিক আপনার জন্য প্রযোজ্য। কালচারের রিপোর্ট পেতে সময় লাগে, তত দিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভালো। চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া কখনো নিজে বা কারও কথায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের আগে সঠিক ডোজ, কত দিন খেতে হবে ও কোন সময় খেতে হবে, ভালো করে জেনে নিন। একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে ডোজ পড়তে হবে। অধিকাংশ ভাইরাসজনিত রোগ ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়, কোনো অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। এ সময়টুকুতে কোনো ওষুধ না খাওয়াই ভালো। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ সন্দেহ হলে সঠিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ফেলুন।