শিশুর ত্বক এই সময়

শীতে শিশুর ত্বকে চাই িবশেষ যত্ন। ছবি: নকশা
শীতে শিশুর ত্বকে চাই িবশেষ যত্ন। ছবি: নকশা

 ‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে

তার মুখে খবর পেলুম:

সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,

নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার

জন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে।’

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই শিশু একদিন বড় হবে। আমাদের না পারা কাজগুলো নিপুণভাবে করবে সে। মা-বাবা ভাবেন এমনটাই। এই শীত এল বলে, এই বুঝি তীব্র গরমে নাভিশ্বাস ওঠে, এই আবার বৃষ্টিতে ভিজে একশা। শিশুটি সুস্থ থাকবে তো? ওর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো? নানা প্রশ্ন ভেসে আসে মনের আকাশে, একের পর এক-নিরঙ্কুশ কালো মেঘের মতো।

আবহাওয়া তো বদলায়ই। শিশুর যত্নের ধরনটাও বদলে যায় আবহাওয়ার সঙ্গে। শিশুর চুল, ত্বক, নখ—সবই তো মা-বাবার আদরের। ওর সুস্থতার জন্যও প্রয়োজন সার্বিক যত্নের। শীতে সবারই ত্বকে কমবেশি বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিশুরাও এর ব্যতিক্রম নয়। নিয়মিত যত্নে শিশুরা ভালো থাকবে বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, শীতের শুষ্কতায় শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে, এমনকি অধিক শুষ্কতায় চুলকানিও হতে পারে। ত্বকের সুস্থতায় শিশুদের গোসলের পর তাদের উপযোগী লোশন ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন তিনি। চাইলে লোশনের পরিবর্তে উপযোগী তেলও ব্যবহার করা যায়। জলপাই তেল বেছে নিতে পারেন, তবে সরিষার তেল নয়। কারণ, শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। নরম, সুতির কাপড় পরানো ভালো, যাতে ত্বকে কোনো অস্বস্তি না হয়। ত্বকে অ্যালার্জিজনিত সমস্যার আশঙ্কা কম থাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন খান জানালেন, নবজাতকের ত্বকও শুষ্ক হতে পারে, খসখসে হতে পারে, ফেটেও যেতে পারে। নবজাতককে তার ত্বকের উপযোগী লোশন বা তেল লাগিয়ে দেওয়ার পরামর্শ তাঁর। নিয়ম মেনে গোসল করানোও জরুরি। নইলে ময়লা জমে ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। শীতের পোশাক তো পরাবেনই, টুপি পরাতে ভুলবেন না। মাথা থেকেই শিশু সবচেয়ে বেশি তাপ হারায়। নবজাতকের চুল থাকলে তা শীতের সময় রেখে দিতে পারেন। ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধই শিশুর সার্বিক সুস্থতার জন্য যথেষ্ট (এমনকি পানিও নয়)। ২৪ ঘণ্টায় ৮-১০ বার শিশুকে খাওয়ানো, অন্তত ৬ বার শিশুর প্রস্রাব হওয়া, পর্যাপ্ত ওজন বৃদ্ধি—এসব লবণ দেখে বোঝা যায়, শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।

রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, শিশু তার ত্বক স্পর্শ করতে দিতে চায় না। ত্বক পরিষ্কার রাখা আর শীতের সময়টায় ত্বককে আর্দ্র রাখা—ত্বকের সুস্থতার মূল কথা। সব শিশুর ত্বকের যত্নের ধরনও প্রায় একই রকম বলে জানালেন তিনি। তবে অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে লোশনের পরিবর্তে নিয়মিত তেল ব্যবহার করাটাই ভালো।

গোসল

জন্মের প্রথম তিন দিন গোসল করানো উচিত নয়। এরপর ১ মাস বয়স পর্যন্ত এক দিন পরপর গোসল করানো প্রয়োজন (শীতল আবহাওয়ায়)। যেদিন গোসল করাবেন না, সেদিন কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে নিয়ে ভালোভাবে শরীর মুছিয়ে দিন। ১ মাস হয়ে গেলে প্রতিদিনই গোসল করাতে পারবেন। গোসলের সময় আরামদায়ক উষ্ণতার পানি ব্যবহার করুন। শিশুর ত্বকের কোনো অংশ যেন অপরিহার্য থেকে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাতাস বইছে—এ রকম জায়গায় শিশুকে গোসল করানো ঠিক নয়। তবে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় গোসল করালে অসুবিধা নেই। পূর্ণ গর্ভকালের আগেই যাদের জন্ম হয়েছে, কিংবা জন্মের সময় যাদের ওজন কম থাকে, সেই সব নবজাতকের জন্য নিয়ম খানিকটা আলাদা। সাধারণত এক-দেড় মাস বয়স না হওয়া অবধি কিংবা ২ কেজি ওজন না হওয়া অবধি সপ্তাহে ১-২ দিন গোসল করানোর পরামর্শ রইল।

প্রসাধনসামগ্রী

শিশুর গোসলে সাবান ব্যবহার করুন ২-৩ দিন পরপর। চাইলে সপ্তাহে ১ দিন শিশুর উপযোগী লোশন মালিশ করে, কুসুম গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে শিশুর ত্বক পরিষ্কার করে ফেলুন। এতে ডিপ ক্লিনজিংয়ের কাজ হবে। শিশুদের উপযোগী প্রসাধনসামগ্রী কেনা হলেও মনে রাখা প্রয়োজন, সবার ত্বকে সব প্রসাধন মানানসই হয় না। কারও কারও বিশেষ কোনো উপাদানে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতাও থাকে। তাই সেটিই বেছে নিন, যা আপনার শিশুর ত্বকে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব (যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি, রঙের পরিবর্তন প্রভৃতি) সৃষ্টি করছে না।

আর্দ্রতা চাই আমারও

গোসলের পরে ছাড়াও সারা দিনে প্রয়োজনে ত্বকে লোশন বা তেল পুনরায় দেওয়া যায়। তবে তেল, লোশন বা পাউডার—কোনোটি জন্মের পর প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।