শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা

শিশুর শারীরিক, মানসিক বৃদ্ধির জন্য  প্রয়োজন আনন্দময় পরিবেশ। মডেল: রাইসা ও জ্যোতি। ছবি: খালেদ সরকার
শিশুর শারীরিক, মানসিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন আনন্দময় পরিবেশ। মডেল: রাইসা ও জ্যোতি। ছবি: খালেদ সরকার

অনেক মা–বাবাই শিশুর বেড়ে ওঠা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অনেকেই ভাবেন শুধু ভালো খাওয়াদাওয়া করলেই শিশুরা বেড়ে উঠবে ঠিকঠাক। আবার অনেকেই মনে করেন শারীরিক বৃদ্ধিই একমাত্র বৃদ্ধি। এসব ধারণা আসলে ঠিক নয়। শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। শিশু যাতে হাসিখুশি আর আনন্দময় পরিবেশে বড় হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

যেসব দিক দেখে শিশুর বিকাশ বুঝবেন

চার মাস বয়সী একজন শিশুকে ধরে বসিয়ে দেওয়া যায়। তত দিনে তার ঘাড় ও মেরুদণ্ড মোটামুটি শক্ত হতে শুরু করে। সাত-আট মাস বয়সের মধ্যে কোনো সাহায্য ছাড়াই শিশু বসে থাকতে পারবে। নয়-দশ মাস বয়সে কোনো কিছু ধরে সে দাঁড়াতে শিখবে। ১৫ মাস বয়সের মধ্যে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শুরু করবে। দুই বছর বয়সে আরও ভালো করে হাঁটতে পারবে। দুই পা জড়ো করতে পারবে, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে বা নিচে ওঠানামা করতে পারবে। তিন বছরের মাথায় শিশু এক পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে শিখবে। চার বছরে লাফিয়ে বাধা পেরোতে পারবে। আর পাঁচ বছর বয়সে একটানা সোজা লাইন ধরে সামনে-পেছনে অনায়াসে চলতে পারবে।

যেভাবে নজর রাখতে হবে

জন্মের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে শিশুর ওজন মেপে দেখতে হবে। যদি পরপর দুই মাস শিশুর ওজন না বাড়ে, তবে বুঝতে হবে তার কোনো সমস্যা আছে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই যথেষ্ট। ছয় মাস বয়স পূর্ণ হলে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে শিশুর ওজন বাড়লে বুঝতে হবে শিশুর শরীর ঠিকমতো বাড়ছে, তার মানসিক বিকাশ যথাযথ হচ্ছে এবং তার মনও সুস্থ আছে। অন্য শিশুর ওজনের তুলনায় নয়, নিজের ওজনের তুলনায় প্রতি মাসে শিশুর ওজন বাড়া প্রয়োজন। ছয় মাসের কম বয়সের শিশুর ওজন ঠিকমতো না বাড়লে তাকে আরও ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।

অসুখ বিসুখ, কম বা অনুপযুক্ত খাবার অথবা প্রয়োজনীয় সেবাযত্নের অভাবে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যেসব শিশু প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খায়, সে রোগব্যাধিতে খুব কম ভোগে। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি সব টিকা দেওয়া জরুরি। কারণ, টিকা রোগব্যাধি থেকে শিশুকে রক্ষা করে এবং তাকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

শিশুদের পাকস্থলী বড়দের তুলনায় ছোট হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই একবারে অল্প পরিমাণে খাবার খেতে পারে। ঠিকমতো বেড়ে ওঠার জন্য বলবৃদ্ধিকারক খাবারের পাশাপাশি ঘনঘন খেতে দিতে হবে। সারা দিনে পাঁচ থেকে ছয় বার। শিশুকে মিশ্র খাবার খাওয়ানো উচিত। নরম সবজি, ছোট মাছ, ডিম, ডাল, তেল, চিনি বা গুড় মেশাতে হবে এবং মৌসুমি ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। এ জন্য শিশুকে শুকনা বা হালকা খাবার যেমন ফল, রুটি, মোয়া, নাড়ু, বিস্কুট, বাদাম, কলা অথবা হাতের কাছে যেসব পুষ্টিকর নিরাপদ খাবার পাওয়া যায়, সেগুলো খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দিতে হবে। আর যে শিশুরা বুকের দুধ খায়, তাদের বাইরের খাবার দেওয়ার আগে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো দরকার। তাহলে মায়ের বুকে অনেক দিন দুধ থাকবে।

শিশুর বাড়তি শক্তির প্রয়োজন মেটাতে পরিবারের স্বাভাবিক খাবারে অল্প পরিমাণে ঘি, সয়াবিন তেল, নারকেল তেল, বাদাম তেল অথবা বাদামের গুঁড়া মেশানো যেতে পারে, তাতে খাবার সমৃদ্ধ হয়।

পর্যাপ্ত খাবারের পরও ওজন না বাড়লে

ঠিকমতো খাবার খাওয়ানোর পরও যদি শিশুর ওজন না বাড়ে, তাহলে দেখতে হবে সেই খাবার পুষ্টিকর কি না? খেয়াল করুন শিশু ঘন ঘন অসুস্থ হচ্ছে কি না? অসুস্থ অবস্থায় কম খেতে পারে এবং অসুখ সেরে গেলে আগের স্বাস্থ ফিরে পেতে তাকে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে কি না? শিশু প্রয়োজনমতো ভিটামিন ‘এ’ পাচ্ছে কি না? শিশু কৃমিতে আক্রান্ত হয়েছে কি না?

সমস্যা খুঁজে ব্যবস্থা নিলে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।

আর শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠলে সুন্দর হবে তাঁর ভবিষ্যৎ।

অধ্যাপক ডা. মো. আল-আমিন মৃধা, শিশু বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা