চায়ের রাজা দুধ-চা

সকালবেলা এক কাপ দুধ–চা  সারা দিন রাখবে চনমনে। ছবি: অধুনা
সকালবেলা এক কাপ দুধ–চা সারা দিন রাখবে চনমনে। ছবি: অধুনা

লেখক জাভেদ হুসেনকে বললাম, দুধ–চা ছাড়া আর কিছু খাবেন কি? কবীরের দোঁহা তফসির করতে করতে নিপাট চা–খোর জাভেদ হুসেন মৃদু হেসে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ভদ্রলোক দুধ–চা ছাড়া আর কীইবা খায়? অফিসের নিচে ছুটি হয়ে যাওয়া ব্যাংকের বন্ধ কলাপসিবল গেটের বাইরের সিঁড়িতে বসে টংয়ের চা–মামাকে ডেকে বলি, দুই কাপ দুধ–চা, চিনি কম। ভদ্রলোক পান করুক আর না–ই করুক, গড়পড়তা বাঙালি আসলেই দুধ–চা পান করে। তা সে গরুর দুধই হোক কিংবা কৌটার কনডেন্সড মিল্ক। চায়ের সঙ্গে দুধ থাকলেই হলো।

এই দুধ–চায়ের যে কত রকমফের আছে, তার হিসাব নেই। যেমন ধরুন, দুধ–চা, মালাই–চা, আদা দুধ–চা, বেশি দুধের চা, দুধ-চিনি কম চা ইত্যাদি। সবই কিন্তু দুধের সঙ্গে চায়ের মিশেল। কিন্তু সব দুধেই কি চা ভালো হয়?

চা বিশেষজ্ঞ আমার বন্ধু সৌম্য রায় এক অদ্ভুত গল্প শোনালেন। দুধ–চায়ের দুধ হতে হবে চর্বিহীন। তাহলেই দুধ–চায়ের মজা। এই বক্তব্যের সঙ্গে হালকা দ্বিমত পোষণ করতেই তিনি ঝাঁজালো গলায় বললেন, ‘ঠেকে শিখেছি মশাই। বই পড়ে গুল ঝাড়ছি না। দুধের চর্বি চায়ের লিকারকে আটকে দেয়। তাই চর্বিযুক্ত দুধে চায়ের স্বাদ ঠিকমতো খোলে না। বাড়িতে দুধ–চা বানাবার সময় বিনা চর্বির দুধ ব্যবহার করতে পারেন। দুধের নিজস্ব ফ্লেভার না থাকাই ভালো। গরুর দুধের চেয়ে এ কারণেই মোষের দুধের চা অনেক ভালো হয়। একান্তই চর্বিযুক্ত দুধে চা বানালে, মাঝেমধ্যে চামচ দিয়ে ঘেঁটে দিতে হবে। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে, কনডেন্সড মিল্ক ছাড়া যে দুধই হোক না কেন, তাকে খুব ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এই দুধে হালকা জল দেওয়া যেতে পারে। কিংবা অর্ধেক জল আর অর্ধেক দুধ মিশিয়ে প্রচণ্ড উত্তাপে ফুটিয়ে তাতে গুঁড়া চা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিলে এক দুর্দান্ত স্বাদের চা পাওয়া যায়। সেই ফুটন্ত চায়ের পাত্রে তেজপাতার কণামাত্র যদি ছেড়ে দেন, তাহলে সেই চা হবে স্বর্গীয়। এসব বলছি যদি আপনি বাড়িতে বানিয়ে চা পান করতে চান, সে জন্য। আরও জানিয়ে রাখি, দুধ–চা তৈরির মূলমন্ত্র হলো চা আর দুধকে ভালোভাবে ফোটানো। এটা না হলে আপনার চা ভালো হবে না। চায়ের অকৃত্রিম স্বাদ পাবেন যদি আপনি খড়ির উনুনে চা তৈরি করেন।

বিশেষজ্ঞের দোহাই দিয়ে জানিয়ে রাখি, আমরা সচরাচর অর্থডক্স চা খাই। এই অর্থডক্স চা দুই রকম—লিফ বা পাতা আর সিটিসি, যার পূর্ণরূপ ক্রাস, টিয়ার অ্যান্ড কার্ল, সোজা কথায় দানা চা। এই দানা চা–ই কিন্তু দুধ–চায়ের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং আমরা যারা দুধ–চা খাই, তারা সাধারণত এটিই পান করে থাকি। আপনাকে বলে রাখি, কাপ, মগ কিংবা গ্লাসে পরিমাণমতো গরম দুধ নিয়ে, ছাঁকনিতে চায়ের দানা ফেলে তার ওপর ধীরে ধীরে গরম জল ঢালুন। দেখতে পাবেন সাদা দুধের রং ধীরে ধীরে কেমন বদলে যাচ্ছে!

গুঁড়া দুধে যদি একান্তই চা বানাতে হয়, তবে গরম জলে দুধ ভালো করে ফুটিয়ে তারপর তা দিয়ে চা বানান। কনডেন্সড মিল্কের বেলাতেও একই কথা। তবে এই দুই ধরনের দুধে বানানো চা সাধারণত খাওয়া হয় বাড়ির বাইরে, দোকানে। সেখানে কিন্তু দুধের চেয়ে চায়ের গুরুত্ব বেশি। কোন দানার চায়ের লিকার কেমন হবে, তার জন্য অভিজ্ঞ হওয়া চাই। শুধু কেটলিতে পানি ফুটিয়ে চা গরম করে এক চামচ দুধ দিয়ে ঘুঁটে দেবেন, তা হবে না।

জাঁকিয়ে শীত আসছে। সন্ধ্যার মুখে এক কাপ গরম চা নিয়ে বসে পড়ুন আরাম করে।