যত্নে বড় হোক শিশু

আদরে–যতনে বেড়ে উঠুক শিশু। মডেল: মাহাদি, ছবি: নকশা
আদরে–যতনে বেড়ে উঠুক শিশু। মডেল: মাহাদি, ছবি: নকশা

চাঞ্চল্যই শিশুর বৈশিষ্ট্য। ৩-৫ বছর। চঞ্চলতার এক ‘উপযুক্ত’ সময়! শিশুর মানসিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ। শীতের সময় রোগবালাইও হতে পারে। চলুন, বিশেষজ্ঞদের কাছেই জেনে নিই শীতের সময়টাতে এই বয়সী শিশুর যত্ন–আত্তির খুঁটিনাটি।

পরিচ্ছন্নতায়
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার জানালেন, শিশুকে প্রতিদিন কুসুমগরম পানিতে গোসল (সপ্তাহে ১-২ দিন শ্যাম্পু, ২-৩ দিন সাবান) করাতে হবে। গোসলের পর লোশন লাগিয়ে দিন। তবে শরীর ময়লা হলে তিন দিনের বেশিও সাবান প্রয়োজনের ব্যবহার হতে পারে। খুব ঠান্ডায় এক দিন অন্তর গোসল করাতে পারেন।
বড় নখে নিজেই আঘাত পেতে পারে, নখের ময়লা মুখেও যেতে পারে। নখ কাটার সময় খেয়াল রাখুন, যেন চামড়া না কাটে কিংবা বেশি গভীরভাবে নখ কাটা না হয়। শিশুর স্বস্তি বুঝেই চুল রাখুন। দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করাতে ভুলবেন না। পরিচ্ছন্ন কাপড় পরাতে হবে (তবে শীত পড়ছে বলে অতিরিক্ত ভারী কাপড় বা আঁটসাঁট পোশাক নয়)। ধুলাময় কিংবা স্যাঁতসেঁতে স্থানে শিশুকে রাখবেন না। টাটকা খাবার দিন। খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। শিশুকেও পরিচ্ছন্নতা শেখান।

যত্নে শৈশব
শিশুর উপযোগী প্রসাধনী বেছে নিন। তবে তাদের সাজাতে নেইলপলিশ, লিপস্টিক, কুমকুম ব্যবহার করা যাবে না বলে জানান হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। বিশেষ করে বাজারের কেনা মেহেদি একেবারেই নয়। সপ্তাহে দুই দিন গোসলের আধঘণ্টা আগে মাথার ত্বক ও চুলে তেল মালিশ করতে পারেন। দিনে দুই-তিনবার মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোই যথেষ্ট। ঘুমের আগে পোশাক বদলে দিন, চুল বড় থাকলে বেণি করে দিন।

মানসিক বিকাশে
শিশুকে সুস্থ পরিবেশ দেওয়ার পরামর্শ দিলেন সাঈদা আনোয়ার। শিশুর সঙ্গে খেলুন, কথা বলুন, গল্প করুন। সম্ভব হলে খোলা জায়গায় খেলতে দিন। নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য হলেও শিশুর সামনে তা প্রকাশ করবেন না, উচ্চ স্বরে কথা বলবেন না কারও সঙ্গেই। শিশুকেও বকবেন না। মারধর তো নয়ই। আদর করে ঠিক আর ভুল বোঝান। সহিংসতামূলক খেলনা (যেমন বন্দুক) দেবেন না। বয়সের উপযোগী গঠনমূলক খেলনা দিন (বয়সের উপযোগী খেলনায় সাধারণত ব্যথা পাওয়ার ঝুঁকিও থাকে না)। খাবারের টেবিলে সবার সঙ্গে একই খাবার দিন। খাওয়ার সময় টেলিভিশন বা মুঠোফোনের ভিডিও দেখাবেন না, বরং নিজের হাতে খেতে শিখুক। দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি ডিজিটাল মিডিয়া যেন ব্যবহার না করে। শিশু রঙিন বই দেখুক, নিজের মনেই করুক রঙের ছড়াছড়ি। নিজের কাজ করতে শিখুক। ছোট পিরিচ এগিয়ে দেওয়া, ঠিক জায়গায় ময়লা ফেলার মতো কাজই ভবিষ্যৎকে করবে সহজ ও সুন্দর। মাঝেমধ্যে তাকে জড়িয়ে ধরুন, স্পর্শ করুন। আদরে মাখা স্পর্শ অনেক না–বলা কথা বলতে পারে। শিশুকে সময় দিন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নয়। সোনালি সময় নিমেষেই হারিয়ে যায়।

কিছু সতর্কতা
● ডেঙ্গু জ্বর এখনো হচ্ছে। দিনে-রাতে মশারির ব্যবহার জরুরি।
● বৈদ্যুতিক সামগ্রী সাবধানে রাখুন।
● ওষুধ, রাসায়নিক পদার্থ, জ্বালানি, ডিটারজেন্ট—সবই যেন শিশুর নাগালের বাইরে থাকে।