বিশেষ দিনগুলোর বিশেষ কথা

বিশেষ দিনগুলোতে মুখ ফিরিয়ে না থেকে সংকোচ কাটিয়ে সুস্থ থাকুন। ছবি: অধুনা
বিশেষ দিনগুলোতে মুখ ফিরিয়ে না থেকে সংকোচ কাটিয়ে সুস্থ থাকুন। ছবি: অধুনা

স্কুলজীবনের কথা। সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছি। মফস্বল শহরের ‘বালিকা’ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় কর্তৃ​পক্ষের সহযোগিতায় ঋতুস্রাব নিয়ে মেয়েদের জানার ব্যবস্থা করা হয়েছে এক দিন। আয়োজকদের সঙ্গে একজন নারী চিকিৎসক এসেছেন মেয়েদের সমস্যাগুলো শুনতে, পরামর্শ দিতে। আলোচনা হলো। তবে তার সিংহভাগই একতরফা। আনুমানিক ৬০ জন মেয়ের মধ্যে মাত্র দুজন মুখ খুলেছে বিষয়টি নিয়ে। আলোচনার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর, অর্থাৎ চিকিৎসক ‘একলা’ হওয়ার পর সমস্যার পসরা উন্মুক্ত করেছে ভুক্তভোগী মেয়েরা। বাংলাদেশের খুব সাধারণ একটা চিত্র।

‘ছোটাছুটি করো না। এই কদিন তোমার ছুটতে মানা’—পরল শিকল পায়ে। ‘কী এমন করেছি আমি? এ কি আমার অপরাধ?’ মন খারাপ করে ভাবে সদ্য ‘বড়’ হতে থাকা মেয়েটি। নারী জীবনের সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়—মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট সময়ে ঋতুস্রাব। তবে এ দেশে সাধারণত এই ‘সাধারণ’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ তেমন থাকে না। ভয়, লজ্জা আর সংকোচেই জীবনটা পেরিয়ে যায় অধিকাংশ মেয়ের। তবে এর স্বাস্থ্যগত দিকগুলো জানা প্রতিটি মেয়ের সুস্থতার জন্য জরুরি। নইলে অবহেলা আর অজ্ঞতার কারণে সৃষ্টি হতে পারে অনাকা​ঙ্ক্ষিত নানান সমস্যা।

সুস্থতাকে জানুন, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বেগম নাসরীন জানালেন, ২৮ দিন পরপর এক থেকে সাত দিন মাসিকের রক্তপাত স্বাভাবিক। তবে এই সময়ের মধ্যে অধিক রক্তপাত হলে, চাকা চাকা রক্তপাত হলে কিংবা সাত দিনের বেশি রক্তপাত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। ২৮ দিনের ব্যবধানটাও কমবেশি হতে পারে (সাত দিন এগোতে বা পেছাতে পারে), তবে এর চেয়ে বেশি সময় এদিক-ওদিক হলে চিকিৎসকের কাছে যান। সাদা স্রাব স্বাভাবিক, তবে এর সঙ্গে চুলকানি থাকলে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। 

 স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার করাই ভালো। সারা দিনে অন্তত তিন-চারটা প্যাড ব্যবহার করুন (রক্তপাতের পরিমাণের ভিত্তিতে)। অর্থাৎ, একটি প্যাড পাঁচ–ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। একটি ভেজা প্যাড বেশিক্ষণ রাখলে তাতে জীবাণু জন্মাতে পারে। মাসিকের প্রথম দিকে বা শেষ দিকে শুধু রক্তের ফোঁটার দাগ প্যাডে দেখা গেলে তখন দিনে এক-দুটি ব্যবহার করতে পারেন। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সুযোগ নিতান্ত না পেলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় (সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে ধোয়া) এই নিয়মে ব্যবহার করতে হবে।

সাধারণত স্কুল ড্রেস সপ্তাহে এক-দুবারের বেশি ধোয়া হয় না, তবে এই সময় ডিটারজেন্ট দিয়ে (যে পোশাকই পরা হোক না কেন, অন্তত পাজামা) ধুতে হবে প্রতিদিনই। নইলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি রয়ে যায়।

এই সময় ব্যায়াম?

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান শামসুন নাহার জানালেন, কখনো সন্তান ধারণ করেননি, এমন মেয়েরা মাসিকের সময় স্বাভাবিকভাবেই ব্যায়াম করতে পারবেন। তবে যাঁদের সন্তান রয়েছে, তাঁদের জন্য নিয়মের খানিক হেরফের আছে। মোটামুটিভাবে বিগত পাঁচ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে কোনো সন্তান ধারণ না করলে (এমনকি গর্ভপাতও নয়) তাঁর জন্য স্বাভাবিক নিয়মমাফিক ব্যায়ামে কোনো বাধা নেই মাসিকের সময়। তবে ছয় বছরের মধ্যে কেউ সন্তান ধারণ করে থাকলে (এমনকি গর্ভপাত হয়ে থাকলেও) মাসিকের প্রথম দুদিন কোনো ধরনের ব্যায়াম না করাই ভালো। দুদিন পর থেকে ব্যায়াম করতে বাধা নেই। ব্যায়ামে রক্তপাতের পরিমাণ সামান্য বাড়তে পারে, তবে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। আবার অনেকের ঋতুস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাঁরা ব্যায়াম করলে উপকার পাবেন। 

বিশেষ ব্যায়াম

কে কখন ব্যায়াম করতে পারবেন, তা তো জানা হলো। আবার এ সময় অনেকে তলপেটে ব্যথাও অনুভব করেন। সেই সমস্যা কমাতে তলপেটে উষ্ণ কিছু চেপে রাখা ছাড়া ব্যায়ামেও খানিকটা উপশম পেতে পারেন। অধ্যাপক শামসুন নাহার জানালেন এমন ব্যায়ামের নিয়ম—

● চিত হয়ে শুতে হবে। কোমরের নিচে বালিশ থাকবে। বালিশে চাপ দিয়ে ১ থেকে ৬ বা ১০ পর্যন্ত (৬-১০ সেকেন্ড) গুনতে হবে। এরপর চাপ স্বাভাবিক করে ফেলতে হবে। ১০ সেকেন্ড স্বাভাবিক অবস্থায় থাকুন। পুনরাবৃত্তি করুন।

● চিত হয়ে সোজাভাবে শুয়ে শরীর টান টান করুন। ৬ সেকেন্ড পর শরীর শিথিল করুন। ১০ সেকেন্ড স্বাভাবিক অবস্থায় থাকুন। পুনরাবৃত্তি করুন।

● ব্যায়ামগুলো সকালে ১০ বার, বিকেলে ১০ বার করে করতে হবে। দুটি ব্যায়ামই অভ্যাস করুন, উপকার পাবেন।