সুস্থ থাক দাঁত, সুন্দর হোক হাসি

মন খুলে হাসতে দাঁতের যত্ন নিন। মডেল: তানহা, ছবি: অধুনা
মন খুলে হাসতে দাঁতের যত্ন নিন। মডেল: তানহা, ছবি: অধুনা

সুন্দর হাসি অনেক পরিস্থিতি সহজ করে দেয়। মনের প্রফুল্লভাব ধরা দেয় হাসির হুল্লোড়ে। এমন প্রাণখোলা হাসির জন্য মনও যেমন নানা নাগরিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া চাই, দাঁতও হওয়া চাই নীরোগ। যাঁর দাঁত নেই, তাঁর কথা অবশ্য আলাদা। এ জন্যই বোধ হয় ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝা’ প্রবাদটি এসেছে। বিজ্ঞাপনচিত্রে তো দাঁত সুস্থ না থাকার জন্য ঠিকভাবে কথা পর্যন্ত বলতে না পারার দৃশ্যও দেখা যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন জানালেন, দাঁতের সুস্থতায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে নাশতার পর দাঁত ব্রাশ করতে হবে। আর সেটি অবশ্যই সঠিক নিয়মে। ওপরের পাটির দাঁত ব্রাশ করুন ওপর থেকে নিচের দিকে, নিচের পাটির দাঁত ব্রাশ করুন নিচ থেকে ওপরের দিকে। প্রতিবেলা দু-তিন মিনিটের বেশি সময় দেবেন না দাঁত ব্রাশের জন্য। রাতে ঘুমের আগে মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন, মুখে গন্ধ হবে না। দুই দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে দাঁতের ফ্লস ব্যবহারের মাধ্যমে তা বের করে ফেলুন।

প্রচলিত কিছু কথার প্রকৃত তথ্য জানিয়েছেন অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন।

‘চকলেট খেয়ো না বাবু, দাঁতে পোকা হয়ে যাবে’—ছোটদের প্রতি প্রায়ই এমন কথা বলতে শোনা যায়। দাঁতে পোকা বলতে মূলত ক্ষয়রোগকেই বোঝানো হয়। দাঁতে খাবার আটকে থেকে যাওয়াই যে রোগের মূল কারণ। যেসব খাবার সহজে দাঁতে আটকে থাকে, সেগুলো এবং চিনিতেই এ সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। এমন সমস্যা প্রতিরোধ করাই ভালো। আর যাঁরা এ রকম সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দাঁতের সার্বিক অবস্থা ভালো থাকতে থাকতে চিকিৎসা নিলে এ রোগ সেরে যায়।

ঠান্ডা বা গরম খাবার দাঁতে লাগলে যদি দাঁত শিরশির করে, তাকে ‘সেনসিটিভিটি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করা কিংবা কয়লা, পাউডার প্রভৃতি ব্যবহারের ফলে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এ রকম হলে অম্লজাতীয় খাবার (লেবুর মতো) কম খেতে হবে। চিকিৎসা নিলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।

জেনে নিন
ভালো টুথব্রাশ ব্যবহার করুন। টুথব্রাশের ব্রিসল এবড়োখেবড়ো যেন না হয়। ছয় মাস পরপর পরিবর্তন করুন অবশ্যই।
ভাঙা বা চোখা দাঁত থাকলে সেটির জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চোখা বা ভাঙা দাঁতের কারণে গাল বা জিবে ঘা হতে পারে, ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
তামাক, গুল, জর্দা কখনোই নয়।
শিশুর দুধে চিনি কম দিন। শৈশব থেকেই দাঁতের যত্ন নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কার কাছে যাবেন?
চিকিৎসার জন্য কার কাছে যাবেন? দাঁতের চিকিৎসা কেবল স্বীকৃত ডিগ্রিধারী একজন দন্তচিকিৎসকই সঠিকভাবে করতে পারবেন। এমবিবিএস না করলে যেমন কেউ চিকিৎসকই নন, তেমনি বিডিএস ডিগ্রি অর্জন না করলে কেউ দন্তচিকিৎসকই নন। ভুয়া দন্তচিকিৎসকের (যাঁর এ কাজের জন্য প্রাথমিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই নেই) কাছে গেলে ভুল চিকিৎসাই পেতে হবে। অমুক ব্যক্তি একজনের চিকিৎসায় ভালো হয়েছে, তাই আমিও যাব তাঁরই কাছে—এ ধরনের সিদ্ধান্ত সব সময় ঠিক না-ও হতে পারে। যাঁর কাছে যাচ্ছেন, তিনি আসলেই দন্তচিকিৎসক কি না, তা জানুন। প্রয়োজনে তাঁর নিবন্ধন নম্বর জানুন, যা বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) থেকে দেওয়া হয়। খুব সহজেই এই নম্বরটির সত্যতা যাচাই করা যায় বিএমডিসির ওয়েসবাইট থেকে। বিএমডিসি থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল প্র্যাকটিশনার অর্থাৎ চিকিৎসকদের নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হয়।

গবেষণালব্ধ কিছু তথ্য ও পরামর্শ
ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে দাঁতের আশপাশের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণের হার বেশি। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের দাঁতের প্রতি বেশি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যেও দাঁতের ক্ষয়রোগ দেখা যায়। তাই সচেতন হতে হবে, দাঁতের যত্ন নিতে হবে একদম ছোটবেলা থেকেই।