সাজে সহজাত ধারা

চোখ ও মুখের ত্বকে ন্যাচারাল মেকআপ আর ঠোঁটে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার ছিল এই বছরের মেকআপ ট্রেন্ডে। মডেল: স্পর্শিয়া
চোখ ও মুখের ত্বকে ন্যাচারাল মেকআপ আর ঠোঁটে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার ছিল এই বছরের মেকআপ ট্রেন্ডে। মডেল: স্পর্শিয়া

২০১৯ সালে বিউটি বুকে যোগ হয়েছে নিত্যনতুন বিস্ময়। বিয়োজনের তালিকাটাও বেশ বড়। কৌশল আর টুলের সঙ্গে পাল্টেছে প্রয়োগের সূত্র। পিছিয়ে ছিল না ফ্যাশনও। ২০১৯ সালের সাজসজ্জা বা ফ্যাশন দুনিয়ার পরিবর্তন নিয়েই এই সমীকরণ।

চুলে বব পিনের কারুকার্য। মডেল: ওশিন ও সূর্য
চুলে বব পিনের কারুকার্য। মডেল: ওশিন ও সূর্য

এই বছর মেকআপে বেজ ছিল একেবারেই ম্যাট, ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশন নয়। মেকআপ বেজ তৈরিতে ট্রেন্ডের শীর্ষে ছিল বেয়ারলি দেয়ার কাভারেজ দেওয়া পণ্যগুলো। টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার, বিবি অথবা সিসি ক্রিমের পরতে ত্বকে তৈরি করা হয়েছে শিশিরসিক্ত প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। যা দেখে মনে হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল আভা বের হচ্ছে ত্বকের ভেতর থেকে। এ বছরেও হাইলাইটারে বুঁদ ছিল ফ্যাশনসচেতনরা। কমেছে গাঢ় কনট্যুরিংয়ের ব্যবহার। বরং প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ রেখে, চেহারার বাঁক বুঝে ব্যবহারে আরও সুন্দর দেখাতেই মনোযোগ বেড়েছে। চোখ বোল্ড নয়, ২০১৯ ছিল ভ্রু জোড়াকে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর দেখানোর বছর। তাই কাটতি কম ছিল ভ্রু জেল আর ওয়াক্সের। তার বদলে নিজের আসল ভ্রু জোড়াকে আরও সুন্দর দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ব্রাও পাউডার, আর পেনসিলের ছোট ছোট স্ট্রোক। 

রুপালি গয়না আর সহজাত সাজ এ বছর বেশ জনপ্রিয় ছিল।  মডেল: রিবা
রুপালি গয়না আর সহজাত সাজ এ বছর বেশ জনপ্রিয় ছিল। মডেল: রিবা

আইশ্যাডোতে রঙের বাড়াবাড়ি ছিল না একদমই। কালার ব্লকিংয়ের বদলে প্যাস্টেলে চোখ সাজাতেই বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। আইশ্যাডোতে গ্লস ফর্মুলার রমরমা ছিল ২০১৯ জুড়ে। ছিল গ্লিটার আর শিমারও। তবে বহুরঙের মাল্টিকালারের বদলে প্রাধান্য ছিল মনোকালারের। অনেকে তো পুরো পাতাজুড়ে ব্যবহার না করে শুধু চোখের ভেতরের কোণে ব্যবহার করেছেন এগুলো। আইলাইনারের টানে অনেক বেশি নাটকীয়তা না রেখে সটান সোজা ভাবই ছিল এ ধারার শীর্ষে। তবে বাইরের কোণে ফ্লিক টেনেছেন অনেকেই। প্রয়োগে নাটকীয়তা না থাকলেও আইলাইনারের রং বাছাইয়ে তা উশুল করে নিয়েছেন। গোলাপি, লাল, কমলায় রঙিন হয়েছে চোখের রেখা। তা ছড়িয়েছে পাপড়ি অবধি, রঙিন মাসকারার ব্যবহারে। ঠোঁটে ম্যাটের বদলে আলো ছড়িয়েছে গ্লসের উজ্জ্বলতা। ননস্টিক এসব লিপকালারের রমরমা ছিল বছরজুড়ে। ক্লিয়ার ছাড়াও তালিকায় ছিল পিংক আর পিচ ঘেঁষা টোনগুলো। লিপস্টিক প্রয়োগে বেশ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছিল ২০১৯–এর পুরোটাজুড়ে। ওমব্রে, কোরিয়ান গ্রেডিয়েন্ট, টু টোন লিপে বুঁদ ছিল সৌন্দর্যবিশ্ব। রঙের ঝলকানি ছিল নজরকাড়া। একদম রং ছাড়া ঠোঁট যেমন ছিল পছন্দের তালিকায় তেমনি ফুশিয়া, চেরি, অক্সব্লাডও ছিল। ত্বকের যত্নে সৌন্দর্যসচেতনরা ঝুঁকেছেন পরিবেশবান্ধব সৌন্দর্যপণ্যের দিকে। বাজারে পাওয়া রাসায়নিক পদার্থে তৈরি প্রসাধন পণ্যগুলোর প্রাকৃতিক সংস্করণে বাজার ছেয়ে ছিল বছরজুড়ে। একের ভেতর দুই বা তিন—এমন গুণসম্পন্ন পণ্য ব্যবহারে পরিবেশ বাঁচে দূষণ থেকে, পকেটেও চাপ কম পড়ে। ত্বকযত্নের পণ্যে ফর্মুলার ক্ষেত্রে লিকুইড আর জেলই ছিল এগিয়ে। চুলের কাটে বছরের সেরা হেয়ারস্টাইলগুলোর শীর্ষে ছিল বব। ব্ল্যান্ট, অ্যাঙ্গোলার আর অ্যাসিমেট্রিক ববের পাশাপাশি ছিল শর্ট বব। কাঁধ থেকে একটু ওপরে উঠে যাওয়া লং ববের জনপ্রিয়তা ছিল বছরজুড়ে। পাশাপাশি চুলের সামনের কাটে এগিয়ে ছিল বেবি ব্যাঙ্গস। ২০১৯ এ হেয়ারস্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চমক যোগ করেছে অ্যাকসেসরিজ। হেয়ার পিনের ব্যবহার হয়েছে চোখে পড়ার মতো। তা–ও একটা বা দুটো নয়, পুরো সেট একেবারে চুলে বেঁধে নেওয়ার চল দেখা গেছে বছরজুড়ে। পার্লে তৈরি হেয়ার ক্লিপও ব্যবহৃত হয়েছে দেদার।

বছরের মাঝামাঝি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কাঁধ অবধি লং ববের ছাঁট। মডেল: শবনম ফারিয়া
বছরের মাঝামাঝি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কাঁধ অবধি লং ববের ছাঁট। মডেল: শবনম ফারিয়া

মিনিম্যালিজম মাতিয়েছে বিয়ের সাজও। ২০১৯ জুড়ে খেয়াল রাখা হয়েছে মেকআপের আড়ালে আসল মানুষটি যেন হারিয়ে না যায়। এবারে বউয়ের সাজে বেজ তৈরিতে শিমার বা গ্লসির বদলে প্রাধান্য ছিল সেমি শিমার, সেমি ম্যাট, ডিউয়ি ফিনিশ পণ্যের। চোখ সাজাতে আপার এবং লোয়ার ওয়াটার লাইন জুড়ে ছিল মোটা কাজলের টান। সঙ্গে ছিল স্মোকি আর নিউট্রাল মেটালিক আইশ্যাডোর যোগ। ঠোঁটের জন্য কনেদের পছন্দের তালিকায় ছিল ট্যান, পিংক ন্যুড, পেল রোজ উড আর জিঞ্জার শেডের লিপকালার। ডার্ক লিপকালার চার্টে দেখা গেছে মেহগনি, ডার্ক চেরি, চকলেট আর বারগ্যান্ডির নাম। কপার, গোল্ড আর ব্রোঞ্জের মতো কড়া রংগুলোর পাশাপাশি কনের চোখে রং ছড়িয়েছে ডাস্টি পিচ, পেল ব্রোঞ্জ, মেটালিক ক্রিম আর পোরসেলিনের মেটালিক ভার্সনগুলো। ত্বকে প্রাণোচ্ছল দীপ্তি ছড়িয়েছে হাইলাইটার আর তাতে প্রাণময়তা এনেছে গোলাপি ব্লাশনের যোগ। ব্যস! এতেই সেজেছে গেল বছরের কনেরা। 

আইশ্যাডেতে ছিল নানা রঙের ব্যবহার
আইশ্যাডেতে ছিল নানা রঙের ব্যবহার

নুজহাত খান 
পরিচালক, পারসোনা