খাবারে সচেতনতার দশক

গত এক দশকে জীবনযাত্রায় দেখা গেছে নানা পরিবর্তন। বাদ যায়নি খাবারও। পুরো বিশ্বেই মানুষ ঝুঁকেছে স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে। তেল, মসলা কম ব্যবহার করে রান্নার চেষ্টা গত দশক থেকেই। সুসি, সালাদ, মোমো অন্যতম উদাহরণ। রেসিপি দিয়েছেন শেফ টনি খান।

টনি খান’স কিউলিনারি ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টের অধ্যক্ষ এবং খান’স কিচেন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও রন্ধনবিষয়ক পরিচালক শেফ টনি খান। কর্মজীবনের শুরু সিঙ্গাপুরের শাংরি লা হোটেলে। ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলে করপোরেট এক্সিকিউটিভ শেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টে। কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, সৌদি আরবসহ নানা দেশে। ‘বিশ্বের সেরা ১০ শেফ’ তালিকায় স্থান করে নেন ১৯৯২ সালে।

সামুদ্রিক বার্গার
সামুদ্রিক বার্গার

সামুদ্রিক বার্গার

উপকরণ: মেশানো সামুদ্রিক মাছ ১ কেজি, পেঁয়াজ ফুল মিহি কুচি ১ কাপ, তুলসি পাতা ১ কাপ, সেলেরি পাতা মিহি কুচি সিকি কাপ, কাজুন সিজনিং ১ চা–চামচ (ঐচ্ছিক), টক ক্রিম ১ কাপ, দুধ পরিমাণমতো, লাল পেঁয়াজ মিহি কুচি ১ টেবিল চামচ, লেবুকুচি ১ চা–চামচ, স্মোকড পাপড়িকা আধা চা–চামচ, ক্যানোলা অয়েল ১ টেবিল চামচ, হোল-হুইট হ্যামবার্গার বান (টোস্ট করা) ৪টি ও বাঁধাকপিকুচি ১ কাপ।

 প্রণালি: ফুড প্রসেসরে ৬টি চিংড়ি নিয়ে পিউরি করে পাত্রে নিন। বাকি চিংড়ি এক ইঞ্চির ৪ ভাগের ১ ভাগ আকারে কেটে এতে যোগ করুন। স্যালিয়ন, তুলসি পাতা, সেলেরি ও কাজুন সিজনিং মেশান। হালকা ভেজা হাতে ৪টি প্যাটি তৈরি করে ২০ মিনিট ঠান্ডা করুন। আলাদা পাত্রে টক ক্রিম, দুধ, শ্যালট, কেপার, পাপড়িকা ও তাবাস্কো ঘন সালাদ ড্রেসিংয়ের মতো করে নিন। ননস্টিক পাত্রে মাঝারি আঁচে তেল গরম করে প্যাটিগুলো দিন। পরিপূর্ণভাবে বাদামি হওয়া পর্যন্ত রাখুন ( দুই পাশ, ৫ মিনিট করে)। ১টি বানে ১টি প্যাটি, এক–চতুর্থাংশ লেটুস ও সস দিয়ে বার্গার তৈরি করুন।

মাংস ছাড়া পাস্তা
মাংস ছাড়া পাস্তা

মাংস ছাড়া পাস্তা

উপকরণ: টিউব পাস্তা ২০০ গ্রাম, কুচি করা পারমিজান পনির ১ টেবিল চামচ।

রোস্ট করা সবজির জন্য: ছোট বেগুন ১টি, জুকিনি (মাঝারি, ২টি) বা মিষ্টিকুমড়া ১০০ গ্রাম, টমেটো (২০০ গ্রাম, খোসাসহ), পেঁয়াজ (মাঝারি, ১টি), বীজ ছাড়ানো ছোট লাল মরিচ ১টি, রসুন ২ কোয়া, কালো জলপাই (কুচি করা) ৫০ গ্রাম, ভিনেগার ১ টেবিল চামচ, এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল ৩ টেবিল চামচ, মোজারেলা ৮০ গ্রাম (গ্রেট করা), লবণ, কালো গোলমরিচের গুঁড়া (সদ্য চূর্ণ করা), ছোট মাছের ফিলে (ঐচ্ছিক, পানি ঝরানো, কুচি করা) ৪টি।

পনির সসের জন্য: দুধ ২ কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, মাখন ১ টেবিল চামচ, সামান্য গোলমরিচ, পারমিজান পনিরের মিহি কুচি ৫০ গ্রাম, জায়ফল (সদ্য কুচি করা) সামান্য, লবণ, কালো গোলমরিচের গুঁড়া (সদ্য চূর্ণ করা)।

 প্রণালি: পনির সস তৈরির জন্য দুধ, ময়দা, মাখন, গোলমরিচের গুঁড়া মাঝারি আঁচে দিন। মৃদু আঁচে এনে বেলুন হুইস্ক দিয়ে নাড়ুন সস তৈরি না হওয়া পর্যন্ত। আরও ৫ মিনিট রেখে পনির দিয়ে আবার নাড়ুন। পনির গলে গেলে লবণ, কালো গোলমরিচের গুঁড়া ও জায়ফল দিন। খোসাসহ ৪ সেন্টিমিটার আকারে জুকিনি ও বেগুন কেটে ঝাঁজরিতে স্তরে স্তরে রাখুন। প্রতি স্তরের মধ্যে লবণ ছিটাতে হবে। প্লেট দিয়ে ঢাকুন। এবার প্লেটের ওপর ভারী কিছু রাখুন। এক ঘণ্টা পর চেপে চেপে শুকনো করে নিন একটি কাপড়ের মাধ্যমে। ওভেন সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় প্রি-হিট করুন। টমেটো ৪ ভাগ করুন, পেঁয়াজ ও মরিচ ৪ সেন্টিমিটার আকারে কেটে নিন। বেকিং ট্রেতে সব সবজি নিয়ে জলপাই তেল ও রসুনকুচি ছিটিয়ে দিন (ভালোভাবে মিশিয়ে ছড়িয়ে দিন)। লবণ ও কালো গোলমরিচের গুঁড়া দিন। ওভেনের ‘হাই শেলফে’ ৩০-৪০ মিনিট রোস্ট করুন (বাদামি হবে ও প্রান্ত পুড়ে আসবে)।

সবজি তৈরি হওয়ার ৫ মিনিট আগে ঠিক ৬ মিনিটের জন্য ফুটন্ত পানিতে পাস্তা দিন। পানি ঝরিয়ে সবজি, জলপাই, মাছ, কেইপার ও পনির সস দিন। এবার তাপমাত্রা কমিয়ে গ্যাস চিহ্ন ৬ দাগে আনুন (৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস), ওভেনের দরজা খোলা রাখুন। গ্রাটিন ডিশে এক–তৃতীয়াংশ করে নিয়ে স্তর সাজান। প্রতি স্তরের ওপর মোজারেলা দিন। পারমিজান পনির ছড়িয়ে দিন। ৬ মিনিট বেক করুন।

সুশি রোল
সুশি রোল

সুশি রোল

উপকরণ: মাঝারি দানার সুশি চাল দেড় কাপ, পানি ২ কাপ, রাইস ভিনেগার ৬ টেবিল চামচ, মিহি চিনি ২ টেবিল চামচ, লবণ ২ চা-চামচ, বড় শসা ১টি (বীজ ছাড়ানো), গাজর ২টি (খোসা ছাড়ানো), নোরি শিট ৪-৬টি ও তিল পরিমাণমতো।

প্রণালি: চালের প্যাকেটে লেখা নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করে ফেলুন। ওই সময়েই অন্য পাত্রে রাইস ভিনেগার, চিনি ও লবণ মধ্যম আঁচে নাড়ুন (চিনি গলে যাওয়া পর্যন্ত)। মিশ্রণ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চাল হয়ে গেলে তাতে এই মিশ্রণ দিয়ে কাঁটাচামচের সাহায্যে ফেটান। বেকিং শিট বা ট্রেতে চাল নিয়ে ঠান্ডা করুন। চিকন করে সবজি কাটুন। বাঁশের ম্যাট বিছিয়ে এর ওপর প্লাস্টিকের ম্যাট রাখুন। একটা নরি শিট রাখুন এর ওপর (অমসৃণ দিক ওপরে)। ভেজা হাতে এক মুঠো চাল নিয়ে নরির মাঝখানে রাখুন। চারপাশে ছড়াতে থাকুন, আরও চাল নিন। স্তরটি ১ সেন্টিমিটার পুরু হবে, প্রান্ত থেকে আধা ইঞ্চি দূরত্ব পর্যন্ত। এর ওপর তিলের স্তর করুন। প্লাস্টিকে মোড়ান (চারপাশে ১ ইঞ্চি জায়গা রেখে)। ওপরে এক হাত রেখে সাবধানে উল্টে দিন। এবার ওপরের প্লাস্টিক সরান। পছন্দমতো উপকরণ (এখানে সবজি) দিন মাঝখানে। নরি রোল করতে থাকুন মাঝারি চাপ দিয়ে, নিচের প্রান্তের দিকে ভাঁজ করতে থাকুন। প্লাস্টিক ও ম্যাট সরাতে থাকুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে প্রান্ত চেপে দিন। রোল অর্ধেক করে নিয়ে এরপর ৬-৮ টুকরা করুন। সয়া সস দিয়ে পরিবেশন করুন সুশি রোল।

সবজি পনিরের ঝাল সালাদ
সবজি পনিরের ঝাল সালাদ

সবজি পনিরের ঝাল সালাদ

উপকরণ: জুকিনি (ওপর-নিচ বাদ দিয়ে) ১টি, ছোট গাজর (ওপর-নিচ বাদ দিয়ে) ১টি, অ্যাসপ্যারাগাস (শক্ত প্রান্ত বাদে) ১ আঁটি, কয়েক রকম ক্যাপসিকাম (ছোট) ১টি করে, এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল সিকি কাপ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, কালো গোলমরিচের গুঁড়া (সদ্য চূর্ণ করা) আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ (বড়) ১টি, সেদ্ধ ডিম ২টি, পারমিজান বা পিকোরিনো পনির (চেঁছে নেওয়া) ২০০ গ্রাম।

প্রণালি: পিলার বা ম্যান্ডোলিনের সাহায্যে সবজিগুলো ফিতার মতো করে কেটে নিন। তবে তির্যকভাবে কাটুন অ্যাসপ্যারাগ্যাস। ফুটন্ত পানিতে অ্যাসপ্যারাগাস দিন, উজ্জ্বল সবুজ হলেই উঠিয়ে বরফপানির পাত্রে নিন। ১ মিনিট পর পানি ঝরিয়ে শতমূলী ও অন্যান্য সবজি মেশান। একটি পাত্রে জলপাই তেল, লেবুর রস, লবণ ও গোলমরিচ নিয়ে নাড়ুন। সবজির ওপর ছিটিয়ে দিন। ঝাঁকিয়ে মেশানোর পর পনির দিন।

মেশানো সুশি–সাশিমির স্বাদ

উপকরণ: সাশিমি গ্রেড টুনা, স্যামন ও কিংফিশ ১০০ গ্রাম করে (টাটকা, ৮ টুকরা করা), গাজর, শসা ও সাদা মুলা আধা কাপ করে (ফালি করে নেওয়া), ওয়াসাবি পেস্ট, জাপানিজ পিকলড আদা ২ টেবিল চামচ, লেবুর টুকরা, ড্রায়েড কম্বু সিউইড ৪ বর্গসেন্টিমিটার (সাজানোর জন্য)।

ভিনেগার চালের জন্য: ছোট দানার চাল ৩৫০ গ্রাম, জাপানিজ লাল ভিনেগার ১০০ মিলি, সাদা চিনি ৭৫ গ্রাম বা ১ কাপের এক-তৃতীয়াংশ।

প্রণালি: ঠান্ডা পানির নিচে চাল ভালোভাবে নাড়তে থাকুন (পরিষ্কার পানি না আসা পর্যন্ত)। চুলায় চাল ও ৪৫০ মিলিলিটার পানি দিন। ফুটলে মৃদু আঁচে রান্না করুন। নামানোর ১৫ মিনিট পর বাড়তি পানি (থাকলে) ঝরান। ৪ টেবিল চামচ ভিনেগারে চিনি ও ১ টেবিল চামচ লবণ দিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়ুন (চিনি গলা পর্যন্ত)। কম্বু দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। ঠান্ডা হলে বাকি ভিনেগারে নাড়ুন। একটা পাত্রে চাল (উষ্ণ অবস্থায়) নিয়ে ৪ টেবিল চামচ ভিনেগার মিশ্রণ দিয়ে কাঠের চওড়া চামচের সাহায্যে ভালোভাবে নাড়ুন (চালে ভিনেগারের প্রলেপ হবে)। কম্বু ফেলে ভেজা কাপড় (নিংড়ানো) দিয়ে চাল ঢেকে রাখুন। ভেজা হাতে চাল ৯টি গুঁড়ির মতো বানান, এগুলোর ওপর মাছের টুকরা দিয়ে নিগিরি সুশি তৈরি করুন। বেঁচে যাওয়া মাছ ও সাজানোর উপকরণ দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করুন।

স্টিমড মোমো
স্টিমড মোমো

স্টিমড মোমো

উপকরণ: ময়দা ৪৫০ গ্রাম, পরিশোধিত তেল ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ (বড়) ১টি, আদা ১ ইঞ্চি করে ১টি, পানি পরিমাণমতো, সেদ্ধ মুরগি ৩০০ গ্রাম, কাঁচা মরিচ ১টি, লবণ আধা চা-চামচ, সয়া সস ১ চা-চামচ।

প্রণালি: সবজি ও মাংস কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিন। সবজিগুলো আলাদা কেটে রাখুন। সামান্য লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে মুরগি সেদ্ধ করুন। সুঘ্রাণের জন্য ১ চা-চামচ আদা, রসুন ও মরিচবাটা দিতে পারেন। সেদ্ধ মুরগি মিহি করে কাটুন। পাত্রে তেল নিয়ে তাতে ময়দা ও লবণ দিন। পানি দিয়ে ভালোভাবে ডো করুন। অন্য পাত্রে মুরগি ও সবজি মিশিয়ে সয়া সস দিয়ে নাড়ুন। এবার ডো থেকে ছোট বল বানিয়ে বর্গাকারে বেলে মুরগির পুর দিন। প্রান্তগুলো কাছে এনে মম বানান। স্টিম করুন ২০ মিনিট বা প্রয়োজনমতো। সুঘ্রাণের জন্য অ্যারোমেটিক চিকেন স্টক দিতে পারেন।