শীতের ছাদবাগান

শীতের ছাদবাগানে চাই বিশেষ পরিচর্যা। ছবি: নকশা
শীতের ছাদবাগানে চাই বিশেষ পরিচর্যা। ছবি: নকশা

যেকোনো বাগানের তিনটি প্রধান উপকরণ হলো পানি, মাটি ও সূর্যের আলো। ফুল, ফল ও সবজি পাওয়ার জন্য শীতকাল উপযুক্ত একটি সময়। কারণ, মাটির পিএইচ বা গুণাগুণে ভারসাম্য ও শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মাটির আর্দ্রতা বেশি সময় থাকে। শীতে গাছে পানির প্রয়োজনও কম।

শীতকালে ছাদবাগানের পরিচর্যা অন্য যেকোনো সময় থেকে একটু বেশি নিতে হবে। শীতের সময় হঠাৎ তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত কুয়াশায় মাটিজনিত রোগ খুব দ্রুত ছড়ায়। মাটিতে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া শীতকালীন গাছে বৃদ্ধি বেশি হয়। ফুল, সবজি ও ফলের ফলনও হয় অল্প কিছুদিনের মধ্যে। এ ছাড়া অন্য ঋতুর গাছগুলোও বেশ ঝুঁকিতে থাকে। প্রতিদিনই এ কারণে পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে জানান নগর কৃষির একজন উদ্যোক্তা আবু ইউসুফ শিহাব।

যা করবেন ও করবেন না 

● শীতে সবজি ও ফলের জন্য সারের ব্যবহার একটু বেশি দরকার। কারণ, গাছের বৃদ্ধি ও ফল দেওয়ার কারণে গাছের খাদ্য বেশি প্রয়োজন হয়। ফুল গাছে তুলনামূলক কিছুটা কম সার প্রয়োগ করতে হবে। 

● সঠিক সময়ে ও পরিমাণমতো সার প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন। গাছ লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর যখন গাছ ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হবে, তখনই সার প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া গাছে ফল ধরার আগে বা ফুল ধরলে আরও একবার সার প্রয়োগ করতে হবে। 

● শীতকালে গাছে জৈব সার বা কেঁচো সার ব্যবহার করুন। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যেহেতু এই সারে কোনো রাসায়নিক পদার্থ থাকে না, তাই ফল ও সবজির পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। 

● শীতকালীন গাছ ছাড়া অন্যান্য গাছ এ সময়ে বাড়ে কম। তাই গাছ ছাঁটাইয়ের একেবারেই প্রয়োজন নেই এই সময়ে। শুরুতে গাছের আগাছা ফেলে পরিষ্কার করে নিতে হবে অবশ্যই। 

● সকালে ও বিকেলে পানি দেওয়াই ভালো। এক বেলা দিলে বিকেলের সময়টাই বেছে নিতে হবে। তবে টবে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না কখনোই।

● শীতে মাটির ছত্রাকজনিত রোগ যেহেতু বেশি ছড়ায়, তাই শীতের শুরুতেই নতুন মাটিতে ছত্রাকরোধী কীটনাশক মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ব্যবহার করতে হবে। গাছের পাতাতেও প্রয়োজনে স্প্রে করে নিতে পারেন। অন্তত মাসে দুবার প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। 

● গাছের মাটি থেকে আর্দ্রতা যেন বেরিয়ে যেতে না পারে, তাই শুকনো পাতা বা খড় দিয়ে গোড়া ঢেকে দিন। এতে গাছের গোড়ায় বেশি কুয়াশাও লাগবে না, আবার আর্দ্রতাও বজায় থাকবে। 

● কোনো গাছে পোকা আক্রমণ করলে সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে ফেলুন। কারণ, শীতে এই ধরনের পোকা দ্রুত অন্য গাছের ক্ষতি করে।

● শীতে সূর্যের আলো যেহেতু কম থাকে, গাছের সালোকসংশ্লেষণ ভালো হওয়ার জন্য রাতে একটু গরম লাইটের ব্যবহার করা যেতে পারে। 

● শীতে অনেক সময়ে পচন রোগ দেখা দেয়। সেই অংশটি কেটে ফেলুন বা প্রয়োজনে পুরো গাছ তুলে ফেলুন।

● সবজি ও ফল গাছের ফল যখন ৯০ ভাগ পরিপূর্ণ হবে, তখন তুলে ফেলা ভালো। 

● শীতকালে কাট ওরম, মিলিবাগ, ফ্রুট ফ্লাই, ফ্রুট বোরের, শ্যুট বোরের ইত্যাদি ছত্রাক ও ভাইরাসজনিত রোগ হতে পারে। ছাদবাগানের গাছে এই ধরনের রোগ প্রতিকারের জন্য সাইপারমেথরিন, ম্যানকোজেব ও মালাথিওন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

 সারা বছর ছাদবাগান না করলেও শীতে অনেকেই ছাদবাগানে আগ্রহী হন। আবার আগে থেকেই যাঁদের ছাদবাগান রয়েছে, তাঁরাও শীতের ফুল, ফল ও সবজি গাছ লাগান। ছাদবাগানের পরিবেশ হয় অন্য যেকোনো বাগানের থেকে অনেকটাই আলাদা। তাই শীতকালেও ছাদবাগানে পূর্ণতা আনতে দরকার বিশেষ যত্নের।