ঘরের কোনায় কোনায়

আলোর ব্যবহারে আসবে শৈল্পিক আবহ। মডেল: লিন্ডা
আলোর ব্যবহারে আসবে শৈল্পিক আবহ। মডেল: লিন্ডা

‘ঘরকুনো’ না হলেও ঘরের বিভিন্ন কোনা সাজাতে আর পরিষ্কার রাখতে কোনো না কোনো ভাবনা নিশ্চয়ই ভাবতে হয়। ঘরের কোণ সাজাতে কর্নার শোকেস ব্যবহার করতে পারেন। কোণের দেয়ালে কর্নার র​্যাক ঝুলিয়ে দিতে পারেন। স্নানঘরের দেয়ালেও এ ধরনের র‌্যাক ঝোলানো হয়। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত র​্যাক বা শোকেস বানাতে পারেন। বসার ঘরে ঠাঁই পাক বই, শোপিস; শোবার ঘরে বই, ফুলদানি বা ড্রেসিং টেবিলের সামগ্রী; খাবার ঘরে বাসনপত্র, শিশুর ঘরে খেলনা আর টুকিটাকি। রান্নাঘরের কোণের র​্যাকে নানা উপকরণ, স্নানঘরে প্রসাধনী আর গাছপালা।

ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত বলেন, দৈনন্দিন পরিচ্ছন্নতার সবচেয়ে জটিল কাজ হলো বিভিন্ন খাঁজকাটা নকশা আর ফাঁকফোকর পরিষ্কার রাখা। প্রতিদিন যত্ন না নিলে ময়লা স্থায়ীভাবে বসে যায়।

পরিচ্ছন্ন ঘরের কোণ অন্দরে আনে নান্দনিকতা। কৃতজ্ঞতা: সামিনা হোসেন প্রেমা
পরিচ্ছন্ন ঘরের কোণ অন্দরে আনে নান্দনিকতা। কৃতজ্ঞতা: সামিনা হোসেন প্রেমা

যত্ন নেওয়ার নিয়ম
● নকশার খাঁজ, দেয়ালসজ্জার পেছনের অংশ, জানালা-দরজার কোণ আর এগুলোর স্লাইডিং ফ্রেমের ভেতরের অংশ পরিষ্কারের সুবিধাজনক আকারের ব্রাশ ব্যবহার করুন। এরপর ব্রাশ বা পুরোনো কাপড় ভিজিয়েও এসব জায়গা পরিষ্কার করতে পারেন, তাতে ময়লা উড়ে অন্যদিকে যায় না। ধুলা-ময়লাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমে। কাঠের আসবাব ভেজালে ঘন ঘন বার্নিশ করতে হয়, তবে সুস্বাস্থ্যের জন্য এটুকু মেনেই নিন।

● পরিষ্কারের সময় বাড়ির অন্য সদস্য, বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের অন্য ঘরে রেখে যে ঘরে কাজ করছেন, সেই ঘরটা আটকে নিন। নিজে মাস্ক পরুন।

● আসবাব সরানো গেলে প্রতিদিনই সরিয়ে পেছনটা পরিষ্কার করুন।

● কোথাও চামড়া, রেক্সিন প্রভৃতি স্থায়ীভাবে আটকানো থাকলে (যেমন খাটের মাথার দিক বা সোফা), কিংবা ধুলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো কিছু থাকলে সপ্তাহে অন্তত ১ দিন ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সাহায্য নিন। নকশাদার কুশন কভার প্রয়োজনবোধে ড্রাই ওয়াশ করুন।

ঘরের কোণ সাজাতে
তাসমিয়া জান্নাত বলেন, আয়তাকার ঘর সবচেয়ে সুন্দর। আয়তাকার না হলে বিভিন্ন কোণের সৃষ্টি হতে পারে, যা সৌন্দর্য ব্যাহত করতে পারে। তবে সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করলে এই কোণই সোন্দর্যের প্রধান অংশ হতে পারে। বসার ঘরের কোণেই আনা যায় প্রকৃতিকে। কোণের মেঝে ও দেয়ালের খানিকটা অংশে কৃত্রিম ঘাস রাখতে পারেন। নানা মাপ ও ধরনের গাছ রাখতে (পাহাড়ি খাঁজের মতো ঝুলিয়েও) পারেন, যা অন্দরেই বেঁচে থাকে। কৃত্রিম ঝরনা, পাথর, পাখির বাসা, পাহাড়ি আমেজ। কিংবা রৌদ্রোজ্জ্বল গ্রাম। থিম অনুযায়ী আলোর ব্যবস্থা রাখুন, সময়ের সঙ্গে আলো বদলে যাবে—এমনও হতে পারে।

রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলসান নাসরীন চৌধুরী জানালেন, ঘরের কোণকে কাজে লাগাতে সেখানে ল্যাম্পশেড রাখা যায়। স্ট্যান্ড ল্যাম্প কিংবা ঝোলানো ল্যাম্পশেড হতে পারে, ৩টি ল্যাম্পশেড ধাপে ধাপে, ৬ ইঞ্চির তফাতে। স্ট্যান্ড ল্যাম্প হলে সাড়ে ৬ ফুট, ৬ ফুট আর সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার। ঝোলানো ল্যাম্পশেড হলে ছাদ থেকে দেড় ফুট, দুই ফুট আর আড়াই ফুট দূরত্বে। ল্যাম্পশেডের নিচে মাটির শোপিস, অন্দরের উপযোগী গাছ রাখতে পারেন।

জেনে নিন আরও উপায়
● বসার ঘরে বাঁকানো সোফা রাখলে কোণটাও কাজে লাগে। সোজা সোফা রাখলে কোণটুকুতে একটা তিন কোনা বসার জায়গা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোণের ওপরের অংশে কাচের র​্যাক করতে পারেন (অন্তত ৭ ফুট উচ্চতায়, এ উচ্চতায় রাখলে মাথায়ও লাগবে না, আবার ভেতরের জিনিসগুলো দেখাও যাবে)।

● শোবার ঘরের কোণে নিচু টেবিল, মোড়া বা রিভলভিং চেয়ার রেখে আরাম করতে পারেন। পড়ালেখার ব্যবস্থা থাকতে পারে। গাছপালা ও গান শোনার ব্যবস্থাও থাকতে পারে। কিংবা পোশাক পরিবর্তনের জায়গাও করতে পারেন।

● কোণের মাপ বুঝে শোপিস রাখতে পারেন। মাটি বা টেরাকোটার হতে পারে।

● ঝোলানো পাত্রে গাছ রাখুন।

● বারান্দার কোণে গাছ ও কৃত্রিম ঘাস রাখতে পারেন।

● ঘরের কোণ সাজাতে যা-ই রাখুন, ঘরের বাকি সবকিছুর সঙ্গে তা যেন মানানসই হয়।