নতুন ধারায় জারদৌসি আর কারচুপি

শীতে তো বটেই, বছরজুড়ে পোশাকে থাকবে জারদৌসির কাজ। মডেল: মাইশা, পোশাক: কোরাল ক্লজেট বাই রুপো শামস, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: সুমন ইউসুফ, স্থান: মারমেইড বিচ রিসোর্ট
শীতে তো বটেই, বছরজুড়ে পোশাকে থাকবে জারদৌসির কাজ। মডেল: মাইশা, পোশাক: কোরাল ক্লজেট বাই রুপো শামস, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: সুমন ইউসুফ, স্থান: মারমেইড বিচ রিসোর্ট
>পোশাকে আবারও ফিরে এসেছে জারদৌসি, কারচুপির কাজ। আশপাশের দেশের পাশাপাশি এ বছর আমাদের এখানে বিভিন্ন পোশাকে দেখা যাবে এ নকশার প্রভাব।

এই মৌসুম উৎসবের। বিয়ের অনুষ্ঠান, ঘুরে বেড়ানো বা দাওয়াত খাওয়া—নানা ধরনের আয়োজনের জন্য শীতকালের জুড়ি নেই। উৎসবমুখর এই সময়ের ছোঁয়া থাকা চাই পোশাকেও। আর তাই ঈদ, পয়লা বৈশাখ ছাড়াও বছরের এই সময়ে ডিজাইনাররা ব্যস্ত পোশাকের নকশায় নতুনত্ব আনা নিয়ে।

এবারের শীতে দেখা যাচ্ছে পোশাকে আবারও ফিরে এসেছে জারদৌসি, কারচুপির কাজ। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর পোশাকে বছর দুয়েক ধরেই জনপ্রিয় হতে দেখা গেছে এই ধারার নকশা। যার ধারাবাহিকতায় এবার আমাদের এখানেও চলবে এটা।

কামিজের সঙ্গে তিন গজের ওড়না মানাবে ভালো
কামিজের সঙ্গে তিন গজের ওড়না মানাবে ভালো

এদিকে হাতে বোনা কাপড় এবং হাতের কাজের নকশার প্রতি বাড়ছে ফ্যাশন–সচেতন মানুষের ঝোঁক। জারদৌসি-কারচুপিতে হাতের কাজের নৈপুণ্যেই সম্পূর্ণ হয় পুরো নকশার প্রক্রিয়া। আর শীতের মৌসুমে জমকালো ভারী নকশার পোশাক এনে দেয় স্বস্তি। সব মিলিয়ে জারদৌসির পোশাক এখন চলতি ধারার পন্থী।
যদিও গত দশকের প্রথম ভাগে জনপ্রিয় হয়েছিল এই জারদৌসি ও কারচুপির কাজ। ফ্যাশন যেহেতু ঘুরেফিরে আসে, তাই ২০২০–এর শুরুতেই আবারও দেখা যাচ্ছে জারদৌসির সেই ঠাটবাট। তবে পার্থক্যও চোখে পড়ে। গত দশকের শুরুতে যে জারদৌসি-কারচুপির পোশাক আমাদের এখানে পাওয়া যেত, তা তৈরি হতো ভারত-পাকিস্তানে। ‘সেই ধারা থেকে বের হয়ে একেবারে নিজস্ব ধাঁচে জারদৌসিকে উপস্থাপন করছেন দেশীয় ডিজাইনাররা’—বললেন ডিজাইনার শাহরুখ আমিন।

সিল্কে নিখুঁতভাবে ফুটে    উঠেছে জারদৌসির কাজ
সিল্কে নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে জারদৌসির কাজ

সাধারণত মোগল স্থাপত্যরীতির একটা ছাপ স্পষ্টভাবেই ফুটে ওঠে এই কাজে। মোগল আমলের মিনার, কলকি জারদৌসি কাজের মূল মোটিফ। তবে আমাদের এখানে এই মোটিফে আনা হয় নতুনত্ব। শাহরুখ আমিন বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের নকশার অনুকরণে নয়, বরং মোগল স্থাপত্যরীতির অনুপ্রেরণায় দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে যায় এমন মোটিফ ফুটে ওঠে জারদৌসির কাজে।’

কোরাল ক্লজেট বাই রুপো শামসের ডিজাইনার রুপো শামসের কাছে জানা গেল, আড়ি, রেশম, চুমকি, জরির সংমিশ্রণে জারদৌসির কাজে মোগল মোটিফ তুলে ধরা হয়। পোশাকে উৎসব এবং আভিজাত্য—এই দুইয়ের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় জারদৌসিকে। যে জন্য নকশা করার সময় এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয় মুক্তা, মিনা আর কুন্দন। নিজের সৃজনশীলতার সঙ্গে হাতের কৌশলের সমন্বয় করে একজন কারিগর সম্পন্ন করেন একেকটি জারদৌসির কাজ। তবে কারচুপির কাজটা একটু ভিন্ন। এখানে জারদৌসির চেয়ে পরিশ্রম কিছুটা কম। তবে এই দুটি নকশা যেন সহোদর। একটি ছাড়া আরেকটি নকশা সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে না বলে জানালেন শাহরুখ আমিন।

সালোয়ারের নকশায় জারদৌসি, এনেছে আভিজাত্য।
সালোয়ারের নকশায় জারদৌসি, এনেছে আভিজাত্য।

যেকোনো কাপড়েই জারদৌসি-কারচুপির কাজ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। চাই মানানসই কাপড়। ডিজাইনাররা বললেন, পিওর সিল্ক, মসলিন, জর্জেট ও ভেলভেটের কাপড়ে জারদৌসি ফুটে ওঠে পূর্ণ রূপে। পাশাপাশি ওড়না ও সালোয়ারের দিকেও দিতে হয় বিশেষ খেয়াল। কামিজের ছাঁটটা সোজা হলে এর সঙ্গে মানায় সোজা বা স্ট্রেইট কাটের একটু পা উঁচু সালোয়ার। হালকা ঢোলা কামিজের সঙ্গে ঘারারা সালোয়ারও মানাবে বেশি। এ ধরনের সালোয়ারের নিচে থাকতে পারে জারদৌসির নকশা। তবে সালোয়ার–কামিজের কাটছাঁট যেমনই হোক না কেন, ওড়নাটা একটু বড় হওয়া চাই। ডিজাইনার রুপো শামস ৩ গজ কাপড়ের ওড়না ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন। আর ওড়নার চারদিকে জরির পাড় বসিয়ে নিলে পুরো পোশাকটিই হয়ে উঠবে আভিজাত্যের প্রতীক। 

মসলিনে জারদৌসির কাজ
মসলিনে জারদৌসির কাজ