পুরুষের জন্য যোগাসন

>যোগব্যায়াম নিয়মিত করলে শরীর–মন সুস্থ থাকে। চুল ও ত্বক ভালো রাখার জন্যও যোগব্যায়ামের নির্দিষ্ট কিছু আসন রয়েছে। পুরুষদের চুল ও ত্বকের সুস্থতার জন্য সে রকম কিছু যোগাসন দেখিয়েছেন যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তনু

হলাসন (ত্বকের জন্য)

কীভাবে করবেন

● চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। শ্বাস ভেতরে টেনে ধীরে ধীরে পা ওপরের দিকে ওঠান। প্রথমে ৩০, তারপর ৬০ এবং শেষে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওপরের দিকে ওঠানোর পর পা দুটোকে মাথার পেছনের দিকে এবং পিঠকেও ওপরের দিকে তুলে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নিয়ে যান।

● পা দুটোকে মাথার পেছনের দিকে মাটিতে লাগান। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিক রাখুন। প্রথমে হাতকে সুবিধার জন্য কোমরের পেছনে লাগাতে পারেন। পূর্ণ স্থিতিতে হাত মাটির ওপরেই রাখুন। এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট থাকুন।

● ফিরে আসার সময় যে ক্রমে ওপরের দিকে গিয়েছিলেন, সেই ক্রমেই হাত দিয়ে মাটিতে চাপ দিতে দিতে পা দুটো হাঁটু থেকে সোজা রেখে মাটির সঙ্গে লাগান।

সতর্কতা

উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা এই আসন করবেন না। সার্ভাইক্যাল, স্লিপ ডিস্ক, মেরুদণ্ডের যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগে হলাসন নিষেধ। 

সর্বাঙ্গাসন (চুলের জন্য)

কীভাবে করবেন

● চিত হয়ে সোজা শুয়ে পড়ুন।

● শ্বাস টেনে পা দুটোকে ধীরে ধীরে প্রথমে ৩০ ডিগ্রি, তারপরে ৬০ ডিগ্রি এবং শেষে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওপরের দিকে ওঠান। হাতের সাহায্যে কোমর ধরুন, কনুই মাটিতে লেগে থাকবে।

● আসন থেকে নামার সময় পা দুটো পেছন দিকে ঝুঁকিয়ে ১২০ ডিগ্রি অবস্থানে আনুন, তারপর হাত সরিয়ে খুব ধীরে ধীরে কোমর মাটিতে রাখুন। এরপর ৯০, ৬০ এবং সবশেষে ৩০ ডিগ্রি অবস্থানে পা এনে আস্তে আস্তে মাটিতে নামান।

সময়কাল: ২ থেকে ৩০ মিনিট। 

সতর্কতা

ব্যাকপেইন বা কোমরের যন্ত্রণা থাকলে করবেন না। উচ্চ রক্তচাপ যা হৃদ্​রোগ থাকলে এই আসন না করাই ভালো। সর্বাঙ্গাসন চুল পড়া কমায়। থাইরয়েড গ্রন্থিকে সুস্থ করে, শুক্রগ্রন্থি ও ডিম্বগ্রন্থিকে শক্তিশালী করে। 

শীর্ষাসন (চুলের জন্য)

এই আসন সব আসনের রাজা। এটি মস্তিষ্ককে শুদ্ধ রক্তপ্রাপ্ত করে, যার ফলে চুল পরিপূর্ণ পুষ্টি পায়। এই আসন পিটুইটারি ও পিনিয়াল গ্রন্থিকে সুস্থ করে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে পারে। 

কীভাবে করবেন

● প্রথম অনুশীলন উপযুক্ত প্রশিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী করাই ভালো।

● এই আসনের জন্য কাঁধের মাংসপেশি শক্তিশালী হতে হবে।

● প্রথমে মাথার নিচে কাপড় বা তোয়ালে ভাঁজ করে গদির মতো বানিয়ে নিন। অবশ্যই দেয়ালের সহায়তা নেবেন।

● দুই হাতের আঙুলগুলো পরস্পরের মধ্যে ফাঁসিয়ে কনুই পর্যন্ত হাত মাটির ওপরে রাখুন। গদিকে হাতের মাঝখানে রাখুন।

● মাথার সামনের অংশ গদির ওপরে এবং হাঁটু মাটির ওপরে থাকবে। এবার শরীরের ভার গ্রীবা এবং কনুইয়ের ওপরে রেখে পা দুটিকে মাটির সমান্তরাল রেখায় ওপরের দিকে সোজা তুলে ধরুন।

● এবার এক হাঁটুকে মুড়ে ওপরের দিকে ওঠান, তারপরে অন্য হাঁটুকেও ওপরে তুলে মুড়ে রাখুন (ভাঁজ করে রাখুন)।

● এবার মোড়। (ভাঁজা করা) হাঁটু দুটোকে এক এক করে ওপরে ওঠানোর চেষ্টা করুন। শুরুতে তাড়াহুড়ো করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে আপনার পা সোজা হতে লাগবে। পা যখন সোজা হয়ে পড়বে, তখন দুটো পাকে পরস্পরের সঙ্গে মিলিয়ে শুরুতে একটু সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখুন। প্রথমে দেয়ালের সহায়তা নিয়ে করলেও আস্তে আস্তে দেয়াল থেকে পা সরিয়ে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করুন।

● শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিক রাখুন।

● আসন শেষ করার পর শবাসনে বিশ্রাম নিন বা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন, যাতে রক্তসঞ্চালন যেটা এতক্ষণ মস্তিষ্কের দিকে হচ্ছিল, সেটা স্বাভাবিক হয়ে পড়ে।

সময়কাল: ১৫ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৩০ মিনিট পর্যন্ত করতে পারেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত/যথেষ্ট। 

বিশেষ সতর্কতা

হৃদ্​রোগী, উচ্চ রক্তচাপ বা কোমর যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা রোগী এই আসন করবেন না। কাছের জিনিস দেখার জন্য যাঁরা চশমা ব্যবহার করেন, তাঁরাও এই আসন করবেন না। ভারী ব্যায়াম করার ঠিক পরেই শীর্ষাসন করা নিষেধ। এই আসন করার সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকা উচিত। সর্দিকাশি হলেও এই আসন করা উচিত নয়।