পাথুরে গয়নার গল্প

>
পাথুরে গয়নার ব্যবহারে সাজে চলে আসবে ভিন্নতা। মডেল: রিবা, গয়না: কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেস, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: সুমন ইউসুফ
পাথুরে গয়নার ব্যবহারে সাজে চলে আসবে ভিন্নতা। মডেল: রিবা, গয়না: কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেস, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: সুমন ইউসুফ
কাটা, পালিশ করা চকচকে গয়নার চেয়ে পাথুরে প্রাকৃতিক রূপটাই যেন বেশি খুলছে এখনকার গয়নায়। লিখেছেন ডিজাইনার লায়লা খায়ের

গয়নায় বৈচিত্র্য আনতে পাথরের ব্যবহার আজকের নয়, বহু প্রাচীন। মহামূল্যবান রত্নপাথরখচিত গয়না আগেও যেমন চলত, এখনো পাথর বসানো গয়না খুব জনপ্রিয়। চাকচিক্য আর আভিজাত্য পাথরের গয়নার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 

অমসৃণ পাথরের গয়না মানিয়ে যাবে সব পোশাকের সঙ্গে। স্থান: মারমেইড বিচ রিসোর্ট, কক্সবাজার
অমসৃণ পাথরের গয়না মানিয়ে যাবে সব পোশাকের সঙ্গে। স্থান: মারমেইড বিচ রিসোর্ট, কক্সবাজার

বর্তমানে পালিশ করা পাথরের তৈরি গয়নার পাশাপাশি আনকাট (এবড়োখেবড়ো) পাথরের গয়নার প্রচলন বেড়েছে। এগুলো রাফ স্টোন নামেও পরিচিত। রাফ স্টোন বলতে সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া পাথরকে বোঝায়। সাধারণত পালিশ বা কাটাকাটি করে নির্দিষ্ট কোনো আকারে রূপ না দিয়ে শুধু গয়নার নকশার ওপর ভিত্তি করে সেই আকারে কেটে নিয়ে সরাসরি ব্যবহার করা হয়। 

সব পাথরই প্রকৃতিতে অমসৃণ, এবড়োখেবড়ো আকারে পাওয়া যায়। অ্যাগাটে, কোর্য়াটজা, বোঞ্জসাট্রিন, ম্যালকাইট, ক্রিস্টাল (স্ফটিক) এবং অন্যান্য বিরল ও দামি পাথরও একইভাবে থাকে প্রকৃতিতে। এককথায়, পলিশিং, কাটিং, ফেসেটিং ছাড়া প্রাকৃতিক পাথরকে আনকাট বা রুক্ষ পাথর বলা হয়। 

গলার মালা ভারী হলে কানের দুল হোক হালকা
গলার মালা ভারী হলে কানের দুল হোক হালকা

অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিত গয়না এখন পোশাকের সমান জনপ্রিয়। নির্দিষ্ট পরিচিত সীমানা ছাড়িয়ে নিরীক্ষাধর্মী অলংকরণের মাধ্যমে গয়নার ব্যবহার এখন অন্য স্তরে পৌঁছে গেছে। সে ক্ষেত্রে রুক্ষ পাথরের গয়নার চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই ধরনের গয়নাগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শাড়ি হোক কিংবা পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক—সবটাতেই মানানসই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, ধাতব উপাদান ও পাথরের রং যেন সামঞ্জস্য ও ভারসাম্যপূর্ণ হয়। 

সাদা, বেইজ, কালো অথবা যেকোনো এক রঙের পোশাকে সব রঙের পাথরের গয়নাই মানিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে চলতি ধারার রঙের পাথর বেছে নেওয়াই ভালো। পোশাকের ধরনের ওপর নির্ভর করবে গয়নার আকার। বড় পাথরের গয়না নাকি ছোট আকারের পাথরের গয়না, তা বেছে নিতে হবে পোশাক বুঝে। পাথরের ভারী গয়না হালকা রঙের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ভারী গয়না বেছে নিলে কানের জন্য অবশ্যই হালকা ছোট পাথরের দুল বেছে নিতে হবে। 

গাঢ় রঙের পোশাকের সঙ্গে হালকা রঙের পাথরের গয়না মানানসই। ফ্যাশনের জন্য ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম না মেনেও আনকাট পাথরের সঙ্গে যেকোনো পোশাক মানিয়ে যায়। তবে মানুষভেদে ব্যতিক্রম হতে পারে। অর্থাৎ পোশাক ও গয়নার ভারসাম্য নির্ভর করবে পরিবেশ ও সময়ের ওপর। 

রুক্ষ পাথরের গয়নার সঙ্গে সাজটা একই রকম হলে মন্দ হয় না। সাজের সঙ্গে, চুলের সঙ্গে রাফ স্টোনের গয়না পোশাকভেদে হয়ে উঠতে পারে সুন্দর। রাফ স্টোনের গয়নার সুবিধার দিক হলো, এটা দামে সাশ্রয়ী। অর্থাৎ পলিশড ও কাটা পাথরের গয়নার দাম বেশি। রাফ স্টোনে বাড়তি খরচ যোগ হয় না।

আবার সোনার বা রুপার প্রলেপ দেওয়া (গোল্ড প্লেটেড ও সিলভার প্লেটেড) ধাতব উপাদানের ওপরই রুক্ষ পাথর বেশি ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক রাফ স্টোন হলেও ধাতব উপাদানের কারণে সাশ্রয়ী হয়। বর্তমানে হালকা পলিশড ফেসেটিং ছাড়া রাফ স্টোন দিয়ে সোনা, হোয়াইট গোল্ড, রোজ গোল্ডের গয়নাও তৈরি হচ্ছে। 

প্রাচীন যুগে যেমন লুডি পাথরের গয়নার চল ছিল, কালের বিবর্তনে ও ফ্যাশনের ধারায় পথ চলতে চলতে আনকাট ও রাফ স্টোনের তৈরি গয়না এখনো বিশেষভাবে সমাদৃত নারীর কাছে। 

পাথুরে গয়না হতে পারে নানা রঙের
পাথুরে গয়না হতে পারে নানা রঙের

পোশাকের সঙ্গে গয়নার সম্পর্ক

গয়না ছাড়া সাজ ও পোশাক অসম্পূর্ণ। দিনের বেলায় সাজ ও পোশাকের সঙ্গে যেকোনো একধরনের গয়না বেছে নেওয়া ভালো। যেমন দুল, ব্রেসলেট, আংটি ইত্যাদি। আর রাতের অনুষ্ঠানের সাজপোশাকের সঙ্গে ভারী গয়না অনায়াসেই যেতে পারে। চুলের বাঁধন, পোশাকের ধরন ও রং—অর্থাৎ শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ, গাউন, টপ, জিনস কিংবা ফতুয়ার সঙ্গে মানানসই সাজ যেমন লাগবে, তেমনই গয়নাও হতে হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

এমন গয়না মানাবে শাড়ির সঙ্গেও
এমন গয়না মানাবে শাড়ির সঙ্গেও

গলায় ভারী পাথরের গয়না এখনো বেশি জনপ্রিয়। তা সে টপের সঙ্গেই হোক বা শাড়ির সঙ্গে। স্মোকি আই, খোলা চুল আর ভারী গয়না—সাজ ও অলংকারের এক অপূর্ব সমন্বয়। 

লেখক: ডিজাইনার এবং কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেসের স্বত্বাধিকারী।