যোগব্যায়ামে সুঠাম পা

>ছেলেরা যেমন ভুঁড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে এই দুশ্চিন্তা বেশি দেখা যায় পা নিয়ে। অনেকেই পায়ের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে পা সুন্দর করতে চান। তাঁদের জন্য দারুণ সমাধান যোগব্যায়াম। যোগব্যায়ামের কয়েকটি আসন চর্চা করে সহজেই পায়ের মেদ কমিয়ে আনা যায়। এখানে তেমন কয়েকটি আসন দেখানো হলো

ত্রিবিক্রমাসন

যেভাবে করবেন
আনসটি আয়ত্ত করতে অনেক ধৈর্য ও সাধনার প্রয়োজন। তবে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সঠিক নিয়ম জানা থাকলে খুব সহজে ও অল্প সময়েই এই আসনে সফলতা সম্ভব। প্রথম অবস্থায় পা যতটা পারুন পাশের দিকে তুলে দেয়াল বা কোনো প্রতিবন্ধকে বাধান। এরপর শরীরকে পাশের দিকে ওই পায়ের দিকে ঝুঁকিয়ে মাথা পায়ের সঙ্গে না স্পর্শ হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করে যান। এরপর দেখবেন আপনি পা পাশের দিকে আরও ওপরে ওঠাতে পারছেন। এভাবে চেষ্টা করতে থাকলে খুব দ্রুতই আপনি পা শরীরের সমান্তরালে সম্পূর্ণ ওপরের দিকে ওঠাতে পারবেন। বাঁ পা ওপরে ওঠালে ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের পাতা ধরুন এবং বাঁ হাত বাঁ কাঁর্ধের সমান্তরালে সোজা টানটান করে রাখুন। এক পায়ে করার পর বিপরীত পা দিয়েও এই আসন করুন। ৩০ সেকেন্ড থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত যেতে পারেন। প্রতি পায়ে ৩-৫ বার করুন।

উপকারিতা
পায়ের সুদৃশ্য গড়নে এই আসনে জুড়ি মেলা ভার। পায়ের প্রত্যেকটা মাংসপেশি খুব শক্তিশালী ও সৃদুঢ় হয়ে ওঠে। বাতব্যাধি, মৃগী, অবসাদগ্রস্ততা, কিডনির দোষ, অতিরিক্ত কামবোধ, পায়ের বারবার ঝিঁঝিঁ ধরা প্রভৃতি সমস্যার ত্রিবিক্রমাসন খুবই উপকারী।

গড়ুরাসন

যেভাবে করবেন
পায়ের পাতা দুটো পাশাপাশি রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার হাঁটু গেঁড়ে চেয়ারে বসার মতো করে দাঁড়াতে হবে। ডান পা উঠিয়ে বাঁ পায়ে পেঁচিয়ে ধরুন, এটা করার জন্য বাঁ পায়ের ঊরুর ওপর ডান ঊরু রাখুন। এখন ডান পায়ের পাতা দিয়ে বাঁ পায়ের নিচের আগা পেঁচিয়ে ধরুন। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতকে পেঁচিয়ে নমস্কার (প্রণাম) মুদ্রায় নিয়ে আসুন। এরপর বিপরীত হাত ও পা দিয়ে একইভাবে আসনটি করুন। প্রথমে ১০ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত করতে পারেন। 

উপকারিতা
পায়ের চর্বি কমায়। পায়ের মাংসপেশি মজবুত ও সুন্দর করে। নক-নির (হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় এক হাঁটু আরেক হাঁটুর সঙ্গে বাড়ি খায়) মতো সমস্যাও সম্পূর্ণরূপে দূর করে। 

হনুমানাসন

যেভাবে করবেন
মসৃণ জায়গায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কোমরে দুই হাত রাখুন। এবার প্রথমে বাঁ পা সামনে এবং ডান পা পেছনে রেখে যতটা সম্ভব প্রসারিত করুন। এভাবে কিছুক্ষণ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। পরে পা বদল করে বিপরীত দিকেও এই আসনটি করতে হবে। খেয়াল রাখবেন, আপনার যতটুকু সহ্য ক্ষমতা পা ততটুকুই প্রসারিত করুন, অতিরিক্ত চাপ দিয়ে করতে যাবেন না। যখন আসনে থাকবেন ঊরু ও কাফ মাংসপেশি শক্ত ও সংকুচিত করে রাখবেন। ১০ সেকেন্ড পরপর আসনে থাকা অবস্থায় মাংসপেশিগুলো শিথিল করে দেবেন। নিয়মিত করলে ১-২ মাসের মধ্যেই আপনি ১ হাজার ৮০০ অর্থাৎ পূর্ণরূপে পায়ের দ্বিবিভাজন করতে পারবেন। পূর্ণ বিভাজনে হাত নমস্কার মুদ্রায় রাখুন। সময়কাল হবে ১০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ বার এই আসনটি করুন।

 উপকারিতা
পায়ের মাংসপেশিকে সুগঠিত করে। পায়ের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে গঠন সুন্দর বানায়। নিয়মিত এই আসনের অভ্যাসে শরীর অনেক হালকা হয়ে আসে এবং নতুন শক্তির স্ফুরণ ঘটে। মাসিকের সমস্যা বা জটিলতা দূর করে। ব্রণ, মেছতা, চুল ঝরে পড়া প্রভৃতি রোগেও এই আসন অনেক উপকারী।

ত্রিকোনাসন

যেভাবে করবেন
প্রথমে দুই পায়ের মধ্যে দেড় ফুটের মতো ফাঁক করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। পায়ের পাতা সামনের দিকে সোজা রাখুন এবং পায়ের পাতা পুরোপুরি ডান দিকে রাখুন। অর্থাৎ দুই পায়ের পাতার পারস্পরিক অবস্থান ৯০০। এবার শরীর ডান দিকে ঝুঁকিয়ে ডান হাতের পাতা ডান পায়ের পাতার সঙ্গে সমান্তরালে ম্যাটের ওপর রাখুন। বাঁ হাত কাঁধের সমান্তরাল ওপরের দিকে সোজা টানটান করে রাখুন। দৃষ্টি বাঁ হাতের দিকে থাকবে। খেয়াল রাখবেন পায়ের হাঁটুতে যেন কোনো ভাঁজ না পড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চলবে। এই আসন ৩০ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ২ মিনিট বা সামর্থ্য অনুযায়ী বেশিও থাকতে পারেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ বার করতে পারেন। 

উপকারিতা
পায়ের চর্বি গলাতে খুব কার্যকরী আসন। কিশোরীদের উচ্চতা বাড়াতে খুব ফলদায়ক। পা, হাঁটু ও গোড়ালির মাংসপেশিকে প্রসারিত ও শক্তিশালী করে। পিঠ ব্যথারও উপশম করে। 

লেখক: যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক