অন্দরে অরণ্য

গাছে পানি দিতে হবে নিয়মিত
গাছে পানি দিতে হবে নিয়মিত

‘ঘরের ভেতর তো একদম সবুজ বানিয়ে ফেলেছ!’—এমন এক মন্তব্য থেকেই মাথায় এল শিরোনামটা। ঘরের মধ্যে থাকা মানুষের মন যদি অরণ্যমুখী হয়, তিনি ঘরকে সবুজ করতে চাইতেই পারেন। অন্দরে চলে আসে ছোটখাটো নিজস্ব অরণ্য। তবে যত্ন–আত্তিও জানা থাকা চাই, না হলে তো অরণ্য জঙ্গলে পরিণত হতে সময় লাগবে না।

অন্দরের জন্য নির্দিষ্ট কিছু গাছই বেছে নিতে হয়। ঘরের ভেতরের গাছে (বারান্দা নয়) ২-৩ দিন পর পানি দিতে হয়, তবে এটি নির্ভর করে মাটির আর্দ্রতার ওপর। ৩-৪ দিন পরপর মাটি নিড়িয়ে দিলে গাছের গোড়ায় অক্সিজেন পৌঁছাবে, আপনিও মাটির আর্দ্রতার ধারণা পেয়ে যাবেন। তবে যেদিন মাটি নিড়িয়ে দেবেন, সেদিন পানি দেবেন না। ঘরের গাছগুলো সপ্তাহে এক দিন রোদে রাখতে চেষ্টা করুন। রোদে গাছ নিজের খাবার তৈরি করে। ঘরের কৃত্রিম আলোতে গাছের সেই চাহিদা পূরণ হয় না। ফুলগাছ ঘরে নয়, বারান্দায় রাখুন (যেখানে অন্তত একটা বেলা পর্যাপ্ত রোদ আসে)। অন্দরের জন্য বাহারি পাতার গাছ বেছে নিন (যেমন—এরিকা পাম)। রঙিন পাতাবাহারের পাতার রং অবশ্য রোদ পেলে একধরনের হয়, রোদ না পেলে সাধারণত যেকোনো একটা রং হয়ে যায়। রাজধানীর আসাদ গেটে অবস্থিত ফলবীথি হর্টিকালচার সেন্টারের উপসহকারী হর্টিকালচার কর্মকর্তা জান্নাতুল মার্জিয়া জানালেন এমন নানা তথ্য।

জেনে রাখুন

  • রাসায়নিক সারের মাত্রা ঠিক রাখা জরুরি। ১২ থেকে ১৮ ইঞ্চি মাপের টবের জন্য ১ চা-চামচ টিএসপি, ১ চা-চামচ পটাশ আর পৌনে এক চা-চামচ বোরন সার দিতে হবে।
  • গোবর পচা মাটি ব্যবহার করতে হবে।
  • শর্ষের খৈল অল্প পানিতে ভিজিয়ে ঢেকে রাখুন। ১০ দিন পর পানি মিশিয়ে পাতলা করে (লাঠিজাতীয় কিছু দিয়ে নেড়ে) গাছে দিন। তবে এতে বেশ দুর্গন্ধ হয়। সইতে পারলে তবেই ঘরের গাছে দিন। মাটিতে একটা স্তর পড়ে। ২-৩ দিন পর মাটি নিড়িয়ে মিশিয়ে দিতে হয়, তখন আর দুর্গন্ধ থাকে না। গাছে খৈল দেওয়ার আগের দিন মাটি খুঁচিয়ে নিতে হবে।
  • বাড়ির ছাদে মাটির বড় পাত্রে সবজির খোসা কুচি (পেঁয়াজ বা রসুন নয়), ব্যবহৃত চা-পাতা (দুধ-চিনি দিয়ে চা তৈরি করলে ধুয়ে নিতে হবে) গোবর সারের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন কিংবা গোবর সারের সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

গাছের আরও পুষ্টি

৩-৪ মাস পরপর গাছে সার দেওয়া ভালো। ১ বার রাসায়নিক সার, ১-২ বার শর্ষের খৈল, ১-২ বার গোবর সার কিংবা সবজি ও চা-পাতা পচিয়ে করা সার দিতে পারেন। খৈল বাদে বাকি সার দেওয়ার পরপরই মাটি খুঁচিয়ে দিয়ে হালকাভাবে পানি দিন।

আরও কিছু

  • দুই-আড়াই মাস অন্তর ভিটামিন স্প্রে করতে পারেন (নিয়ম অনুসারে)।
  • গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে এলে পাতায় ফলিয়ার স্প্রে (এক লিটার পানিতে এক গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে) করতে পারেন। বিবর্ণতা প্রতিরোধে প্রতি দুই-আড়াই মাসে একবার এই স্প্রে করা যায়। এক গ্রাম পরিমাণের সাধারণ একটা ধারণা হলো চা-চামচের উল্টো পিঠে যতটা উঠে আসে।
  • পোকামাকড় হতে পারে গাছে। মাকড় দেখতে বাদামি রঙের ছোট্ট উকুনের বাচ্চার মতো, যাদের নড়াচড়া খুব ভালোভাবে লক্ষ না করলে বোঝা যায় না। মাকড় দেখা দিলে মাকড়নাশক আর পোকা হলে কীটনাশক দিতে হবে। ছত্রাক হলে দাগ দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে ছত্রাকনাশক প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রতিরোধের জন্য প্রতি মাসে একবার (রোদে দেওয়ার আগে) ছত্রাকনাশকের সঙ্গে কীটনাশক/মাকড়নাশকের যেকোনোটি (এক এক মাসে এ দুটোর এক একটি) প্রয়োগ করুন।
  • যেকোনো রাসায়নিক প্রয়োগের আগে নিরাপত্তার নির্দেশনা জেনে নিতে হবে, পরিমাণমতো ব্যবহার করতে হবে।
  • স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে বিনা মূল্যে ১-২ দিনের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ছাদবাগানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও তা অন্দরের অরণ্য সাজাতে আপনাকে সাহায্য করবে।