বিটের রঙে রঙিন

>খোসাটা অমসৃণ। তবে ভেতরের রং-স্বাদ একেবারে আলাদা। বিটরুটের রঙে রঙিন হয়ে যায় সবকিছু। বানাতে পারেন নানা ধরনের খাবার পদ। রেসিপি দিয়েছেন ফাতিমা আজিজ

বিটরুট ডিলাইট

উপকরণ: বিটরুট ৫০০ গ্রাম, পানি ২ কাপ, চিনি পৌনে এক কাপ, বিটরুটের সেদ্ধ করা পানি আধা কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ৪ টেবিল চামচ, কমলার রস ৩ টেবিল চামচ, ঘি পরিবেশন ট্রেতে ব্রাশ করার জন্য লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, শুকনা নারকেল পাউডার পরিমাণমতো, ঘি ১ টেবিল চামচ, পেস্তাকুচি সাজাবার জন্য।

প্রণালি: বিটরুট পাতলা গোল করে কেটে নিন। প্যান গরম করে তাতে বিটরুট স্লাইস ২ কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিন। পানি কমে বিটরুট সেদ্ধ হলে নামিয়ে রাখুন। পানি ছেঁকে বিটরুট উঠিয়ে রাখুন। পানিটুকু আলাদা রাখুন। হাত ব্লেন্ডারের সাহায্যে সেদ্ধ করা বিটরুট মসৃণ করে ব্লেন্ড করে নিন। বিটরুটের পানির সঙ্গে কমলার রস মিশিয়ে তাতে কর্নফ্লাওয়ার গুলে নিন। প্যান ধুয়ে ব্লেন্ড করা বিটরুট ও চিনি মিশিয়ে নাড়ুন। কর্নফ্লাওয়ার ও বিটরুট কমলার রসের মিশ্রণে ঢেলে অনবরত নাড়ুন। ঘন হয়ে জমাট বাঁধা শুরু করলে লেবুর রস ও ঘি দিয়ে ভালো করে নেড়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। ট্রেতে ঘি ব্রাশ করে নিন। ঢেলে স্প্যাচুলা দিয়ে উপরিভাগ সমান করুন। ক্লিন পেপার দিয়ে ঢেকে ৬ ঘণ্টা রেফ্রিজারেটরে রাখুন। এবারে রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে চার পাশে ছুড়ি দিয়ে বিটরুট কর্নফ্লাওয়ারের মিশ্রণটাকে সামান্যভাবে ঘুরিয়ে নিন। চারকোনা করে কাটুন। স্প্যাচুলা দিয়ে উঠিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে চ্যাপ্টা করুন। এবারে এই ডিলাইট শুকনা নারকেল পাউডারে গড়িয়ে নিন। প্রতিটি ডিলাইটের মাঝখানে আঙুল দিয়ে গর্ত করে সেখানে পেস্তাকুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

বিটরুট কাটা মসলা কারি

উপকরণ: গরুর মাংস আধা কেজি, বিটরুট (মাঝারি আকারের) ২টি, পেঁয়াজ (মিহি স্লাইস) পৌনে এক কাপ, তেজপাতা ১টি, দারুচিনি (২ সেমি) ২টি, আদা মিহি কুচি (ঝুরি করা) আধা টেবিল চামচ, রসুনকুচি তিন সিকি চা-চামচ, গোটা শুকনা মরিচ ৩টি, টক দই ২ টেবিল চামচ, সিরকা ১ টেবিল চামচ, লবণ ১ চা-চামচ/স্বাদমতো, চিনি ১ চা-চামচ/স্বাদমতো, তেল দেড় টেবিল চামচ, তেল সিকি কাপ, লেবুর রস আধা টেবিল চামচ বা ইচ্ছেমতো।

প্রণালি: মাংস চর্বি ফেলে টুকরা করে ধুয়ে নিন। যে হাঁড়িতে তরকারি রান্না হবে, তাতে মাংস নিন। এবার বিটরুট স্লাইস, আধা কাপ পেঁয়াজ, চিনি ও সিকি কাপ তেল বাদে অন্যান্য উপকরণ একত্রে মিশিয়ে মেখে নিন। হাত ধোয়া সামান্য পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ ঢেকে রান্না করুন। বিটরুট ছিলে ধুয়ে নিন অর্ধেক করে। একেকটি ভাগকে লম্বালম্বি ৪/৫ টুকরা করে নিন। মোট ১৬ থেকে ২০টি স্লাইস হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে বিটরুট স্লাইস দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। মৃদু আঁচে ৮/১০ মিনিট রান্না করুন। মাংস সেদ্ধ না হলে বিটরুট দেওয়ার আগে ১ কাপ ফোটানো গরম পানি দিন। নেড়ে ঢেকে রান্না করুন। বিটরুট স্লাইস দেওয়ার পর অল্প আঁচে ঢেকে রান্না করুন। তরকারি মাখা মাখা হয়ে এলে পাশের চুলায় একটি প্যানে বাকি তেল গরম করে নিন। বাকি পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে চিনি দিয়ে নাড়ুন। এবারে তরকারি বাগার দিয়ে মিশিয়ে নেড়ে আঁচ কমিয়ে দিন। কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। মাংস থেকে তেল ছাড়া শুরু করলে চুলা বন্ধ করে দিন। পাঁচ মিনিট পর পরিবেশন করুন।

রোস্টেড বিটরুট অ্যাভোকাডো-অরেঞ্জ সালাদ

উপকরণ: তাজা কমলার রস ২ টেবিল চামচ, ডিজন মাস্টার্ড ১ চা-চামচ, মধু ২ টেবিল চামচ, আপেল সাইডার ভিনেগার ২ টেবিল চামচ, এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ আধা চা-চামচ/স্বাদমতো।

সালাদের জন্য উপকরণ: বিটরুট ৪টি, কমলা ২টি, মাল্টা ২টি, পাকা অ্যাভোকাডো ২টি, গোট চিজ/ফিতা চিজ এক কাপের এক-তৃতীয়াংশ, পেস্তাবাদামের কুচি এক কাপের এক-তৃতীয়াংশ, পুদিনাপাতার কুচি প্রয়োজনমতো।

প্রণালি: জলপাই তেল বাদে ড্রেসিংয়ের সমস্ত উপকরণ একত্রে ভালো করে হুইস্ক করুন। হুইস্ক করার সময় অল্প অল্প করে জলপাই তেল মিশিয়ে হুইস্ক করুন। একটি জারে ঢেলে ফ্রিজে রাখুন। বিটরুট ধুয়ে আলাদা করে ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে নিন। ২০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওভেন প্রি-হিট করুন। যে ট্রেতে বিটরুট রোস্ট করবেন, সেই ট্রেতে ১ থেকে ২ কাপ লবণ ছড়িয়ে দিন। তার ওপরে ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়ানো বিটরুটগুলো বসিয়ে ৫০ থেকে ৬০ মিনিট রোস্ট করুন। ধারালো ছুরি দিয়ে বিটরুটের মাঝখানে ছুরি দিয়ে অল্প ফাঁক করে পরীক্ষা করুন, ভেতরে সহজে কাটা যায় কি না। এবারে বিটরুট থেকে ফয়েল পেপার খুলে ঠান্ডা করে ছিলে নিয়ে স্লাইস করে নিন। ১ টেবিল চামচ সালাদ ড্রেসিং মিশিয়ে ক্লিন পোর দিয়ে ঢেকে ফ্রিজে রাখুন। কমলা ছিলে স্লাইস করে বিচিগুলো পরিষ্কার করতে হবে। অ্যাভোকাডো পাতলা করে স্লাইস করে নিন। একটি বোলে কমলা লেবু, অ্যাভোকাডো ও বিটরুট নিয়ে করুন। স্বাদমতো লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া এবং পুদিনাপাতা মিশিয়ে টস করুন। পরিবেশন পাত্রে চিজ ও পেস্তাকুচি দিয়ে সাজিয়ে সালাদ ড্রেসিংয়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন। সালাদ ড্রেসিং সালাদে মেশালে সালাদের রং পরিবর্তন হয়ে যাবে, তাই এটা সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।

বিটরুট টিকিয়া

উপকরণ: বিটরুট ৫০০ গ্রাম, সেদ্ধ করা আলু ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি (বড়) অর্ধেক, কাঁচা মরিচের কুচি ২টি, মুরগির বুকের মাংসবাটা ১ টুকরা, ধনেপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ, আদা-রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, লবণ ২ চা-চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া ২ চা-চামচ, চিনাবাদাম (অর্ধ্বচূর্ণ) আধা কাপ। সুজি/পোস্তদানা পরিমাণমতো, সয়া সস ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস দেড় টেবিল চামচ, সিজেনিং সস ১ টেবিল চামচ।

মিশ্রণের জন্য: ময়দা ১ টেবিল চামচ, পানি সিকি কাপ, লবণ ১ চিমটি, গোলমরিচের গুঁড়া সিকি চা-চামচ, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: একটি বোলে সেদ্ধ করা আলু মিহি ভর্তা করে নিন। বিটরুট ছিলে গ্রেট করে লবণ মেখে রাখুন। পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতাকুচি, অর্ধ্বচূর্ণ চিনাবাদাম, লেবুর রস, এক চিমটি লবণ মুরগির মাংস দিয়ে মেখে নিন। লবণ দিয়ে মাখা গ্রেট করা বিটরুট ভালো করে হাত দিয়ে চিপে আলুর সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবারে এই মিশ্রণ বাটা মুরগির মাংসের মিশ্রণে মিশিয়ে কয়েকটি ভাগ করুন।

ময়দা ও পানি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে এক চিমটি লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। একটি প্লেটে তিল রাখুন। বিটরুট ও মুরগির মিশ্রণ প্রতিটি ভাগ হাতের তালুতে নিয়ে গোল করে নিয়ে চ্যাপ্টা করে কাবাব তৈরি করুন। মিশ্রণে ডুবিয়ে সুজি বা তিলে গড়িয়ে নিয়ে ক্লিন পেপার দিয়ে ঢেকে রাখুন। ১ ঘণ্টা রেফ্রিজারেটরে রেখে ডুবো তেলে ভেজে তেল ছেঁকে তুলে রাখুন। ধনেপাতার চাটনি বা দইয়ের জীরের সঙ্গে পরিবেশন করুন। বার্গারের প্যাটি হিসেবেও বার্গার তৈরি করে পরিবেশন করা যেতে পারে।

গাজর বিটরুটের রস

উপকরণ: বিটরুট ১টি, গাজর ২টি, আদা ১ টুকরা, বিট লবণ ১ চা-চামচ, লেবুর রস ১টি, লবণ সিকি চা-চামচ/স্বাদমতো, সিরাপ (চিনির) ২ টেবিল চামচ, পানি ১ কাপ।

প্রণালি: লেবুর রস ও সিরাপ বাদে অন্যান্য উপকরণ একসঙ্গে মসৃণ করে ব্লেন্ড করুন। ব্লেন্ড করার মাঝখানে চিনির সিরাপ মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন। স্ট্রেইনার দিয়ে এই জুস ছেঁকে নিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে পরিবেশন করুন। সকালে নাশতার সঙ্গে এই শরবত পরিবেশন করা যেতে পারে।