পোশাক থাক নতুনের মতো

পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। মডেল: এ্যানি, ছবি: অধুনা
পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। মডেল: এ্যানি, ছবি: অধুনা

ঘরে–বাইরে কত ধরনের পোশাক গায়ে জড়াতে হয়। পরিপাটি এসব পোশাক নিত্য ব্যবহারে হয়ে যায় নোংরা। ময়লা পোশাক পরে তো আর বাইরে যাওয়া যায় না। যেকোনো ধরনের পোশাকেই ট্যাগ লাগানো থাকে। তাতে পোশাকটি পরিষ্কারের নিয়ম বলে দেওয়া থাকে। সেটি অনুসরণ করে কাপড় ধুয়ে নিলে খুব ভালো হয়। এতে পোশাক অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

একটা সময় যে সাবানে কাপড় কাচা হতো, সেই সাবান ব্যবহার করা হতো গোসলের জন্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাপড় কাচার জন্য গুঁড়া সাবান হয়েছে জনপ্রিয়। দ্রুত সময়ে অনেকগুলো কাপড় একটা নির্দিষ্ট সময় ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করে নেওয়া যায় বলে এর জনপ্রিয়তা বেশি।

যেভাবে পরিষ্কার করবেন

পোশাক নতুন হলে অন্য কাপড়ের সঙ্গে না ধুয়ে, আলাদা করে ধুয়ে নেওয়া ভালো। কারণ, সেটি থেকে রং উঠে কি না পরখ করে দেখা যায়। অন্য কাপড়ের সঙ্গে ভিজিয়ে রাখলে একটার রং অন্যটাতে লেগে যেতে পারে। সাদা কাপড় সতর্কতার সঙ্গে পরিষ্কার করতে হবে। রঙিন কাপড় থেকে এগুলো আলাদা করে ভেজাতে হবে। বেশিক্ষণ কাপড় পানিতে ভিজিয়ে না রেখে ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রাখলে কাপড়ের সুতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। জিনসের পোশাক, শার্ট, প্যান্ট ইত্যাদি ভারী কাপড় উল্টো করে পরিষ্কার করলে কাপড়ের ময়লা ভালোভাবে চলে যাবে। তবে সাদা সুতি কাপড় ছাড়া সব কাপড়ই তীব্র রোদ পায় এমন জায়গায় না দিয়ে, হালকা রোদ আর পর্যাপ্ত আলো–বাতাস আছে এমন জায়গায় শুকিয়ে নিলে রং জ্বলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে সাদা কাপড় রোদে দিলেই ঝলমলে ভাব বেশি আসে। অনেকে আবার সাদা কাপড় পরিষ্কার করার পর নীল জলে চুবিয়ে শুকাতে দেন। এতে আলাদা একটা পরিপাটি ভাব আসে। কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন নামের যে যন্ত্র আছে, সেটা অনেকের ঘরেই জায়গা করে নিয়েছে। তবে এখনো হাতে ঘষে বা ব্রাশ দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার চল বেশি। তবে কাপড় পরিষ্কার করার জন্য প্রথম যে ধাপ, ময়লা কাপড় গরম নাকি ঠান্ডা পানিতে ভেজাবেন, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকে। তা ছাড়া সাবান, ডিটারজেন্ট গুঁড়া নাকি তরল সাবান—কোনটা ব্যবহার করবেন সেই ভাবনায় বেলা যায় অনেকের।

সমাধানের খুঁটিনাটি খুঁজতেই কথা বলেছিলাম গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেসমিন মাসুমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সুতি কাপড় সাবান অথবা ডিটারজেন্ট মেশানো পানিতে ঘষে পরিষ্কার করা যাবে সহজে। খুব ভালো হয় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে। পানি হালকা গরম হলে দ্রুত ময়লা বের হয়ে যায়। কাপড় ধোয়া শেষে মেলে দেওয়ার সময় তা টান টান বা সমান করে মেলতে হবে৷ তা না হলে কাপড় কুঁচকে যেতে পারে৷’

আরও কিছু পরামর্শ

অনেক সময় ইস্তিরি করলেও সুতি কাপড়ের কুঁচকানো ভাব দূর করা যায় না৷ এ ক্ষেত্রে জেসমিন মাসুমার পরামর্শ হচ্ছে, কাপড়টা হালকা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে ইস্তিরি করলে তা আবার নতুন অবস্থায় ফিরে আসবে। অনেকেই সুতি কাপড় মাড় দিয়ে পরতে পছন্দ করেন। তবে দীর্ঘদিন পর ব্যবহার করবেন, এমন পোশাকে মাড় না দেওয়াই ভালো। তাতে কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা পোকায় কাটতে পারে। সুতি কাপড় ধোয়ার আগে পানির মধ্যে কিছুক্ষণ লবণ মিশিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিলে কাপড়ের রং নষ্ট হবার আশঙ্কা কমে যায়। উলের পোশাক ড্রাই ক্লিন করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। না হলে ঠান্ডা পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। আর শুকানোর সময় রশিতে বা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে দিলে পোশাকের শেপ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই যতটা সম্ভব পানি ঝরিয়ে, সমান্তরাল জায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে শুকিয়ে নিতে পারলে ভালো। জামদানি শাড়ি বা জামা যেটাই হোক না কেন, ঘরে না ধোয়াই ভালো৷ এর পরিবর্তে ভালো কোনো লন্ড্রিতে পরিষ্কার করে নেওয়া যেতে পারে৷ লিনেন কাপড় ধুতে পারেন ঠান্ডা পানিতে সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে। সিল্ক কাপড় অবশ্যই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অল্প ক্ষারযুক্ত ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিন৷ ময়লা তুলতে আলতো হাতে ঘষে নিতে হবে, কোনোভাবেই ব্রাশ ব্যবহার করা যাবে না৷ ধুয়ে নেওয়ার পর পানি ঝরানোর জন্য না রগড়িয়ে সিল্ক কাপড় হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা উচিত। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের বাইরে পরার পোশাক পরিষ্কারের জন্য অবশ্যই কম ক্ষারযুক্ত পাউডার বা তরল ব্যবহার করতে হবে। কারণ, কাপড় পরিষ্কারে বেশি ক্ষারযুক্ত পাউডার ব্যবহার করলে কাপড়ের রং ও সুতার ক্ষতি হয়। বাইরে পরার পোশাক ও ভারী কারুকাজ করা অলংকৃত পোশাক শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন।