ফুলে সাজি বসন্তে

ঘরে বসেই বানাতে পারেন ফুলের গয়না। কৃতজ্ঞতা: মেহনাজ আহমেদ
ঘরে বসেই বানাতে পারেন ফুলের গয়না। কৃতজ্ঞতা: মেহনাজ আহমেদ

বসন্তে ঘ্রাণেন্দ্রিয় ঠিকই খোঁজে তাজা ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। দর্শনেন্দ্রিয় ঠিকই সজীবতা খোঁজে তাজা ফুলের মধ্যে, শ্রবণেন্দ্রিয় ঠিকই শুনতে পায়, ‘আপা, লইয়া যান। সবটি দশ ট্যাহা।’ বন্ধুদের আড্ডায় মগ্ন হলেও একটা বকুল, বেলি বা শিউলি ফুলের মালায় চোখ আটকায়। ফুলেল বসন্ত। বসন্তে ফুল সঙ্গে থাকবে না, তা আবার হয় নাকি!

গয়নার দোকান গ্লুড টুগেদারের প্রতিষ্ঠাতা মেহনাজ আহমেদ বলেন, বসন্তের সাজে গাঁদা, গোলাপ আর রজনীগন্ধার প্রচলন আগে বেশি ছিল। আজকাল ছোট-বড় অনেক রঙের ফুল দিয়ে সাজার সুযোগ রয়েছে। এমনকি তাজা সাদা ফুলে পছন্দমতো রঙের স্প্রে করে নেওয়ারও ব্যবস্থা আছে। গয়নার রঙেও এসেছে পরিবর্তন। আগে সোনালি বা রুপালি রঙের গয়নাই বেশি দেখা যেত। এখন বাহারি ধাতব রং এসেছে গয়নায়।

হাতজুড়ে ফাল্গুন

হাতে চূড় বা কাচের চুড়ি থাকতে পারে। সঙ্গে পেঁচিয়ে নিতে পারেন তাজা ফুল দিয়ে তৈরি মালা। হাতের গয়নায় জারবারা আটকে নিতে পারেন, কিংবা অন্য ফুল। আংটিতেও মানানসই ফুল জুড়ে নিতে পারেন।

ফুলের মালা গলায় দিয়ে

গলার মালায় ছোট আর বড় ফুল সমন্বয় করে আটকে নিতে পারেন। মালা খুব ভারী হলে তাতে আর ফুল না-ও আটকাতে পারেন। অন্যান্য সাজে ফুল যোগ করে নিন এ ক্ষেত্রে। এ ছাড়া হালকা ধরনের মালা গলায় পরলে তাজা ফুলের মালাও সঙ্গে থাকতে পারে। আলাদা স্তরে থাকল তাজা ফুল আর অন্য গয়না।

মাথায় ফুলের মুকুট কিংবা ফুলে সাজাই চুল

বসন্ত উৎসবে টায়রা বা টিকলি তেমন পরা হয় না। বরং ফুলের তৈরি গোল হেডপিস উল্লেখযোগ্যভাবে চোখে পড়ে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই চলে এই ফুলের হেডপিস বেচাকেনা। চাইলে নিজেও বানিয়ে নিতে পারেন। হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে রাবার বা প্লাস্টিকের চ্যাপ্টা, মজবুত ব্যান্ড কিনে নিয়ে বসিয়ে নিন পছন্দমতো ফুল, বেতের চিকন ফ্রেম দিয়েও করা যায়। স্ট্যাপলার বা হট গ্লু গান দিয়ে গোলাকার আকৃতিটা পোক্তভাবে আটকে নিন। হেডপিসের মাঝখানটায় বা এক পাশে বড় একটা জারবেরা থাকতে পারে। চাইলে খোঁপার চারপাশে ফুল দিয়ে এরপর কাঁটা পরতে পারেন। কিংবা কাঁটাটিতেই ফুল বসিয়ে নিতে পারেন।

গয়না বানাই, গয়না সাজাই

সুই-সুতা দিয়ে মালা বানানো তো যেতেই পারে, একই পদ্ধতিতে ফুল আটকানো যায় গয়নাতে। তবে তাতে কোমল ফুলের পাপড়িতে চাপ পড়ে খুব। সুতা ব্যবহার করতে হলে ফুলের সঙ্গে মানানসই রঙের সুতা বেছে নিতে হবে। তবে সুতার চেয়ে হট গ্লু গান ব্যবহার করা ভালো। এটির ব্যবহার খুব সহজ। দ্রুত এঁটে যায়, মজবুতভাবে আটকেও থাকে। হট গ্লু গানের সাহায্যে ফুল আটকানো হলে ব্যবহারের পর তা সহজে খুলে ফেলা যায়, পরে ওই গয়না আবার ব্যবহার করা যায়।

ধাতব গয়না কিংবা কাঠ, মাটি, পুঁতি ও যেকোনো শক্ত উপকরণের গয়নায় হট গ্লু গানের সাহায্যে ফুল আটকে নিতে পারেন। তারের মতো চিকন গয়নায় ফুল আটকালে ফুলগুলো ভালোভাবে দেখা যায়। কানের দুলে ছোট ফুল আটকানো যায়, আবার গুনা তার দিয়ে কানের দুল তৈরিও করতে পারেন ফুল আটকানোর জন্য। কানের দুলের লুপ কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন মোটিফে কাটা কাঠের টুকরা (লেজার কাট করা) হট গ্লু দিয়ে আটকে ইচ্ছেমতো গয়না তৈরি করতে পারেন, সেখানেও যোগ করতে পারেন ফুল।

শক্ত আর্ট পেপার ইংরেজি ‘ইউ’ আকৃতি করে কেটে তাতে এমনভাবে ফুল বসিয়ে নিন, যাতে কাগজ দেখা না যায়। পেছনে হট গ্লু দিয়ে ফিতা আটকে নিন। হাতের ব্রেসলেট বা মালার আকার তৈরি করা যাবে এভাবে। ফিতাটা বো করে নিন।

গাঁদা, গোলাপ আর রজনীগন্ধা আজও নিজেদের গুণে অতুলনীয়। তবে স্থানীয়ভাবে পমপম, স্টার, মাম আর জিপসি বলে ডাকা হয় যে ফুলগুলোকে, সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন গয়নায়। ঐতিহ্যবাহী ফুলের সঙ্গে সমন্বয়ও করতে পারেন এগুলোকে। মাম ফুল বলে যেটিকে আমরা চিনি, সেটি সাদা বলে অন্য রং করার সুযোগও থাকে। বসন্ত মানে তো আর কেবল বাসন্তী- হলুদ পোশাকই নয়, অন্যান্য রংও পরা হয়। তাই মনের খুশিমতো বেছে নিন রং আর ফুল।