সাদা-কালোয় আভিজাত্য

>
পোশাকে সাদা-কালোর অভিজাত নকশা। মডেল: ইশা, পোশাক: হুমায়রা খান, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: কবির হোসেন
পোশাকে সাদা-কালোর অভিজাত নকশা। মডেল: ইশা, পোশাক: হুমায়রা খান, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: কবির হোসেন
সাদা ও কালো। বিপরীত দুই রং যখন পাশাপাশি আসে, তখন তৈরি হয়ে যায় নতুন অর্থ। পোশাকে ও ফ্যাশনে চলে আসে আধুনিকতা আর আভিজাত্যের ভাব। লিখেছেন রয়া মুনতাসীর
সাদা–কালো ডোরাকাটা নকশা জনপ্রিয়
সাদা–কালো ডোরাকাটা নকশা জনপ্রিয়

নিষ্পাপ, সরল, বিশ্বাসযোগ্য—সাদা রঙের ভান্ডার ভরা ইতিবাচক অনুভূতি। অন্ধকার, শক্তি, ভয়, রহস্য, আনুষ্ঠানিক, প্রতিপত্তি, ভারী—নেতিবাচক শব্দই যেন বয়ে চলেছে কালো রং। মজার বিষয় হচ্ছে, এ দুটি রং যখন পাশাপাশি চলে আসে তখন এদের বৈপরিত্যেই যেন তৈরি হয়ে যায় নতুন অর্থ—পোশাকে, ফ্যাশনে চলে আসে আধুনিক ও অভিজাত ভাব।

শাড়িতে সাদা–কালো রঙের ভাষা। শাড়ি: বিবিয়ানা
শাড়িতে সাদা–কালো রঙের ভাষা। শাড়ি: বিবিয়ানা

প্যানটোন (আন্তর্জাতিকভাবে বছরের রং নির্বাচন করার প্রতিষ্ঠান) প্রতিবছর রং বেছে দেয়, বিশেষ করে ফ্যাশনের জন্য। ২০২০ সালে যেমন দেখা যাবে নীল রঙের আধিক্য। তবে এর মধ্যেও থাকবে সাদা-কালোর জয়জয়কার। এই দুটি রং থেমে থাকবার নয়। নিরন্তর, অভিজাত, আধুনিক, সময়োপযোগী দেখেই সাদা-কালো রং মানেই যেন চিরায়ত আবহ (ক্ল্যাসিক্যাল থিম)। প্রতিবছর এ দুটি রং থাকবেই ডিজাইনারদের পছন্দের তালিকায়। বিখ্যাত ডিজাইনার কোকো চ্যানেল বলেছিলেন, কালো রঙের ভেতরে সবকিছু আছে—সাদার ভেতরেও। তাদের সৌন্দর্য অদ্বিতীয়। এ দুটি রঙের মাধ্যমে চলে আসে নির্ভুল সমন্বয়। সাদা–কালো রংকে আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে দেখতেন ডিজাইনার কার্ল লেগারফেল্ডও।

সাদা–কালো যেন অদ্বিতীয়
সাদা–কালো যেন অদ্বিতীয়

সব রঙের মিশ্রণ হলো কালো। সাদা আবার বে রং, এর মধ্যে কোনো রং নেই। যাঁরা ফ্যাশনসচেতন ও ফ্যাশন তৈরি করেন, কমবেশি সবাই এ দুটি রঙের ভক্ত। এই দুটি রং একসঙ্গে ভালো কাজ করার পেছনে কারণ হচ্ছে একটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী। আরেকটি ছড়িয়ে দেয় শান্তির পরশ। পোশাকের নকশায় ভারসাম্য নিয়ে আসে সহজেই। সঙ্গে থাকে পরিষ্কার, মুচমুচে এক অনুভূতি। তবে এ দুটি রঙের পোশাক পরতে দরকার হয় সাহস। ডিজাইনার বিপ্লব সাহা এমনটাই মনে করেন। খুবই সাধারণ, কিন্তু খুবই কঠিন দুটি রং। যিনি পরবেন, তাঁকেও সেটা ধারণ করত হবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। 

বিপ্লব সাহা বলেন, ‘এ দুটি রং যখন কাছাকাছি থাকে, তখন পোশাকে বেশি কাজ করার দরকার হয় না। দুটি রং এমনিতেই আলাদা মেজাজ তৈরি করে রাখে। কালোর ভারী ভাবকে কমানোর জন্য সাদা রঙের হালকা ও চিকন নকশার কাজ করে থাকি’। এ দুটি রং সবার কাছে এক অর্থ বহন করে না। কোনো কোনো দেশে কালো হচ্ছে অভিজাত ও আনুষ্ঠানিক রং। কোথাও এটা আবার অশুভ, শোক, মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত। কোথাও এই রং প্রকাশ করে পুরুষালি ভাব, পরিপক্বতা ও বয়স। পাশ্চাত্যে সাদা রঙের পোশাক হলো বধূ সাজের প্রতীক। অনেক দেশে এটাই আবার শোক প্রকাশের রং।

দুটি রঙের ভাবনাও যেন আলাদা।  শাড়ি: মানাস
দুটি রঙের ভাবনাও যেন আলাদা। শাড়ি: মানাস

ফ্যাশন হাউস মানাসের ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ সাদা-কালোকে রং হিসেবেই মনে করেন না। এ কারণে এ দুটি রং নিয়েই তার বেশি কাজ করা হয়। তিনি মনে করেন, নানা রঙের ভিড়ে সবচেয়ে সরল হলো সাদা–কালো। স্টাইলের দিন-রাতও বুঝিয়ে দেয় নির্ভুলভাবে। সাদা বেশি জায়গা দখল করে আছে—এমন পোশাক মানানসই রাতের জন্য। ঠিক উল্টোভাবে কালোর বেশি—এমন পোশাক পরা উচিত সূর্য ডোবার পর। একইভাবে কালো শীতের আর সাদা গরমের রং। কিন্তু মার্কিন শিল্পী, এবং ম্যানসেল কালার সিস্টেমের উদ্ভাবক আলবার্ট হেনরি মানসেলের তত্ত্ব অনুযায়ী, কালো সবচেয়ে আরামের রং, ঠান্ডা রং। কারণ, এটি সূর্য থেকে অনেক দূরে। সূর্যের কাছাকাছি যা থাকে, সেটি ঝলসে সাদা হয়ে যায়। এ কারণে সাদা আসলে গরম রং। সাদা ও কালো হলো সবচেয়ে শেষের ও সবচেয়ে কাছের দুটি রং। তার মানে মাঝের রংগুলো নিয়েই যত ঝামেলা।

ফায়জা আহমেদ মনে করেন, সাদা-কালো রঙে কোনো জটিলতা না থাকার কারণেই সময়ের সঙ্গে কখনো হারিয়ে যায়নি। পরিবর্তনও হয়নি। দুটি রঙের বোধ আলাদা। কালো যেমন ভারী, সাদা রংটাকে আবার মনে হয় স্বচ্ছ।

রঙের সঙ্গে চাই মানানসই গয়না।  শাড়ি: বিশ্ব রঙ
রঙের সঙ্গে চাই মানানসই গয়না। শাড়ি: বিশ্ব রঙ

পোলকা, ডোরাকাটা সাদা-কালোর জনপ্রিয় নকশা। নমনীয়তা, সাহসী মনোভাব—দুটিই বোঝানো যায় এর মাধ্যমে। টাইপোগ্রাফি বা অক্ষরও নিয়ে আসা হচ্ছে এ দুটি রঙের ওপর। তবে ক্ল্যাসিক দেখেই যে এ দুটি রঙের পোশাক সব সময় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য, এমনটি নয় একেবারেই। অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানেও মানাবে। খেয়াল রাখুন গয়নায় দিকে—রুপা, ব্রোঞ্জ কিংবা কাপড়ের তৈরি রঙিন গয়না বেছে নিতে পারেন।