ফেসবুকের কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক

উৎপত্তি চীনে হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনে ভাইরাসটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে এবং চীনের বাইরেও একজনের মৃত্যুসংবাদ আমরা পেয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে রয়েছে তীব্র শঙ্কা। সেটা বিশ্বের সব প্রান্তেই। আর এই সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে দুর্বৃত্তরা। করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতেই একদিকে হিমশিম খাওয়ার জোগাড়, তার সঙ্গে জুটেছে ভুল তথ্যের প্রসার।

আর শুধু করোনাভাইরাস কেন, মাঝেই মাঝেই কিছু বিষয় নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বুঝতে পারেন না মূল ঘটনা কোনটা, আর কোনটা গুজব। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিব্রত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। কারণ, ফেসবুকেই সব সময় বেশি গুজব ছড়াতে আমরা দেখেছি। আর তাই এ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। পাশাপাশি নিউজফিডে ভুয়া সংবাদ চিহ্নিত করার গোটা কয়েক টিপসও দিয়েছে।

শুরুতেই শিরোনাম যাচাই করুন

শিরোনাম নিয়ে সন্দেহপ্রবণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ফেসবুক। ভুয়া সংবাদের শিরোনাম সচরাচর রগরগে হয়। ইংরেজিতে হলে বড় হাতের অক্ষর এবং বিস্ময় চিহ্নের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। তা ছাড়া শিরোনামে অবিশ্বাস্য কোনো দাবি করা হলো—কিন্তু সেটা বিশ্বাস করার মতো নয়।

ওয়েব ঠিকানায় গোলমাল নেই তো?

ফেসবুকে শেয়ার করা কোনো খবর নিয়ে সন্দেহ হলে ওয়েব ঠিকানা (লিংক) ভালো করে দেখুন। জনপ্রিয় কোনো ওয়েবসাইটের ঠিকানার মতো দেখতে মেকি কোনো লিংক পেলে ধরে নেবেন, সেটা ভুয়া সংবাদ। কৃত্রিম ওয়েবসাইটগুলো নিজেদের অকৃত্রিম হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে। প্রথম আলোর ওয়েব ঠিকানা সামান্য পরিবর্তন করেও এমন চেষ্টা আমরা আগে দেখেছি।

প্রতিবেদনের তথ্যসূত্র দেখুন

সংবাদের তথ্যসূত্র যাচাই করুন। প্রতিবেদনটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের কি না, নিশ্চিত হোন। সংবাদমাধ্যমটির সুনাম নিয়েও মনে প্রশ্ন রাখুন। তথ্যসূত্র অচেনা হলে তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন, ‘অ্যাবাউট’ পাতা দেখুন। ভুয়া সংবাদে উপযুক্ত প্রমাণের ঘাটতি কিংবা এমন বিশেষজ্ঞের উক্তি দেওয়া হয়, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সর্বোপরি, সন্দেহ হলে এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

ভুলে ভরা ওয়েবসাইটেই ভুল তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে আলাদা বিভাগে অনেক মানুষ কাজ করেন। আর ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরির পেছনে থাকে অল্পসংখ্যক দুর্বৃত্ত। তাদের লেখাগুলোর বানান ভুলে ভরা থাকে। ঘটনার তারিখ নিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলে। ওয়েবসাইটের নকশাও হয় অদ্ভুত। লক্ষণগুলো পেলে সতর্ক থাকুন।

ছবিও পরীক্ষা করুন

ভুয়া সংবাদের সঙ্গে ভুয়া ছবি বা ভিডিও জুড়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে। অনেক সময় ছবি আসল হলেও অন্য কোনো ঘটনার ছবি বর্তমান ইস্যুর বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। সন্দেহ হলে গুগলের ইমেজ সার্চে গিয়ে ছবিটি আপলোড করে তার উৎস খুঁজে দেখুন।

একাধিক সংবাদমাধ্যমে দেখুন

ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ হলে সাধারণত একাধিক সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখানো হয়। কোনো সংবাদ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে নির্ভরযোগ্য অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ঘেঁটে দেখুন ওই বিষয়ে সংবাদ পেশ করা হয়েছে কি না।

মজা করে লেখা নয় তো?

অনেক সময় গুরুতর ঘটনা নিয়ে কৌতুক করা হয় বা ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফেসবুকে এমন অনেক পেজ আছে। স্যাটায়ার ঘরানার অনেক ওয়েবসাইটও আছে। লেখা পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন, তা মজা করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে কি না। কিংবা দেখুন ওয়েবসাইট বা পেজটির অন্যান্য লেখা স্যাটায়ারধর্মী কি না।

আগেই বলেছি, অসৎ উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। সেই তথ্য পুনরায় শেয়ার করা মানে দুর্বৃত্তদের সাহায্য করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন। কোনো তথ্য সম্পর্কে নিজে নিশ্চিত না হয়ে তা শেয়ার করবেন না।

সূত্র: ফেসবুক হেল্প সেন্টার